কৃষকের অর্থায়নে আসছে নতুন দুই প্রকল্প
প্রকাশিত : ০৫:৩২ পিএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার
দেশের প্রান্তিক কৃষকের অর্থনৈতিক ভীত শক্তিশালী করতে নতুন করে আসছে আরো দুটি ঋণ বিতরণ প্রকল্প। নতুন এ অর্থবছরে প্রকল্প দুটির আওতায় বাড়ানো হবে কৃষকের মাঝে বিতরণকৃত ঋণের পরিধি। উদ্যোক্তা পর্যায়ের সমন্বিত কৃষি ও ভাসমান পদ্ধতির কৃষিতে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন কর্মসূচি আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রকল্প দুটি আগামী কৃষিঋণ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু থেকেই এ কর্মসূচি ও নীতিমালা কার্যকর হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েকটি খাতে কৃষি ঋণ বিতরণ করে আসছে। এবার কৃষি ঋণের আওতা বাড়াতে সমন্বিত কৃষি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় কৃষি ঋণ ও ভাসমান পদ্ধতির চাষে কৃষি ঋণ নামের আরও দুটি খাত বাড়াতে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর এখন পর্যন্ত কৃষি ঋণ বিতরণের খাতগুলো হলো শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন, শস্য গুদাম ও বাজারজাতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বিত কৃষির জন্য সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণের সুপারিশ করবে ওই নীতিমালায়। কৃষি ঋণের দুটি নতুন প্রকল্পের নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করেছেন কৃষিবিদ নুরুন্নাহার ও মনজুর হোসেন।
তাদের মতে, সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য বাছাইকৃত কম্পোনেন্টগুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণে অসুবিধা দেখা দেবে। সে ক্ষেত্রে এ দুই কৃষিবিদের অভিমত, সুপারিশকৃত কম্পোনেন্টগুলোর মধ্যে তিন থেকে পাঁচটি কম্পোনেন্টের সমন্বয়ে ছোট থেকে মাঝারি আকারের সমন্বিত ফার্মিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় এবং এ ধরনের প্রকল্প ১৫ লাখ টাকার মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
সুপারিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ছোট আকারের একটি সমন্বিত ফার্মিংয়ে চারটি গরু মোটা তাজাকরণের সঙ্গে এদের গোবর দিয়ে জৈব সার উৎপাদন এবং উৎপাদিত জৈব সার দিয়ে চার বিঘা জমিতে গাজর চাষের মাধ্যমে সমন্বিত প্রকল্প গড়ে তোলা যেতে পারে। আর এ ধরনের প্রকল্পে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে কৃষিবিদ নুরুন্নাহার।
কৃষিবিদ মনজুর হোসেন তার পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছেন, মাঝারি আকারের সমন্বিত ফার্মিংয়ের জন্য যেমন: পাঁচ থেকে ১০টি গরু অথবা মহিষ পালনের সঙ্গে এদের গোবর দিয়ে জৈব সার অথবা বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যায়। উৎপাদিত জৈব সার দিয়ে তিন থেকে ছয় একর জমিতে সবজি চাষ অথবা পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি সমন্বিতভাবে পোল্ট্রি খামার ও হাস-মুরগী পালনের মাধ্যমে সমন্বিত প্রকল্প গড়ে তোলা যেতে পারে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ওই নীতিমালার পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে বৃহৎ আকারের একটি সমন্বিত ফার্মিং যেমন পাঁচ বিঘা জমিতে পুকুর খনন, মাছ চাষ, মুরগি পালন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, জৈবসার উৎপাদন ও ফলমূল চাষের জন্য ৩১ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যদিকে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ অন্তর্ভুক্তির নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের নিচু অঞ্চলগুলোতে বন্যা ও জোয়ারভাটার কারণে জমি সারাবছর জলাবদ্ধ থাকে। এই জলাবদ্ধ এলাকায় ভাসমান কচুরিপানা থাকে সারা বছরই। এখানে কৃষক ভাসমান বীজতলা তৈরি করে সবজি ও ফসল চাষ করতে পারেন। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলকে ভাসমান পদ্ধতির কৃষিঋণের জন্য বিবেচ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। এই জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ। এছাড়া দেশের বন্যাপ্রবণ, খরাপ্রবণ, লবণাক্ত ও উপকূলীয় অঞ্চলসহ হাওর অঞ্চলগুলোকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরকে// এসএইচ/