বাজেটে চমক আসছে করপোরেট করে
প্রকাশিত : ০৬:০৩ পিএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার
আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর হ্রাস করে ব্যাংকিং খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংকিং খাতের দূরবস্থা দূরিকরণে এর আগের নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নগদ জমার হার (সিআরআর) হ্রাস, বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানত জমার সীমা বৃদ্ধি, রেপোর সুদ হার হ্রাস করা হলেও টাকার সংকটে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারছে না। উল্টো পুরনো ঋণের সুদ হার বাড়িয়ে উদ্যোক্তাদের চিঠি দিচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বেসরকারি বিনিয়োগে। এ প্রেক্ষাপটে একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং খাতকে চাঙ্গা করতে করপোরেট কর হ্রাস করাকে শেষ চিকিৎসা মনে করছে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী বাজেটে শুধু ব্যাংকিং খাতের করপোরেট কর হ্রাস করা হবে।
বিদ্যমান কর কাঠামো অনুযায়ী, করপোরেট করের ৮টি স্তর আছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে ৩৫ শতাংশ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংককে ৪০ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত ব্যাংককে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংককে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ, তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ এবং লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। এর বাইরে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানকে ১০ ও ১২ শতাংশ এবং সমবায় প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। দেশে সব মিলে ৫৭টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের করপোরেট কর হার ৪০ শতাংশ, যা ৩ অর্থবছর ধরে বহাল আছে। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংকের করপোরেট কর ছিল ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ২০১৩ সালে সরকার অনুমোদিত ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মতো ৪০ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে থাকে। অন্যদিকে তালিকাবহির্ভূত ব্যাংকের কর হার ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা ৬ বছর যাবৎ বহাল আছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে করপোরেট কর হ্রাসের পরিকল্পনা থাকলেও রাজস্ব আয়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রার কথা বিবেচনায় নিয়ে তা থেকে সরে আসে সরকার। উৎসে কর থেকে আয়কর সিংহভাগ আদায় হয়। এরপরই রয়েছে করপোরেট কর। আয়কর খাতে ব্যক্তি শ্রেণির দেওয়া করের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। এ অবস্থায় ঢালাওভাবে করপোরেট কর হার হ্রাস করলে আয়কর আদায় কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়বে- এ বিবেচনায় শুধু ব্যাংকিং খাতের করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকার মনে করে, দেশে করপোরেট কর হার বেশি বলে ব্যবসায়ীরা যে কথা বলছেন তা পুরোপুরি যৌক্তিক নয়। কারণ বৈশ্বিক করের গড়হার ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ- যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অনেক আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক গড় কর হারের তুলনায় দেশের কর হার কম।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় করপোরেট কর আদায়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে। ভারতে যেখানে করপোরেট ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া থাইল্যান্ডে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আরকে// এসএইচ/