ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বাজেট প্রতিক্রিয়া

‘৩৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হলে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে’

ড. মোঃ সেলিম উদ্দিন

প্রকাশিত : ০৯:৪৫ পিএম, ৭ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৫৪ পিএম, ৭ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার

কোন ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ নতুন করারোপ ছাড়াই নির্বাচনমূখী এই বিশাল, বৃহৎ, এবং উচ্চ বিলাসী বাজেট যদি আগামী ছয় মাসে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়ের কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ সঠিক অর্থে ও মান সর্ম্মতভাবে বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি, অবকাঠামো ঘাটতি  হ্রাস এবং দারিদ্রবান্ধব, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিধানমূলক ব্যয় ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট  সার্বিক জনকল্যাণে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শক্তিশালী ভূমিকা  রাখবে।

মোদ্দকথা, প্রস্তাবিত বাজেটের সাফল্য অনেকাংশ  নির্ভর করবে সারা বৎসরের আর্থিক কর্মকাণ্ডগুলো মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিকের ভিত্তিতে  আনুপাতিক হারে গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যের আলোকে মানসম্মত বাজেট বাস্তবায়নের উপর। কেননা বিগত বৎসর সমূহে বাজেট অবাস্তবায়নের হার প্রায় ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ শতাংশ পৌঁছেছে।  

বিগত দুই বৎসর এবং চলতি বৎসরে জিডিপি যথাক্রমে ৭.১১, ৭.২৪ এবং ৭.৬৫ অর্জন  এবং সামাষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার আলোকে ২০১৮-১৯ অর্থ-বৎসরে প্রবৃদ্ধি ৭.৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বাজেট ২০১৮-১৯ এ মোট ব্যয় প্রাক্কলন হয়েছে ৪,৬৪,৫৭৩ কোটি টাকা যেটি সংশোধিত ২০১৭-১৮ থেকে ৯৩,০৭৮ কোটি টাকা  বা ২৫ শতাংশ বেশী। একইভাবে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩,৩৯,২৮০ কোটি টাকা যেটি সংশোধিত ২০১৭-১৮ অর্থসাল থেকে  ৭৯,৮২৬  কোটি টাকা বা ৩১ শতাংশ বেশী। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে কর রাজস্ব বিগত সংশোধিত বাজেট ২০১৭-১৮ এর ২,২৫,০০০ কোটি টাকা থেকে ৭১,২০১ কোটি টাকা বা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২০১৮-১৯ এ প্রাক্কলন করা হয়েছে ২,৯৬,২০১ কোটি টাকা। এডিপিও একইভাবে ২৪,৬১৯ কোটি টাকা বা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে সংশোধিত বাজেট ২০১৭-১৮ এর ১,৪৮,৩৮১ কোটি টাকা থেকে ২০১৮-১৯ এ ১,৭৩,০০০ কোটি টাকায় স্থির করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি  প্রাক্কলন করা হয়েছে ১,২৫,২৯৩ কোটি টাকা যার মধ্যে ৫৪,০৬৭ কোটি টাকা বা ৪৩ শতাংশ বৈদেশিক উৎস এবং ৭১,২২৬ কোটি টাকা বা  ৫৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত ২০১৭-১৮ অর্থ বৎসরে বাজেট  ঘাটতি ১,১২,০৪১ কোটি টাকায় নির্ধারিত করা হয়েছে। টাকা পরিমানের  ভিত্তিতে  প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধির পরিমাণ ১৩,২৫২ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ বেশী।  বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যয়ের প্রবৃদ্ধির চেয়ে রাজস্ব  আয়ের প্রবৃদ্ধির শতাংশ অনেক বেশি যেটি কাম্য নয়। এছাড়া বিগত কয়েক বৎসরের বাজেট  ও প্রকৃত অর্জন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রাক্কলিত  রাজস্ব আহরণে এবং প্রস্তাবিত  ঘাটতি অর্থায়নের ব্যর্থতার কারণে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন  হয়নি। উদাহরন স্বরুপ বিগত ২০১৫-১৬ অর্থ বৎসরে মোট ব্যয় ৫৬,৬৫৭ কোটি  টাকা বা  বাজেটের ১৯ শতাংশ বাস্তবায়িত  হয়নি। যেখানে ৩৫,৪৯০ কোটি টাকা বা ১৭ শতাংশ রাজস্ব  আহরণে এবং ২১,১৭৭ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশ ঘাটতি অর্থায়ন করতে সমর্থ হয়নি। উল্লেখ্য যে, ২১,১৭৭ কোটি টাকার ঘাটতি  অর্থায়নের  মধ্যে ১৫,৩৭৯ কোটি টাকা বা ৫১ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নে র্ব্যথ হয়। এই জন্য রাজস্ব আহরনে এবং ঘাটতি অর্থায়নে  বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নে  সাফল্য দেখাতে  না  পারলে প্রস্তাবিত বাজেট পুরাপুরি বাস্তবায়ন কঠিন হবে। নির্বাচনী বৎসর হওয়ায় এই সমস্যা আরো ঘনীভূত  হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  তাই প্রস্তাবিত  বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কলাকৌশলসহ  প্রশাসনিক ব্যবস্থা অতীতের  যে কোন  সময় থেকে বেশি নিতে হবে। ড. সেলিম আরো ও  বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণ মূলক বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিধানমূলক কর্মসূচী এবং কর সহনীয়করন সহ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী মেঘা প্রকল্প সমূহ এবং স্থবির বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানা কলাকৌশল অগ্রাধিকার পেয়েছে। নির্বাচনী বৎসরে বড় আকারের বাজেটের স্বপক্ষে ড.সেলিম উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের অপার উন্নয়ন সম্ভাবনা, জনগণের প্রত্যাশা, ভোগ ও চাহিদার ক্রমোন্নতি, বর্তমান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বলা যায় যে, আকার রক্ষণশীল না হওয়াই ভাল। বড় আকারের বাজেটে অনেকে মনে করেন যে, অর্থের অপচয় ও অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি বলব অর্থ বরাদ্দে উদারতা থাকা ভাল এবং অনেক সময় সফলতা আসে তবে অর্থ ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্ক থাকা এবং অর্থ অপব্যবহার বা অপচয় রোধকল্পে সচেতনতা-সহ কঠোরতা অবলম্বন করলে নির্বাচন বৎসরের এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে জুলাই ২০১৮ থেকে এর বাস্তবায়নে  সকল পক্ষকে আগ্রহ সহকারে অংশ গ্রহন করতে হবে। বাজেটের  বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাস্তবায়নে বাজেট বক্তৃতায় সুনির্দিষ্ট অনেকগুলো প্রস্তাবনা এসেছে। প্রস্তাবনাগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে এই বিশাল আকারের বাজেট বাস্তবে প্রতিফলিত করা সম্ভব। প্রস্তাবনার মধ্যে দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রদের যাতায়াতের  বিশেষসুবিধা, সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনায় বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা ও নারী উন্নয়নে বরাদ্দ, পল্লী উন্নয়নে বরাদ্দ, সহনীয়  বিনিয়োগ উৎসাহ সহ ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে চলমান নীতি ও জোরদারকরণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতা স্বীকার এবং ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ, কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প, অবকাঠামো নির্মাণে অনমনীয় এবং সোচ্চার ইত্যাদি বিষয়গুলো বাজেটের বলিষ্ঠ দিক। উল্লেখ্য যে, মোট ব্যয় ৪,৬৪,৫৭৩ কোটি টাকার মধ্যে সামাজিক অবকাঠামো খাতে ১,২৭,০১৯ কোটি টাকা (২৭.৩৪ শতাংশ), ভৌত অবকাঠামোতে ১,৪৩,৯৮২ কোটি টাকা (৩১ শতাংশ), সাধারণ সেবা ১,১৭,৫৪২ (২৫.৩০ শতাংশ) কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধ খাতে ৫১,৩৪০ কোটি টাকা (১১.০৫ শতাংশ) বরাদ্দ হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যেটি মানব সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ-জ্বালানী, যোগাযোগ ইত্যাদি খাতগুলোকে বিগত কয়েক বৎসরের ন্যায় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় শিল্পের সংরক্ষণ এবং রপ্তানী খাতকে প্রণোদনা দেয়ার চেষ্টা ও রাজস্ব আদায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ-সহ দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিকগুলোকে বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিখাত ও সরকারী খাতে অব্যাহত বিনিয়োগ প্রসংগ বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে যেটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, পল্লী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আর্থিক খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

প্রাস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সামস্টিক অর্থনৈীতির দূর্বলতা, অসংগতি, প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ সমূহের প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে ড. সেলিম বলেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বর্তমান বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়। সক্ষমতার অভাবে এডিপি বাস্তবায়ন পুরোপুরি না হওয়ায় সরকারী বিনিয়োগ কাঙ্খিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আবার বছর বছর সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, এর গুণগতমান বৃদ্ধি এবং অর্থ বৎসর শেষ তিন মাসে বা শেষ প্রান্তিক অত্যধিক ব্যয় প্রবনতার কারণে সরকারী অর্থের অপচয়, কাজে নি¤œমান ও গুণগতমান হ্রাস, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা  ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। অন্যদিকে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ  গত কয়েক বছর ধরে ২১-২২-২৩ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কাঙ্খিত  প্রবৃদ্ধিত জন্য এই হার জিডিপির ২৬-২৭ শতাংশে উন্নীত করা দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিশেষ করে ব্যাক্তি খাতে বিনিয়োগ আগামী অর্থ বছরে উচ্চ সুদের হার, বিনিময় হার, চলমান তারল্য সংকট, খেলাপী ঋণ সংকট, মুদ্রাস্ফীতির হার, রাজনৈতিক  স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ কারীর আস্থা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলসহ পণ্য মূল্য বৃদ্ধি  প্রবণতা  ইত্যাদি কারনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার সমূহ সম্ভবনা  দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ সমূহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ, অবকাঠামোগত ঘাটতি, সরকারী  ব্যয়ের অগ্রাধিকার  ঠিক করা, ঘাটতি  বাজেটের অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা  বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সমূহ, রপ্তানী বৈচিত্রকরণ, রপ্তানীর প্রবৃদ্ধির তুলনায় আমদানী প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক বৃদ্ধি, কাঙ্খিত মাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সঞ্চয় বিনিয়োগ তারতম্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রকল্প গুলো ব্যয়ধিক্য (Cost Overrun) এবং বাস্তবায়ন সময়োত্তর্ণের  (Time overrun) সঠিক ঝুকি নির্ণয়, মাসিক ভিত্তিতে  প্রকল্প রেজাল্ট ভিত্তিতে মূল্যায়নের  ব্যবস্থা  থাকা  দরকার। ব্যক্তি খাতের  বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বৈদেশিক সূত্র  থেকে ঝামেলামুক্ত ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত, সুদের হার, বিনিময় হার, মুদ্রাস্ফীতির হার, আস্থার উন্নতি, বিদুৎ জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি চলমান কার্যক্রম গুলোর সুষ্ঠু সমাপ্ত সহ  ইত্যাদি বিষয়ের উপর জোর নজরদারি, তদারকি এবং স্থিতিশীলতা অন্যতম নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। এছাড়া বাজেটকে সঠিক  বাস্তবায়নে সক্ষমতা, প্রস্তাবিত বাজেট  বাস্তবায়নের স্বচ্ছ রোডম্যাপ, রাজস্ব আদাযে স্বচ্ছতা ও জবাব  দিহীতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত পরিবর্তন ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে বাজেট বাস্তবায়নের  অনেক  চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।     

দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট, ব্যবসা ব্যয় হ্রাস, বৈশ্বিক প্রতিযোগীতামূলক অবস্থান, অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে এই বাজেটে সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যয়ের গুনগতমান, বাস্তবায়ন সময়, মোট প্রকল্প ব্যয়, ইত্যাদির উপর অধিক গুরুত্বারোপ করে সঠিক ব্যয়ে, সঠিক সময়ে এবং সঠিক গুনে ও মানে প্রকল্প কার্য সমাপ্তের জন্য সঠিক মানদন্ড নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এক দেশ বা অঞ্চলে কেন্দ্রিভূত না করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠান সমূহকে সমসুযোগ প্রদান করলে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। চলমান বৃহৎ প্রকল্প গুলোর বাস্তবায়নের হার সময় সময় প্রেস ব্রিফিংএর মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেমন-বাংলাদেশ দৈনিক কতটুকু বা কত কিলোমিটার রাস্তা সম এককে (equivalent unit) তৈরী হচ্ছে, দৈনিক কত কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে (সম এককে) ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য সুপারিশ করছি। সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামোর কারনে সুফলগুলো সুস্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করি।  এই বাজেটে প্রবৃদ্ধি সঞ্চয়ী বৃহৎ ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোগত প্রকল্প সমূহ এবং স্থবির বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানা কলাকৌশল অগ্রাধিকার পেয়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২.৫ শতাংশ কর হার হ্রাস, গ্রীন তথা পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা ও শিল্পায়নে কর ছাড়, স্থানীয় শিল্পায়নে তথা ইলেকট্রনিক্স শিল্পের উন্নয়নে গৃহীত কর ছাড়ের পদক্ষেপগুলো বাজেটের ইতিবাচক দিক। তবে স্থানীয় ঋণপত্রের উপর ৩ শতাংশ এবং পরিবেশক অর্থায়নে ১ শতাংশ উৎস কর কর্তন ব্যবসা বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করবে। তাছাড়া একক ব্যক্তির কর সীমা কমপক্ষে ৩,০০,০০০ টাকার এবং নন পাবলিকলি ট্রেডেট কোম্পানীর কর হার ২.৫ শতাংশ হ্রাস করার সুপারিশ জানাচ্ছি।  

লেখক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাহী কমিটি চেয়ারম্যান।