সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লজ্জিত অর্থমন্ত্রী
প্রকাশিত : ০৩:৪৯ পিএম, ৮ জুন ২০১৮ শুক্রবার
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টাকার বিশাল এই বাজেট উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে আজ শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলেও এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লজ্জিত বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শুক্রবার দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের সমালোচনা করে তিনি বলেন যে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লজ্জা বোধ করছেন। সাংবাদিকেরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে স্বীকার করতে চান না বলেও এসময় তিনি মনে করেন।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক মানিক মোনতাসির অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনটি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল যে, ব্যাংকিং ও শেয়ার বাজার কেলেংকারি ইস্যুতে অর্থমন্ত্রী নিজেকে ব্যর্থ মনে করেন কি না। অনলাইন পত্রিকা সারাবাংলা ডটনেট এর সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা প্রশ্ন করেন যে, “১১০০ বর্গফুটের মতো ছোট আকারের ফ্ল্যাটের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। তবে বড় আকারের ফ্ল্যাটের ওপর কর বাড়ানো হয়নি। এর মাধ্যমে বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কী না?” এছাড়াও অন্য আরেক গণমাধ্যমকর্মী রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও বা উবারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিষয়ে জানতে চান। ওই সাংবাদিকের প্রশ্নে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের ওপর ভ্যাট আরোপের বিষয়ে খানিকটা সমালোচনাও প্রকাশ পায়। এই তিন সাংবাদিকের পরেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন অর্থমন্ত্রী। চিরাচরিত রাগী স্বরে উত্তর দেওয়া শুরু করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি না বলে পারছি না যে, আপনাদের (সাংবাদিক) প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে যে, আপনারা মুখ দিয়ে না বললেও বলতে চাচ্ছেন যে, বিগত দশ বছরে দেশে কোন উন্নয়নই হয়নি। আপনাদের এই প্রশ্নগুলো ‘টোটালি মিনিংলেস’ (একদমই অর্থহীন)। আমি ভেবে পাই না যে, আমার সামনে এমন সাংবাদিক বসে আছেন যারা দেশের উন্নতি দেখেনই না। আমি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে লজ্জিত বোধ করছি”।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, “আপনারা বলছেন সমাজে বৈষম্য আছে। কোথায় বৈষম্য? বাংলাদেশে কত মানুষ দরিদ্র তা জানেন আপনারা? যারা বলছেন দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, দে আর লায়িং (তারা মিথ্যে বলছে)। দেশে দারিদ্রের সংখ্যা কমছে, বাড়ছে না”।
“৭ বছর আগেও দেশে দারিদ্র সীমার নিচে মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ। যা এখন ২২ শতাংশ। একেবারে প্রান্তিক দরিদ্র জনগণ ছিলেন ১৮ শতাংশ। আজ তা ১১ শতাংশ। তাহলে দরিদ্র মানুষ বাড়লো কীভাবে”?
শেষমেশ ওই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরই দেননি অর্থমন্ত্রী মুহিত।
বাজেটোত্তর এই সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, জ্বালানীবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনসহ আরও অনেকে।
//এসএইচএস// এসএইচ/