ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

‘র’ আদ্যক্ষরে ব্রাজিলের তারকা ফুটবলারদের কীর্তি

প্রকাশিত : ০৪:২৮ পিএম, ৯ জুন ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৫:০৭ পিএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার অংশ নেওয়া দলটির নাম ব্রাজিল। সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জেতা দলের নামও ব্রাজিল। আবার র আদ্যক্ষরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক ফুটবলারও আছে ব্রাজিলের। র আদ্যক্ষর যুক্ত যে সকল ব্রাজিলিয়ান তারকা বিশ্বকাপ মাতিয়েছে, আজকের পর্বে থাকছে তাদের কথা।

 

রবার্তো কার্লোস: বিশ্বের সেরা গোলটির নামটি আসলে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রবার্তো কার্লোসের বা পায়ের সেই গোলকধাঁধানো শটটির কথা। পদার্থবিদ্যার সূত্রকেও বোকা বানিয়ে দেওয়া রবার্তো কার্লোসের গোলটি আজও সর্বকালের সেরা গোলের তালিকায় জায়গা ধরে রেখেছে। তার পুরো নাম রবার্তো কার্লোস ডি সিলভা রোচ। ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল ব্রাজিলের সাওপাওলোতে জন্ম নেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে ফরোয়ার্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ক্যারিয়ার শেষ করেছেন একজন সফল লেফট ব্যাক হিসেবে। অনেকেই তাকে বুলেটম্যান হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। ১৯৯২ সালে ব্রাজিল দলে জায়গা পায় কার্লোস। তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন রবার্তো কার্লোস। একাই ৯৮’র বিশ্বকাপে দলকে নিয়ে গেছেন ফাইনালে। আর ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে ইতিহাসই করে ফেলেছেন।

ক্লাবের হয়েও দারুণ উজ্জ্বল রবার্তো কার্লোস। রিয়াল মাদ্রিদে ১৯৯৬ সালে যোগ দিয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়ন লীগের শিরোপা জয় করেন কার্লোস। ক্লাব ফুটবলে ৫৮৪ ম্যাচে করেছেন ৭১ গোল। এদিকে ২০০৬ সালে ব্রাজিলের ফুটবল দল থেকে অবসরে যান বুলেটম্যানখ্যাত কার্লোস।

 

রোমারিও:

বিশ্ব ফুটবলে ‘গোল মেশিন’ নামেই তাকে চেনেন সবাই। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের ছোট্ট তালিকায় সব সময় থাকবেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রোমারিও। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে জন্ম নেন রোমারিও। ৪৮ বছর বয়সী রোমারিও সাড়ে চারশো ম্যাচে করেছেন তিনশরও বেশি গোল। অবসরের পর নিজেই স্বীকার করেছিলেন, “ফুটবল না থাকলে আমি হয়ত আত্মহত্যার পথই বেছে নিতাম”। সবুজ গালিচার বদলে খালি পায়ে পাথুরে রাস্তাতেই ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছিল তার। বাকিদের চেয়ে খর্বাকৃতির হওয়ায় তার কপালে জোটে ‘বাইচিনহো’ (বেঁটে) উপাধি। তবে প্রতিভা হারিয়ে যায়নি সেই রাস্তায়, মাত্র ১৩ বছর বয়সেই স্থানীয় ক্লাব ওলারিয়ায় সুযোগ পেয়ে গেলেন।

পিএসভিতে নিজের প্রথম মৌসুমেই ডাচ লিগ জেতেন ‘বাইচিনহো’। এরপর দারুণ পারফরমেন্স দেখিয়েছেন বার্সেলোনায়। ১৯৯২ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল কাতালানরা, রোমারিও করেছিলেন হ্যাটট্রিক। ব্রাজিল দলের হয়েও দারুণ ঝলক দেখিয়েছেন রোমারিও। ১৯৯৪ সালটা ছিল যেন রোমারিওরই। বেবেতো, কাফু, মাজিনহোদের সাথে ব্রাজিলের হয়ে জিতলেন বিশ্বকাপ। ৫ গোল করে জিতলেন ব্রোঞ্জ বুট, হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার।


রোনালডো:২০০২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ব্রাজিল-জার্মানি দুই শিবিরেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন গোল হচ্ছিল না। অবশেষে ফাইনাল ম্যাচের গেঁড়ো ভাঙলেন রোনালডো। শুধু গেড়োই ভাঙ্গলেন না, জোড়া গোল করে দলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। সেবার তার হাত ধরেই বিশ্বকাপের ট্রফি উঠেছিল ব্রাজিলিয়ানদের ঘরে। তার পুরো নাম রবার্তো নাজারিও ডি লিমা। তবে সবাই তাকে রোনালডো নামেই ডাকতেন। ১৯৭৬ সালে ব্রাজিল দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে ক্লাব ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি পিএসভি, ইন্টার মিলান ও বার্সেলোনাকে বেশ কয়েকটি শিরোপা জিতিয়েছেন। এদিকে দলের হয়েও তার পারফরম্নেস উজ্জ্বল। ১৯৯৬, ৯৭ ও ২০০২ সালে তিনি ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন।


রোনালদিনহো: ফুটবল নিয়ে পায়ের কারুকাজ দেখিয়ে পুরো ফুটবল বিশ্বকে যিনি বিমোহিত করে রাখতেন তার নামই রোনালদিনহো। সেই ১৯৯৭ সালের অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপ দিয়ে দুনিয়াকে জানান দেন যে তিনি আসছেন, আর তা পুর্ণতা পায় ঐ বছরই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে।১৯৯৯ সালে ব্রাজিল দলের কোপা আমেরিকা জয়ের মুল কারিগরদের একজন রোনালদিনহো, যিনি পুরো টুর্নামেন্টে ৬ গোল করেন এবং আরো অর্ধ-ডজন গোল করান সতীর্থদের দিয়ে। ২০০২-০৩ মৌসুমে যোগ দেন বার্সেলোনায়। ২০০৫ সালে হন ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়। ১৯৮০ সালে রোনালদিনহো জন্মগ্রহণ করেন। মিড ফিল্ডার হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি ফরোয়ার্ড ও উয়িঙ্গার হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করেন।


রিভালদো:

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের আরেক তারকা ফুটবলার রিভালদো। তার পুরো নাম রিভালদো ভিতর বোরবা ফিরোরা। তবে তিনি রিভালদো নামেই পরিচিত। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ৭৪ ম্যাচে ৩৫ গোল করেন তিনি। আর ব্রাজিলের অলটাইম টপ গোল স্কোরাররে সাত নম্বরে জায়গা পায় রিভালদো। ১৯৯১ সালে সান্তা ক্রুজে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে ক্লাব ফুটবলে নাম লেখান রিভালদো। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১৯৯২ সালে সাও পাওলোতে চলে যায় এবং সেখানে সেকেন্ড ডিভিশনের টিম মগি মিরিমের হয়ে খেলেন। ১৯৯৩ সালে এক মৌসুমের জন্য করিস্থিয়ানে লোনে খেলে রিভালদো। ১৯৯৪ এ ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসে যোগ দিয়ে সেখানে দুই বছরে ৪৫ ম্যাচ খেলে সে, তখনই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার নজরে পড়ে সে। ১৯৯৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভোতে যোগ দিয়ে ইউরোপিয়ান ক্যারিয়ার শুরু করে রিভালদো। এরপরই যোগ দেয় বার্সেলোনায়। ২০০২ পর্যন্ত বার্সার জার্সি গায়ে ২৫৩ ম্যাচে মোট ১৩৬ গোল করে রিভালডো১৯৭২ সালের এপ্রিলে তিনি ব্রাজিলের রিওফিতে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বার্সেলোনার হয়ে দারুণ ঝলক দেখান রিভালদো। ২০০২ সালে এসি মিলানে যোগ দিয়ে নিজের বার্সা ক্যারিয়ারের ইতি টানেন রিভালডো।মিলান- এসি মিলানের হয়ে সে কোপা ইটালিয়া আর চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০০২/০৩ জিতে। ২০০৩ সালে জাতীয় দল থেকে অবসরে যায় রিভালদো।


রবার্তো ফিরমিনো:

ব্রাজিলিয়ান দলে বর্তমান সেরা ফুটবলারের তালিকা করলে তিনি নিঃসন্দেহে উপরের সারিতে থাকবেন। নেইমারের পরই যে নামটি বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, তা হচ্ছে রবার্তো ফিরমিনো। ১৯৯১ সালে আলাগোসা স্টেটে জন্মগ্রহণ করেন ফিরমিনো। চ্যাম্পিয়ন লীগের ফাইনালে লিভারপুলকে তুলতে দারুণ খেলেছেন ফিরমিনো। সালাহর পরই যে নামটি লিভারপুলে বেশ জোরেশোরে শোনা যায়, তাহলো রবার্তো ফিরমিনো। একেবারে হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা ফিরমিনো বর্তমানে ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা। আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে ফিরমিনো নেইমারকে সঙ্গ দেবেন এটাই এই বিশ্বকাপে দেখার পালা।

এমজে/