তরুণীকে প্রাইভেটকারে ধর্ষণ: ধনীর দুলালকে গণপিটুনি (ভিডিও)
প্রকাশিত : ০৩:২৫ পিএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৬:৩৩ পিএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার
রাতের অন্ধকারে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এক তরুণীকে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে ধর্ষণকালে এক ধনীর দুলালকে ধাওয়া করে আটক করেছে জনতা। শনিবার রাতে কলেজগেট সিগন্যাল থেকে তাকে আটক করা হয়।
ধর্ষণকালে আটক অভিযুক্ত রনি হক ও তার গাড়িচালককে প্রাইভেট থেকে বের করে বেধরক মারধর করে জনতা। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে চালক পালিয়ে গেলেও রনিকে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ শনিবার রাতে রনিকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত রনি হক দুই সন্তানের জনক। বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এই সাবেক ছাত্র পেশায় ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, রাতে কলেজগেট সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেটকারের (ঢাকা মেট্রো- গ ২৯৫৪১৪) ভেতরে এক তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছিলেন রনি।
ওই সময় আরেকটি গাড়িতে ছিলেন রাফি আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি মনে করছিলেন গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা চলছে।
এর পর রাফিসহ সেখানে থাকা আরও কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে রনির প্রাইভেটকারটি আটকে ফেলেন। তখন তারা দেখতে পান গাড়ির পেছনের আসনে রনি এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে।
পরে জনতা গাড়ির ভেতর থেকে ভুক্তভোগী তরুণী, অভিযুক্ত মদ্যপ তরুণ ও গাড়িচালককে বের করে আনেন।
তরুণী জনতাকে জানান, তাকে রাস্তা থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে ধর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এর পর জনতা ওই তরুণ ও গাড়িচালককে মারধর করেন।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাফি আহমেদ ওই ঘটনার বিবরণসহ একটি ভিডিওচিত্র সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি ১০ হাজারেরও বেশি বার শেয়ার হয়েছে। ভিডিওটিতে পাঁচ হাজার দুই শতাধিক মন্তব্য পড়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় কলেজগেট থেকে মদ্যপ এক তরুণকে মাতলামি করার অভিযোগে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। ডিউটি অফিসার আবদুল জলিল জানান, এসআই মিনহাজ আহমেদের নেতৃত্বে ওই যুবককে আটক করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খোঁজ নিয়ে জানানোর কথা বলেন ডিউটি অফিসার।
সর্বশেষ দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে শেরেবাংলা নগর থানায় ফের যোগাযোগ করে জানা যায়, অভিযুক্ত রনি হকের বিরুদ্ধে তখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি।
ডিউটি অফিসার আবদুল জলিল জানান, থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।
ঘটনা সম্পর্কে রাফি আহমেদের ভাষ্য, ‘আজ (গতরাত) অফিস থেকে ফেরার পথে মোহাম্মদপুর, কলেজগেট সিগন্যালে ঠিক আমার সামনের গাড়িটাতে লক্ষ্য করে দেখি ভেতরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ধস্তাধস্তি করছে এবং গাড়ির ড্রাইভারের গাড়ি চালানোর ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে গাড়িটা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে দুর্ভাগ্য তাদের, রাস্তায় তীব্র জ্যাম থাকায় গাড়িটি বেশি দূর যেতে পারেনি। এমতাবস্তায় আমি আমার গাড়ি থেকে নেমে সামনে যেতে যেতে দেখি আরও কিছু লোক গাড়িটির দিকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছে। তখনো ভাবতে পারিনি এতটা নিচ ও নিকৃষ্ট ঘটনার চাক্ষুস প্রমাণ হতে যাচ্ছি।
আমি গাড়িটির কাছে যেতেই দেখি ছেলেটি মেয়েটিকে ধর্ষণ করছে। গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে আমরা মেয়েটিকে বাইরে বের করে নিয়ে আসি, পরে অপর পাশের দরজা খুলতেই দেখি অতিপরিচিত সেই ছেলেটি অর্থাৎ বড়লোক বাবার বখে যাওয়া নষ্ট সন্তান। ছেলেটিকে বাইরে বের করতে গিয়ে সহ্য করতে হয়েছে বাজে মদের গন্ধ। আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। অতঃপর বসিয়ে দিলাম ওই জানোয়ারের কানের নিচে আমার বাম হাতের পাঁচ আঙুলের চিহ্ন। এর পর ক্ষুব্ধ জনতা চিলের মতো করে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বাকি দায়িত্ব পালন করল।
পরে মেয়েটির কাছ থেকে জানতে পারলাম, ওই নর-পিচাশটা মেয়েটিকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছে।’
রাফি আহমেদের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই অভিযুক্ত হিসেবে রনি হককে চিহ্নিত করেন। তারা রনির ফেসবুক আইডিও শেয়ার করে তার বিচার দাবি করেছেন।
ভিডিও
/ এআর /