করে জর্জরিত পোশাক শিল্প
প্রকাশিত : ০৫:৪১ পিএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার
প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য কোন সুখবর নেই। বাজেট সামগ্রীকভাবে ব্যবসাবান্ধব হলেও তা পোশাক শিল্পবান্ধব হয়নি। কেননা দেশের সিংহভাগ রফতানি আয়ের এ খাতটিতে বাড়ানো হয়েছে করের হার। করের এ বর্ধিত বোঝা খাতটির উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করবে।যার প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদে খাতটির প্রবৃদ্ধি কমে আসতে পারে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক খাতসহ সামগ্রিক বাজেট সম্পর্কে সংগঠনের মূল্যায়ন তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় সংগঠনের সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচিসহ ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেমন পোশাক শিল্পের জন্য কোনো সুখবর নেই তেমনি আবার খারাপ খবরও নেই। শুধু এটুকুই বলব, বাজেটে আমাদের দাবির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটা পোশাক শিল্পবান্ধবও হয়নি। তিনি জানান, সবাই পোশাক খাত ভালোবাসেন। তাই এ খাত নিয়ে টম অ্যান্ড জেরি খেলা খেলেন।
বাজেট এলেই এ খাতে কর বাড়ানো হয়। আবার বাজেটের পর সেটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার করে কমিয়ে আনতে হয়। এবারের বাজেটেও তাদের দাবি- দাওয়া পূরণের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়েই যাবেন। সেখান থেকে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করে আনতে সক্ষম হবেন বলেও দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
পোশাক খাত নিয়ে হতাশার কথা বললেও তিনি এ বাজেটকে সময়োপযোগী ও ব্যবসাবান্ধব বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, শুধু পোশাক শিল্পের ওপর ভিত্তি করে বাজেট হবে না। সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাজেট করতে হয়। অর্থমন্ত্রী হয়তো সেটিই করেছেন। আমরা বাজেট পর্যালোচনা করে দেখেছি, এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অনেক পদক্ষেপ আছে। আমরা মনে করি, এতে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগ বাড়বে।
পোশাক খাত নিয়ে বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, এ বাজেটে পোশাক খাতের কর্পোরেট কর হার ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং সবুজ শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই ইস্যুতে বিজিএমইএ’র অনুরোধ ছিল- এটা যেন ১২ শতাংশ থেকে আরও কমিয়ে ১০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজেটে আমরা তা দেখতে পাইনি।
আমরা মনে করি, কর্পোরেট কর হার বাড়ানোর ফলে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, পোশাক শিল্পে কর্পোরেট কর হার ১০ শতাংশ নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। আমরা আশা করি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাতের করপোরেট কর হার কমানোর কঠোর সমালোচনা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।সিপিডি মনে করে ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর সুফল সুদের হার ও তারল্য সংকটের ওপর প্রভাব ফেলবে না।সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যাংক খাতে কর্পোরেট করহার কমানো হলেও পোশাক শিল্পের কর্পোরেট করহার বাড়ানো হয়েছে। দেশের সিংহভাগ বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনকারী এ শিল্পটি বাঁচাতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
সংগঠনের দাবি পূরণ হয়নি উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর বলেন, পোশাক শিল্পের জন্য সব থেকে সমস্যার বিষয় হল ভ্যাট। ভ্যাট থাকলেই হয়রানি হবে। তাই আমরা রফতানি খাতকে সম্পূর্ণভাবে ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি করেছিলাম- যা ঘোষিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।
আমরা সেই দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। পোশাক শিল্প থেকে উৎস কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার অথবা অন্তত তিন বছরের জন্য ওই কর ধার্য প্রক্রিয়া থেকে পোশাক খাতকে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। বাজেটে দাবিটিও প্রতিফলিত হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা আমরা পাইনি। চূড়ান্তভাবে বাজেট পাস হওয়ার আগেই এ বিষয়টিও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।
আরকে// এআর