এটাই হয়তো আমার শেষ বিশ্বকাপ: মেসি
প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ১২ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্বকাপে খেলা শুরু। টানা দু`বার কোপা আমেরিকার ফাইনাল। তিনটি ফাইনাল খেলেও শিরোপার মুখ দেখেনি। একপ্রকার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে লিওনেল মেসিকে। দীর্ঘ এই সময়ে তার নিজের বয়স পার হয়েছে ত্রিশ বছর। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর হয়তো জাতীয় দলের জার্সি খুলে ফেলতে পারেন। দিয়েছেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সম্প্রতি বিশ্বকাপ, ক্লাব বার্সেলোনা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন স্প্যানিশ দৈনিক ডেইলি স্পোর্টে। তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো...
প্রশ্ন: জেরার্ড পিকে ও আপনার একই বয়স। কিন্তু পিকে বলে দিয়েছেন বিশ্বকাপের পরই জাতীয় দল থেকে অবসর নেবেন। আপনিও কি মনে করেন, এটা আপনার শেষ বিশ্বকাপ?
মেসি: আমি জানি না। নির্ভর করছে কীভাবে আমরা বিশ্বকাপে এগোই, কতদূর পৌঁছাতে পারি। তিনবার ফাইনালে গিয়েও না জেতায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিশেষত আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমের ওপর আমাদের রাগ রয়েছে। ফাইনালে পৌঁছানোটাও কতটা কঠিন, সেটা তারা বোঝে না। হ্যাঁ, জেতাটা অবশ্যই দরকার। কিন্তু ফাইনালে যেতেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়।
প্রশ্ন: যদি জেতেন, তাহলে অনুভূতিটা কেমন হবে? পরবর্তী অনুপ্রেরণা কী হবে?
মেসি: অনুভূতিটা একই রকম থাকবে। ক্লাবের হয়ে অনেক ট্রফি জিতেছি। তাতেও পরের বছরে একই অনুপ্রেরণা ছিল যে, এবারও সব ট্রফি জিততে হবে। বিশ্বকাপেও ব্যাপারটা একই।
প্রশ্ন: কোন দলকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন আপনারা?
মেসি: অনেক আছে। ব্রাজিল, স্পেন, ফ্রান্স রীতিমতো আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিগত প্রতিভায় পরিপূর্ণ একটা দল নিয়ে খেলতে নামছে। বেলজিয়ামকেও ভুলে গেলে চলবে না। বাকিদের সঙ্গে ওদের নাম একইভাবে উচ্চারিত হয় না। গতবারের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও থাকছে ওদের সঙ্গে। তাই আমার মনে হয়, এটা সবার কাছে একই রকম কঠিন বিশ্বকাপ হতে চলেছে।
প্রশ্ন: প্রতিপক্ষ দলের কোনো ভালো ফুটবলারের নাম বলবেন?
মেসি: অনেক আছে। কিন্তু আমাদের দলেও ভালো ফুটবলার রয়েছে। আমাদের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। তাই আলাদা কারও নাম বলতে চাই না।
প্রশ্ন: রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছে। আপনারা দ্বিমুকুট জিতেছেন। এখন বিতর্ক চলছে, কার মৌসুমটা বেশি ভালো গেল? আপনার কী মনে হয়?
মেসি: দ্বিমুকুট জেতায় আমাদের বছরটা সত্যিই ভালো কেটেছে। এটা সত্যি যে, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সঙ্গে কিছুই তুলনীয় নয়। কিন্তু তাতে আমাদের কৃতিত্ব খাটো হয়ে যায় না। লা লিগা আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতার মধ্যে তফাৎ আছে। আমাদের বছরটা খুব ভালো কেটেছে। সারা বছর আমরা মাত্র তিনটি ম্যাচ হেরেছি। তার মধ্যে একটা আমাদের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে ছিটকে দিয়েছিল।
প্রশ্ন: যদি বলা হতো, দ্বিমুকুটের বদলে আপনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দেওয়া হবে, রাজি হতেন?
মেসি: না। লা লিগা ও কোপা জেতা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কাজটা সহজ নয়।
প্রশ্ন: আপনি চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন। রিয়াল গত পাঁচ বছরে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনেকে বলে, বার্সেলোনা যে দল, তাতে শেষ সাত বছরে মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতা বার্সেলোনাকে মানায় না। আপনি কি একমত?
মেসি: হ্যাঁ। আমরা আরও বেশি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিততে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে গত তিন বছরে।
প্রশ্ন: কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে যাওয়া নিয়ে কী বলবেন?
মেসি: সত্যি এটা খুব যন্ত্রণার। প্রথম লেগে আমরা ৪-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ছিটকে যাওয়াটা বেশি ব্যথা দিয়েছে।
প্রশ্ন: কিয়েভে ফাইনালটা দেখেছিলেন?
মেসি: খুব সামান্য। দেখতে চাইনি, তা কিন্তু নিয়। কিন্তু তখন আমি আর্জেন্টিনায়। ফলে সময়ের ফারাক ছিল। পরে হাইলাইটস দেখেছি।
প্রশ্ন: জর্ডি আলবা যেমন বলেই দিয়েছেন, সব সময় রিয়ালের হার চান। আপনিও সে রকম?
মেসি: আমি নিজে জিততে চাই। অন্য দলগুলো কী করল, তা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। বার্সেলোনারখেলোয়াড় হিসেবে কখনোই চাই না, আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ কোনো ম্যাচ জিতুক; কিন্তু সবার আগে নিজেদের জয় চাই।
প্রশ্ন: জিদানের রিয়াল ছাড়া নিয়ে কী ভাবছেন?
মেসি: অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একরকম ভাবিনি। মনে হয় কেউই ভাবেনি। নিশ্চয়ই সরে যাওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে।
প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে আগামী মৌসুমে বার্সেলোনায় কাকে নিতে চান?
মেসি: এটা বলার জন্য আমি যোগ্য নই। এটা ভাবার জন্য কর্তারা আছেন।
প্রশ্ন: গ্রিজম্যানকে কি দরকার নেই?
মেসি: জানি না, ওর কথা ভাবা হচ্ছে কি-না। কিন্তু আবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিততে গেলে সেরা প্লেয়ারদের দরকার। ক্লাব যদি ওর সঙ্গে চুক্তি করে, দারুণ হবে। পুরোটাই কোচ ও কর্তাদের ওপর নির্ভর করছে। এটা বলতে পারি, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের জন্য সেরা ফুটবলারদের দরকার। আর গ্রিজম্যান সত্যিই ভালো।
প্রশ্ন: বার্সেলোনার নতুন স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন কীভাবে?
মেসি: আপাতদৃষ্টিতে এটা খুব সহজ মনে হলেও মাঝে মাঝে এটা খুব কঠিন হয়ে যায়। যদিও এটাই আমাদের কাজ, তবু এটা সহজ নয়। অবশ্যই সেই ক্ষমতা থাকলে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাও দ্রুত হয়ে যায়। কিন্তু তবু কিছুটা সময় তো লাগেই।
প্রশ্ন: বদলটা কোন জায়গায়?
মেসি: হঠাৎই একটা ম্যাচে বদলের তাগিদটা অনুভব করলাম। মনে হলে, একটু নিজে নেমে খেলি। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলের ভেতর ঢুকে পড়ার ক্ষুধাটা একই রকম আছে।
টিআর/ এআর