‘ভাগ্য নির্ধারণের রাত লাইলাতুল কদর’
ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দিন
প্রকাশিত : ০৬:৪৬ পিএম, ১২ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, অাসসালামু অালাইকুম। সব পাঠককে লাইলাতুল কদরের শুভেচ্ছা। অাল্লাহ রাব্বুল অালামীনের অপার করুণায় অামরা ( মুহাম্মদ সা. এর উম্মত) লাইলাতুল কদর পেয়েছি। অামাদের জন্য এটা অাল্লাহ তা আলার বড় অনুগ্রহ।
অন্যান্য নবীর উম্মতরা পাঁচশ ছয়শ বছর হায়াৎ পেত। কিন্তু অামাদের ( মুহাম্মদ সা. এর উম্মতদের) গড় অায়ু মাত্র ষাট-সত্তর বছর। অামাদের প্রিয় নবী ( সা.) কে একদিন অতীত যুগের উম্মতদের অামলনামা দেখানো হলো। তখন অাল্লাহর নবী ভাবলেন, অাগেকার নবীদের উম্মতরা অনেক বেশি হায়াৎ পেয়েছে বিধায় এতো বেশি নামায, রোজা করেছে। বেশি সওয়াব কামিয়েছে। কিন্তু অামার উম্মতরা হায়াৎ পাবে কম। তারা তো এতো অামল করতে পারবে না। তাহলে কী অামার উম্মতরা পেছনে পড়ে থাকবে। এমন চিন্তা করে রাসূলুল্লাহ ( সা.) খুব ব্যথিত হলেন। মনে মনে কষ্ট পেলেন।
তখন অাল্লাহ অামাদের রাসূলকে লাইলাতুল কদর দান করলেন। বলেন, লাইলাতুল কদরের খায়রুম মিন অালফে সাহার। এই একটা নাত এতো মর্যাদার যেটা হাজার মাসের চেয়ে বহুগুনে উত্তম।
অন্যান্য নবীর উম্মতেরা হাজার মাস এবাদত করে যে সওয়াব পেয়েছে মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতরা একরাত ইবাদত করে তার চেয়ে অনেক বেশী গুণ সওয়াব পাবে।
লাইতালুল কদরের দুটো দিক। কদর শব্দের দুটো অর্থ। একটা হলো `ভাগ্য নির্ধারণ ` অার অন্য অর্থটা হলো সম্মান। অাল্লাহ তা অালা নিজেও রাতটিকে মর্যাদাবান করে অামাদের জন্য দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত এ রাতে যারা ইবাদত বন্দেগী করে এমানুষগুলো অাল্লাহর কাছে খুবই সম্মান পায়। এই লাইলাতুল কদরেই কোরঅানুল কারীম নাযীল হয়েছিল। মর্যাদার ওপরে মর্যাদা, সম্মানের ওপর সম্মান, প্রাপ্তির ওপর প্রাপ্তির রাত লাইলাতুল কদর।
লাইলাতুল কদরের অারেকটা দিক হলো `নির্ধারণ`। অাল্লাহ তা অালা দুনিয়াটা পরিচালনা করেন একটা নিয়মের ভিত্তিতে। অাল্লাহ `ক্বুন ফায়াকুন` বললেই হয়ে যায়। কিন্তু শৃংখলার জন্য একটা নিয়মের ভিত্তিতে পৃথিবী পরিচালিত হয়। এই প্রেক্ষাপটে অাগামী এক বছর হায়াৎ, মউত, সুখ, দুঃখ, ভালো, মন্দ, অায়, উপার্জন, এই এক বছরের ফয়সালা হবে লাইলাতুল কদরে। এজন্য এটার নাম নির্ধারনী। লাইলাতুল বরাতে রিযিক মোটামুটি বরাদ্দ হয় অার লাইলাতুল কদরে তা নির্ধারিত হয়ে যায়। অাল্লাহ তখন দায়িত্বগুলো ভাগ করে ফেরেশতাদের মাঝে বণ্টন করে দেন।
অর্থাৎ অামরা দেখতে পাচ্ছি লাইলাতুল কদর একদিকে সম্মানের রাত অন্যদিকে অামাদের তাকদীর নির্ধারণের রাত। অামরা যে যে অবস্থায় থাকি, অামরা সবাই শান্তি চাই। অামরা সবাই একটা উন্নত জীবন চাই। সেজন্য লাইলাতুল কদরের রাতে অামরা জনে জনে অাল্লাহর কাছে অাগামী এক বছর যেন অামাদের হায়াতে বরকত হয়, সুস্বাস্থ্য হয়, পরীক্ষার্থীদের যেন পড়াশোনা ভালো হয়, কর্মজীবীদের যেন অায় রোজগার ভালো হয়, সুখ বৃদ্ধি পায়- এজন্য অাল্লাহর কাছে বলব। অারো অধিকতর প্রাচুর্য্য, অধিকতর সাচ্ছন্দ্যের জীবন চাইব।
লাইলাতুল কদরের সূর্যাস্তের পর থেকে ফেরেশতারা জিবরাঈল (অা) এর নেতৃত্বে দুনিয়ার অাকাশে অবতরণ করেন। ওই রাতে যারা ইবাদত বন্দেগী করেন, জিবরাঈল (অা) ফেরেশতাদের বহর নিয়ে এসে সবার জন্য দোয়া করেন। ইবাদতরত লোকদের সঙ্গে মোসাহাবা করেন। হাত মেলান। অন্যান্য ফেরেশতারাও জনে জনে মুমিন মুসলমানদের সালাম দিয়ে যায়। অাল্লাহ অামাদেরকে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বুঝার মতো জ্ঞান দিয়েছেন।
তাই লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে অামরা ফরজ, সুন্নাহ, ওয়াজিবতো অাদায় করবই- পাশাপাশি নফল নামাজ, তাসবীহ, কুরঅান তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ অাদায় করব। সদকা করব। মানুষের একটা ভালো কথাও অাল্লাহর কাছে ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। অামরা অামাদের নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, বিশ্বের জন্য দোয়া করবো। সব মানুষ যেন এই জগতেও সেই জগতেও সুখ- শান্তি পায়, অাল্লাহর কাছে সেই দোয়া করব।
অাল্লাহ অামাদের সবাই কবুল করুন।
অামিন।
লেখক : খতিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।
অনু লেখক: অালী অাদনান।
এসএইচ/