ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ঈদুল ফিতর রোজাদারদের জন্য আল্লাহ তায়ালার সেরা উপহার

মাওলানা সৈয়দ এমদাদ উদ্দিন

প্রকাশিত : ০৪:৪৭ পিএম, ১৭ জুন ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৭:৫২ পিএম, ১৭ জুন ২০১৮ রবিবার

সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পরে অামাদের মাঝে এলো ঈদুল ফিতর। মহা খুশীর, মহা অানন্দের  দিন। ঈদুল ফিতর সবার জন্য মহা অানন্দের। সে বাচ্চা হোক কিংবা কিশোর কিশোরী কিংবা যুবক, কিংবা বয়স্ক মানুষ- সে ধনী কিংবা গরীব, সমগ্র মানবজাতির জন্য  ঈদ মহা আনন্দের দিন। শুধু মুসলমান নয় বরং অমুসলিমদের জন্যও ঈদ মহা আনন্দের দিন।
অমুসলিমদের কথা এজন্য বলছি, মুসলামানদের আনন্দ দেখে অমুসলিমরা অনেক কিছু শিখতে পারে। তারাও এটি দেখে আনন্দিত হয়। অমুসলিমরাও এটা দেখে অনেক কিছু শিখতে পারে। বলে, এত সুন্দর একটা জীবন বিধান। আমাদের ঈদের আনন্দ নির্মল আনন্দ। এখানে কোন হৈ চৈ, মারামারি নেই। এখানে কোনো চিৎকার চেঁচামেচি নেই। অমুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরাও আমাদের ঈদে শুভেচ্ছা জানায়। এতে প্রমাণিত হয় মুসলমানদের ঈদে অমুসলিমরাও অনুপ্রাণিত হয়।
ঈদুল ফিতর সম্পর্কে একটা হাদীস আছে। আল্লাহর রাসূল ( সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটো খুশি। একটা হলো ইফতারের সময়। আরেকটা হলো যেদিন আল্লাহর কাছ থেকে রোজার পুরষ্কার নিবে, সেদিন। ইফতারের যে আনন্দ আমরা তা প্রতিদিন উপলব্ধি করি। তার চূড়ান্ত উপলব্ধি করি ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের যে উপলব্ধি হয় তা হলো, পুরো একমাস আমরা সিয়াম সাধনা করেছি।  দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থেকেছি। যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থেকেছি। কিন্তু ঈদের দিন থেকে আমাদের উপর সেই বিধি নিষেধ তুলে দেওয়া হয়।
একটা বিষয় ভেবে দেখুন, নববিবাহিত বর-কণে বিয়ের পরপরই যদি রমজান মাস শুরু হয়ে যায় তাহলে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যৌন মিলন থেকে বিরত থাকে। ঈদের দিন যখন সেই বিধি নিষেধ প্রত্যাহার হয় তখন বান্দা স্বাভাবিকভাবেই মহা আনন্দিত হয়। এটা হলো ভোগের দিক থেকে আনন্দ।
আরেকটি আনন্দ আছে। সেটি হলো আধ্যাত্মিক দিক থেকে আনন্দ। সেটাকে আমরা বলি রূহানি আনন্দ। আল্লাহ আমাদেরকে মাসব্যাপী রোজা রাখার সুযোগ দিয়েছেন। অনেক মানুষ এটার গুরুত্ব উপলব্ধি করে না। রোজা রাখা শুরু করে অসুস্থ হয়ে যায় এমন অনেকে আছেন। আমি- আমরা তা করতে পেরেছি তা বিশাল আনন্দের।
ঈদুল ফিতরে আমরা সর্বস্তরের মানুষ মহাআনন্দ উপভোগ করি। ঈদে সব পরিবারের শিশুরা নতুন পোশাক কিনে। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে পরিবারের শিশুদের নতুন কাপড় কিনে দেওয়া হয় না। সে যত গরীবই হোক, বাচ্চার জন্য কিছু কিনবেই। অর্থাৎ শিশুরা ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করছে।  
আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ ঈদের আনন্দে জসগণকে সামিল করে নেন। প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষ ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা তো একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেনই অমুসলিমরা রাষ্ট্র প্রধানরাও এই কাতারে অংশ নেন।
অর্থাৎ ঈদ সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর উপহার। মানুষ যখন খুশি হয় তখন আল্লাহ তায়ালা নিজেও খুশি হন। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে যার যতো ভূমিকা আল্লাহ তার প্রতি তত বেশি রহমত নাযিল করেন। আল্লাহর ফেরেশতারা এই আনন্দ আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) যাকে সৃষ্টি না করলে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড সৃষ্টি করতেন না তিনিও তার উম্মতদের আনন্দে আনন্দিত হন।
তবে মনে রাখা ভালো, ঈদের নামে কোন অনৈতিক, অনৈসলামিক কার্যকলাপ পছন্দ করেন না। আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনের পরিবর্তে তখন অসন্তুষ্টি দেখা দিবে।
[লেখক পরিচিতি: খতিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ]
অনুলিখন: আলী আদনান।