সভ্যতার কোপে বদলে যাচ্ছে বন্য জীবন
প্রকাশিত : ১১:৫৪ এএম, ১৯ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার
ফাইল ফটো
সভ্যতার কোপ পড়েছে জঙ্গলে। মানুষের উপদ্রবে রীতিমতো বিরক্ত জঙ্গলের বাসিন্দারা। তাই মানুষকে এড়িয়ে চলতে বদলে ফেলছে খাওয়া-ঘুমের সময়। বদলে যাচ্ছে তাদের শিকারও। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, হাতি, বাঘ কিংবা বুনো কুকুরের মতো প্রাণীদের রোজকার রুটিনে বদল দেখা যাচ্ছে গোটা বিশ্বেই। তারা দিনের বেলায় ঘুমোচ্ছে এবং আরও বেশি করে নিশাচর হয়ে উঠছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর একমাত্র কারণ মানুষ।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি বিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের ছাত্রী ও বাস্তুসংস্থানবিদ (ইকোলজিস্ট) কেটলিন গেনরের কথায়, পশুদের আচার-আচরণের পরিবর্তনে বাস্তুতন্ত্রের উপরে কী প্রভাব পড়ছে, আমরা তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছি।
আগেকার গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, কোটি কোটি বছর আগে এই পশুরা নিশাচরই ছিল। এর পরে এক সময়ে শিকার-খাওয়া-ঘুমকে দিন ও রাতে ভাগ করে নেয় তারা।
কেটলিন বলেন, লক্ষ লক্ষ বছর আগে দিনরাতের যে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল পশুরা, আমরা আবার তাদের পুরনো অভ্যাসে ঠেলে ফেরত পাঠাচ্ছি। আবার নিশাচর করে তুলছি। গোটাটাই হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতি মেনে।
ছয় মহাদেশের ৬২টি প্রজাতির প্রাণীকে নিয়ে করা ৭৬টি গবেষণাপত্র তূল্যমূল্য বিচার করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে প্রাণী তার দৈনন্দিন কাজকর্ম দিন ও রাতের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিল, সে এখন মানুষের সঙ্গ এড়াতে ৬৮ শতাংশ কাজই সারছে রাতের অন্ধকারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা ক্রুজ় পার্বত্য এলাকায় নেকড়ের মতো দেখতে এক ধরনের বুনো কুকুরের বাস রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, লোকজনের হাইকিং কিংবা বাইসাইক্লিংয়ের চোটে বিরক্ত হয়ে তারা দিনের বেলা ঘুমোচ্ছে। ফলে তাদের শিকারও বদলে যাচ্ছে। রাতে তারা যে সময়ে জেগে থাকছে, ওই সময় যে সব ছোট প্রাণীরা জেগে থাকে, শিকার হচ্ছে তারাই। সহ-গবেষক নেল কার্টার জানান, একই ছবি ধরা পড়েছে হিমালয়ের কোলে নেপালেও। লোকজন এড়িয়ে চলতে শিকারের জন্য বারবার একই জায়গা বেছে নিচ্ছে বাঘ।
বয়েজি স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর কার্টার বলেন, ‘আমি আশাবাদী, যতই চ্যালেঞ্জিং হোক না কেনও, মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের সহাবস্থানের একটা পথ ঠিকই বেরোবে। তবে যেটা নিয়ে চিন্তা তা হল, এতে বাঘেদের উপর কী প্রভাব পড়বে।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, সহাবস্থানের পথ বেরোলেও হয়তো এই সব প্রাণীর খাবার, প্রজননতন্ত্র, সঙ্গমের আচরণ বদলে যাবে। আর সেটা ধরা পড়বে, ভবিষ্যৎ গবেষণায়।
সূত্র: আনন্দবাজার
একে//