বিদ্যুৎ অফিসের কাণ্ড
হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় ট্রান্সফর্মার
শাওন সোলায়মান
প্রকাশিত : ০৩:১৮ পিএম, ১৯ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার
সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ট্রান্সফর্মার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ট্রান্সফর্মার যদি হয় কোনো আবাসিক ভবনের সীমানা প্রাচীরের ওপর তাহলে সেটি কেমন হয়? অথবা ভবনের বারান্দা থেকে যদি হাত বাড়িয়েই ধরা যায় ট্রানফর্মারটি সেটাই বা কতটা সুবুদ্ধির কাজ? সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায়। আবাসিক ভবনের হাত দূরতে বসানো হয়েছে ট্রানফর্মারটি। যেটি ফ্ল্যাটের বেলকনি থেকে হাত দিয়ে ধরা যায়। এতে জীবন ঝুঁকিতে আছে ওই বাড়ির পাঁচটি পরিবার।
৮৯/৭ উত্তর যাত্রাবাড়ি ধলপুরের ওই ভবনটিতে গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটিতে প্রবেশ করতে হলে কুর্নিশ করতে হবে ট্রান্সফর্মারটিকে। ভবনের মূল ফটকের ওপর এমনভাবে ট্রান্সফর্মারটি বসানো হয়েছে যে, ভবনে প্রবেশের সময় আপনা থেকেই মাথা নোয়াতে হবে।
শুধু তাই নয়, দোতলার বারান্দার এত কাছে এই ট্রান্সফর্মারটি যে, বারান্দা থেকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে এটিকে। ভবনটি মালিক, মালিকের স্বজন এবং ভাড়াটিয়াসহ মোট পাঁচটি পরিবার বসবাস করেন। এদের মধ্যে সবথেকে ঝুঁকিতে আছেন ভবনে থাকা শিশুরা। ভবনটিতে পাঁচ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে মোট ছয় জন শিশু-কিশোর বসবাস করে।
ভবনটির এক বাসিন্দা ফাইজা তাসনিম জানান, বাড়িতে শিশুরা আছে। আমরা না হয় বুঝে চললাম। ওরা কী করবে? এখন কী ওদের বারান্দায় যাওয়া বন্ধ করব? নাকি ঘর থেকে আসা যাওয়া বন্ধ করব আমরা? এমনিতেই ঢাকা শহরে একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য ফাঁকা জায়গা নেই। এসব শিশুদের জন্য তো বারান্দাই খেলার জায়গা।
বাড়ির মালিক আলমগীর খান ইটিভি অনলাইনকে জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে এভাবে ট্রান্সফর্মারটি বসানো হয়। আগে এটির বসানোর জায়গা ছিল আরেক জায়গায়। তারপর দুই দফা স্থান পরিবর্তনের পর আমার বাসার সামনে এভাবে বসানো হয়। আমি বারবার আপত্তি জানালেও আমার কোনো কথাই শোনেনি বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন।
আলমগীর খান দাবি করেন, মাঠ পর্যায়ের সুপারভাইজারের প্রতিবেদন উপেক্ষা করেই স্থানীয় কিছু লোকজনের সাহায্য নিয়ে জোর করে এই ট্রান্সফর্মার স্থাপন করেন স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস এর প্রকৌশলী ফয়েজ করিম। তিনি (আলমগীর) বলেন, ট্রান্সফর্মার যখন স্থাপন করা হচ্ছিল তখনও সুপারভাইজার সাহেব ওনাকে (ফয়েজ) মোবাইলে বলেছেন যে, এখানে ট্রান্সফর্মার বসানো বিপজ্জনক। তবুও তিনি এখানেই বসালেন। এখন পর্যন্ত তিন বার আমি লিখিত আবেদন করেছি বিদ্যুৎ অফিসে। কোনো কাজ হয়নি। প্রতিটা দিন আমাদের আতংকের মধ্যে দিয়ে কাঁটে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ওই বাসার বাসিন্দাদের জীবন ও চলাচলের মতো মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন। ভুক্তভোগী ভবন বাসিন্দাদের স্থানীয় ইউএনও অথবা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেন তিনি। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে ‘পাবলিক নুইস্যান্স’ নামে একটি বিষয় আছে। এই ভবনের ব্যাপারে যা জানলাম তাতে এ ধরনের একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩২ এর লংঘন। এরজন্য ভবন মালিক চাইলে স্থানীয় ইউএনও অথবা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি পিটিশন দায়ের করতে পারেন। তার আবেদন সত্য হলে জেলা প্রশাসক বিদ্যুৎ অফিসকে ওই ট্রান্সফর্মারটি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেবেন। এরপরও যদি এই উপায়ে সমাধান না হয় তাহলে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করতে পারবেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১০২ অনুযায়ী রিট পিটিশন দায়ের করতে পারেন।
রাজধানীর এই এলাকার বিদ্যুতের দেখভালের দায়িত্ব আছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ডিপিডিসি। ট্রান্সফর্মারটি বিষয়ে জানতে অত্র এলাকার প্রকল্প অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়েজ করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার জন্য নির্ধারিত মুঠোফোন নম্বর (০১৭৩০৩৩৫২৮৩) এ যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলমের ভাষ্য, ট্রান্সফর্মার বসানো তো সরকারি কাজ। আমাদেরকে এটা করতেই হবে। আমরা তো সড়কের ওপর তা বসাতে পারব না। আমাদেরকে বসাতে হবে সড়কের পর এবং ভবনের আগে। রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী, সড়কের পাশে থাকা ভবন নির্মাণের সময় পাঁচ ফুট জায়গা ছাড়তে হয়। ওই ভবনটির মালিক হয়তো সেই জায়গা ছাড়েননি। এ কারণেই ট্রান্সফর্মারটি হয়তো ভবনের খুব কাছে স্থাপিত হয়েছে।
আর ভবন মালিক আলমগীর খানকে নতুন করে ডিপিডিসিতে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (এনওসিএস, মানিকনগর) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ভবনের মালিক নতুন একটি আবেদন করুক আমাদের কাছে। আমরা যাচাই বাছাই করে তার আবেদনের সত্যতা পেলে ট্রান্সফর্মারটি সরিয়ে দেব।
তবে ভবনের বাসিন্দা এবং স্থানীয় লোকজনের প্রশ্ন, যাচাই বাছাই না করেই কী তাহলে ট্রান্সফর্মারটি বসানো হয়েছে? এতে যদি জান ও মালের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় তার দায়ভার কে নেবে?
/ এআর /