ভাইরাসজনিত জ্বর প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ০৯:৫২ পিএম, ১৯ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩৯ এএম, ২১ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার
রাইসা আরিয়ান(৭) ও রাহিন(১৩ মাস) ভাই বোন। তিন দিন ধরে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। ২ ঘণ্টা পরপর জ্বরের তীব্রতা বাড়ে। জ্বর না কমায় বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিংসাধীন রয়েছে।
রাইসা আরিয়ান ও রাহিন এর বাবা সাংবাদিক এস এম রাশিদুল ইসলাম জানান, তিন দিন ধরে তার মেয়ে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। দু’ঘণ্টা পর পর জ্বরের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। মাঝে মাঝে ১০২ থেকে ১০৩ জ্বর উঠে যায়। শুরুতে রাইসা আরিয়ান দিয়ে জ্বর শুরু হয়। পরে একের পর এক পরিবার সদস্যরা জ্বরে আক্রান্ত হয়।
শুধু রাইসা আরিয়ান ও রাহিনের পরিবার নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে ভাইরাস জ্বরসহ আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় করছেন। আক্রান্তদের কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আবার কাউকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গ্রীষ্মকালীন রোগব্যাধি থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার বেশি খাওয়ার পাশাপাশি ঘরের বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আবহাওয়ারও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। এ পরিবর্তনে রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ও মানবদেহে রোগ সৃষ্টিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। অতিরিক্ত গরম, বাতাসের আর্দ্রতা, ধুলাবালি ও পরিবেশ শরীরের জন্য অনুকূল নয়। এ কারণে গরমে নতুন কিছু রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশেষ করে ভাইরাস জ্বর। এছাড়া অতি গরমে হিটস্ট্রোক বা খিঁচুনি থেকে অজ্ঞান হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি জানান, এছাড়াও ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, হাম, বসন্ত, টাইফয়েড, মাথাব্যথা, ঘামজনিত পানিস্বল্পতা, রক্তে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়া, অতি দুর্বলতা, হাত-পা কামড়ানো, মাথা ঘোরানো ও বমি-বমি ভাব ও বমি হওয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিচ্ছে।
ভাইরাস জ্বর থেকে লক্ষ পেতে কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৌসুমি ফল খাওয়া যেতে পারে। যেমন আনারস, কলা, আম। তবে লক্ষ রাখতে হবে ফল যেনো ভেজা ও ফরমালিন মুক্ত হয়। পরিস্কার ও বিশুদ্ধ পানি এবং বাসায় তৈরি খাবার গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও জানান, গ্রীষ্মকালীন রোগ প্রতিরোধে বাইরের শরবত, পঁচাবাসি খাবার বর্জন করতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থান অথবা ঘরের মধ্যে অবস্থান করতে হবে।
এব্যাপারে জানতে জানতে চাইলে ত্বক, লেজার এন্ড এসথেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্চিতা বর্মন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, বর্তমানে ভাইরাস জ্বর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। জীবনে কখনো ভাইরাসজনিত জ্বর হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ডেঙ্গু, জন্ডিসসহ যে কোনো ভাইরাসজনিত জ্বরকে ‘ভাইরাস জ্বর’ বলা হয়। ভাইরাস জ্বর সাধারণত তেমন কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। তাই ভাইরাস জ্বর হলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ জ্বরের জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক জরুরি নয়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেলেই হয়। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম প্রয়োজন। ভাইরাস জ্বর হলে খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি ও জিঙ্কযুক্ত খাবার প্রাধান্য দিতে হবে। তরল জাতীয় খাবার যেমন, স্যুপ, ফলের শরবত, স্যালাইন, লেবুর শরবত, ডাবের পানি খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে। রোগীকে সব সময় মশারির নিচে রাখতে হবে। গলা ব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানি খেতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর শরীর পাতলা গামছা বা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে ও মাথায় পানি দিতে হবে। শরীর গরম হলেই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে ওষুধ খেতে হবে।
টিআর/