ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

সফটওয়্যার আমদানী শুল্ক না কমানোসহ ৭ দফা প্রস্তাবনা

প্রকাশিত : ১০:২৮ পিএম, ২০ জুন ২০১৮ বুধবার

বাংলাদেশে উৎপাদন হয়, এমন কম্পিউটার সফটওয়্যারের আমদানী শুল্ক পূর্বের হারে রাখাসহ ৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিখাত সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠন।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট সঙ্গঠনের নেতারা এসব প্রস্তাবন তুলে ধরেন। অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো হলো এমটব, বিএসিসিও, বেসিস, বিসিএস, বিএমপিআইএ, ই-ক্যাব ও আইএসপিএবি।

সংগঠনগুলো মনে করে গত ৭জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের যে জাতীয় বাজেট পেশ করা হয়েছে, তাতে অর্থমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আশানুরূপ সুসংবাদ নেই। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাই খাতটির উন্নয়নে সাতটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-

১। অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস এবং সাইবার সিকিউরিটি আমদানীর ওপর থেকে শুল্ক কমানোর জন্য বেসিস থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে এগুলোর পাশাপাশি ‘অন্যান্য কম্পিউটার সফটওয়্যার’ এর আমদানী শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং মূসক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় এরকম সফটওয়্যারও বিদেশ থেকে আমদানীতে উৎসাহিত হবে। ফলে দেশীয় শিল্প মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। সুতরাং সেগুলো আমদানীর ওপর শুল্ক ও মূসক যথারীতি পূর্বের হারে বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।

২। মূসক কোড এস০৯৯.১০ এর আওতায় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর ৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ মূসক ধার্য ছিল। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার (আইটিইএস) পরিসর বাড়ছে। ফলে নানাবিধ উদ্ভাবন ও সেবা নিয়ে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার এ খাতের আয়কর ২০২৪ সাল পর্যন্ত মওকুফ করেছে। অপরদিকে এর ওপর মূসক বহাল রেখেছে। দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের জন্য বেসিস থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। অথচ তৎপরিবর্তে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর আলোচ্য বাজেটে মূসক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাব করছি।

৩। ইন্টারনেট বা ডাটা কানেক্টিভিটি এখন বিশ্বব্যাপী মৌলিক অধিকারের অনুষঙ্গ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা বা ডিজিটাল সার্ভিস থেকে শুরু করে যেকোন যোগাযোগের ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।সরকার কয়েক দফা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এর মূল্য কমালেও ইন্টারনেটের ওপর ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভ্যাট, সম্পুরক শুল্ক ও সারচার্জ গ্রাহকদের ওপর বোঝা হয়ে চেপে আছে। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল প্রকার নাগরিক সেবা সহজ লভ্য করতেই ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর থেকে সকল প্রকার কর প্রত্যাহারের আবেদন জানাই। ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর করারোপ ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের পরিপন্থী।

৪। অনলাইনে পণ্য বিক্রয় তথা ই-কমার্স এর ওপর বিগত বছরের ন্যায় কোনো ভ্যাট আরোপ না করায় আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে ভার্চুয়াল বিজনেস ও অনলাইনে পণ্য বিক্রয় নিয়ে যেহেতু একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে এ দুটি বিষয়ের সংজ্ঞা স্পষ্টিকরণ করা প্রয়োজন।

৫। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবার সংজ্ঞায় আইটি ট্রেনিং, আইটি/আইটিইস কলসালটেন্সি বা সফটওয়্যার কনসালটেন্সি, প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এ সার্ভিস/ ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং, অ্যানুয়াল সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স কনট্র্যাক্টস আইএসপি সার্ভিস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

ইন্টারনেট সেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট-এর প্রয়োজন হয়।নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা ও সুলভমূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন।ইন্টারনেট যন্ত্রপাতি যেমন, ফাইবার অপটিক কেবল, ওএলটি, ওএনইউ, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারির উপর বর্তমানে ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক আরোপিত রয়েছে; যেটা এ শিল্পের প্রসারে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা এবং একারণে তা কমিয়ে ০ শতাংশ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল।

৬। ঘোষিত বাজেটে ৮৪ দশমিক ৭১ এবং ৮৪ দশমিক ৭৩ শিরোনামা সংখ্যা/এইচ এস কোড-এ ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।উল্লিখিত পরিবর্তনসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে মূসক অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং- ২২৪-আইন/২০১৭/৭৭৪-মূসক, তারিখঃ ০১ জুলাই, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ রহিতক্রমে প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং- ১৬৭-আইন/২০১৮/৭৯০-মূসক, তারিখঃ ০৭ জুন, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ জারি করা হয়েছে। এর ফলে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের মূল্য প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অন্তরায়।এমতাবস্থায় পূর্বোক্ত প্রজ্ঞাপন বলবত রেখে ১১ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।

৭। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশেমোবাইল সংযোজন এবং উৎপাদনকারী উভয়কেই ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রজ্ঞাপনের শর্ত (ক) অনুযায়ী শুধুমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকবে, সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান নয়। যেখানে ২০১৭-১৮ সালের বাজেটে ঘোষিত সুবিধার কারণে কোম্পানিগুলো বিশাল বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করেছে, সেখানে মাত্র এক বছরের মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার কারণে পুর্ণাঙ্গ মোবাইল আমদানির খরচের চাইতে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত মোবাইলের খরচ অনেক বেশি পড়বে। ফলে কোনোভাবেই এই সংযোজন শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না এবং বিনিয়োগকারিরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই এই শিল্পের উপর ঘোষিত ১৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাত দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানির জন্য পুরোপুরিই প্রস্তুত। আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডেড ল্যাপটপ, কিছু এক্সেসরিজ বাজারে এসেছে, যার মাধ্যমে আমরা হার্ডওয়্যার উৎপাদনেও আমাদের পদচারণা শুরু করেছি। আমাদের উচিত হবে এখন সকল শক্তি একত্রিত করে এগিয়ে যাওয়া। তাতে ১ বিলিয়ন বা ৫ বিলিয়ন নয়, দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত।

এস এইচ এস// আরকে

আরকে//