ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

‘এমপিপুত্রের’ গাড়িচাপায় অন্য এক চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ এএম, ২১ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:২০ এএম, ২১ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ঢাকার মহাখালীতে গাড়িচাপায় এক চালকের প্রাণহানির জন্য নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরীকে দায়ী করেছেন দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী।
সাংসদদের বাসভবন ন্যাম ফ্ল্যাটের একজন নৈশপ্রহরীর কথায়ও মঙ্গলবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় শাবাবকে দোষারোপ করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাবাবের পরিবার বলছে, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়িটি তাদের। কিন্তু ঘটনার সময় শাবাব গাড়ি ‘চালাচ্ছিলেন না’।
আর পুলিশ বলছে, ওই সময় শাবাব গাড়ি চালাচ্ছিলেন কি না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। গাড়িটি উদ্ধারের পর পরীক্ষা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মহাখালীতে বিমানবন্দর সড়কে একটি গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলে সেলিম ব্যাপারী (৫৫) নামের ওই ব্যক্তি মারা যান। তিনি তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন।
তাকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি নোয়াখালী সদরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলীর। এই সাংসদপত্নী নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
রাতে ওই ঘটনার পর শাবাবের গাড়ি অনুসরণ করে ন্যাম ভবনে গিয়ে দুর্ঘটনায় এই এমপিপুত্রের ‘সম্পৃক্ততার কথা’ জানতে পারেন বলে দাবি করেছেন একজন। এ বিষয়ে রাতেই কাফরুল থানায় গিয়ে সাংসদপুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শামীম আশরাফি নামের ধানমণ্ডি এলাকার এই ব্যবসায়ী ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তারা দুইজন একটা খয়েরি রঙের টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়িতে ছিলেন। রাত ১০টার পরে বনানী পার হয়ে ধানমণ্ডি যাওয়ার পথে একটা সাদা অডি গাড়িকে একটা মটরসাইকেলকে অনুসরণ করতে দেখে কৌতূহলবশত তারাও তাদের পিছু নেন।
এক পর্যায়ে গাড়িটি ন্যাম ভবনে ঢুকে পড়ে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেলটি ঢুকে পড়ে। পরে আমরাও ঢুকে পড়ি। ন্যাম ভবনে প্রবেশ করার আগে গার্ডকে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানায়, ওই গাড়িতে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিমের ছেলে শাবাব চৌধুরী আছেন। তার পরনে হালকা এক রঙের শার্ট ও একটি প্যান্ট ছিল।
গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি শাবাব চৌধুরী মটরসাইকেলের আরোহীর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে কিল-ঘুষি মারতে চাইছেন। আমি এগিয়ে গিয়ে ওকে মারছেন কেন প্রশ্ন করে নিজের পরিচয় দেই। শাবাব চৌধুরী মোটরসাইকেল আরোহীর ফোন কেড়ে নিয়ে ফোনের দাম দিতে চাইছেন কেন জানতে চাই।
তখন শাবাব খুব স্বাভাবিক ও ভাবলেশহীনভাবে এগিয়ে এসে বলেন, একটা বাসের সাথে গাড়ির ধাক্কা লেগেছে। পরে মটরসাইকেল আরোহী বলেন, আপনার গাড়ির চাপায় একজন মারা গিয়েছে। তার ভিডিও ফুটেজও আমার কাছে রয়েছে। এরপর ওই যুবক শাবাবকে বলেন, তোমার ভুল হয়েছে। যিনি মারা গিয়েছেন তার পরিবারের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও। তাদের ক্ষতিপূরণ দাও।
কিন্তু শাবাব তাকে বলেন, আমরা সোসাইটির কোন লেভেল মেইনটেইন করি তা তো জানো। তোমরা চলে যাও। এমনটা হতেই পারে। এরপর মটরসাইকেলআরোহীকে উদ্দেশ করে উনি বলেন, ওর ফোনে ভিডিও আছে, তাই নিয়েছি। কত কোটি টাকা লাগবে বল, বিষয়টা তোমরা চেপে যাও।
ওই সময় বরিশালের এক সংসদ সদস্যের ছেলে পরিচয় দিয়ে আরেক যুবক সেখানে গিয়ে শাবাবের পক্ষে ঘটনার মীমাংসা করতে চাইছিলেন বলে জানান তিনি।
এসএ/