বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিক্সনের বিরোধীতার ৭ কারণ
প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ২১ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, সে কথা কম-বেশি সবারই জানা। সে সময় বাংলাদেশের সহায়তায় এগিয়ে আসার ফলে ভারতের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ানোর পরিকল্পনা ছিল নিক্সন প্রশাসনের।
ওই সময় জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো কটূক্তি শুনতে চাইতেন না যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। পশ্চিম পাকিস্তানের মিত্র হিসেবে তখন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকার বিরোধিতায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন যেসব যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন তার কিছু গোপন নথি অবমুক্ত করা হয়েছে। পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে।
ওই সময় ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ক্লেমেন্টসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর সঙ্গে এক বৈঠকে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন নিক্সন। তার যুক্তিগুলো পাঠকদের জন্য সংখ্যা আকারে প্রকাশ করো হলো।
১) যুদ্ধে ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপ একটি ‘বাজে নজির’ স্থাপন করবে এবং ছোট দেশগুলোর ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে ধারণা করতেন নিক্সন।
২) তিনি এটিকে সামরিক শাসনে থাকা ছয় কোটি মানুষের ছোট দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি মানুষের বড় দেশ ভারতের গণতান্ত্রিক সরকারের সামরিক পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
৩) সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে ভারত যদি প্রতিবেশী কোনো দেশে আগ্রাসন চালায়, বিশ্বের সব ছোট দেশের ভবিষ্যতই হুমকির মুখে পড়বে বলে তিনি ধারণা করেন।
৪) বৈঠকে জাপান সরকার ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সয়ায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু শরণার্থীদের জরুরি সহায়তার বিষয়ে তার প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ‘ইতিবাচক’ হলেও ওই সহায়তা যুদ্ধের খরচ যোগাতে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কায় তাতে আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস।
৫) বাংলাদেশে যেহেতু ‘নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার মত স্থায়ী’ একটি সরকার তখনো চালু করতে পারেনি। তাই তিনি মনে করেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আরও সময় নেওয়া উচিৎ।
৬) রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা নারীরা বিপজ্জনক বলে মনে করেন নিক্সন। ভারত ও ইসরায়েল দুই দেশই নারীর নেতৃত্বে যুদ্ধে জড়িয়েছে।
৭) জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে নিক্সন একটি রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন। সেখানে শরণার্থীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ত্রাণ সহায়তা এবং ইয়াহিয়া খানকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানোর কথা ছিল। কিন্তু ভারত সে সময় ‘নিজেদের স্বার্থকেই’ গুরুত্ব দেয়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। নিজের দেশের আইন লংঘন হবে জেনেও সাড়ে চার দশক আগে তিনি যে মুক্তিকামী বাঙালিদের দমনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সমরাস্ত্র যুগিয়েছিলেন, তা পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার অ্যান্ড আ ফরগটেন জেনোসাইড’ বইয়ে উঠে আসে।
এমএইচ/ এসএইচ