টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী
ঐতিহ্যবাহী নওয়াব বাড়ি এখন রয়েল রিসোর্ট
প্রকাশিত : ০৮:২৭ এএম, ২৫ জুন ২০১৮ সোমবার
জেলার ধনবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবিস্থিত নওয়াব বাড়ি এখন নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক মন্ত্রী নওযাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সেই ঐতিহ্যবাহী নওয়াব বাড়িটিই আজকের সুপ্রতিষ্ঠিত ‘রয়েল রিসোর্ট’।
বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ পর্যটন কেন্দ্রটি ঢাকা থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-জামালপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। প্রায় সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এ রয়েল রিসোর্টে। এখানকার দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে নওয়াব মঞ্জিল, নওযাব প্যালেস, নওয়াব শাহী জামে মসজিদ, দীঘি, ভিলা ইত্যাদি। এসব পুরনো নকশাখচিত অট্টালিকার সব বেডরুমের ফার্নিচারসমূহ সেই নবাবী আমলের।
এ ছাড়াও রয়েছে সম্পূর্ণ আধুনিক কাঠামোতে নির্মিত কটেজ। এখানে এ মনোরম পরিবেশ শুটিং ও পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আবাসিক
এখানকার নিরাপদ এবং আরামদায়ক রুমগুলো চার ধরনের, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করে। রয়েছে অফিসারদের সব আবাসিক চাহিদা মেটাবে এ রয়েল রিসোর্ট।
নওয়াব মঞ্জিল
এ ভাবনটি ছিল নওয়াব বাহাদুরের প্রধান আবাসকক্ষ। এককালে সব নামিদামি অতিথি এখানেই থাকতেন। এ ভবনটি এখন সব ভিআইপি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। নিপুণ কারুকার্যে খচিত ভবনটির ভেতরে রয়েছে সব নবাবি ফার্নিচার। মঞ্জিলের সামনে বাগান, উন্মুক্ত স্টেজ, খেলার মাঠ সত্যিই নয়নাভিরাম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিক বাথরুম, হট-কোল্ড শাওয়ার, মাল্টি চ্যানেল টিভিসহ সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
প্যালেস
এ বিশাল আকৃতির ভবনটি ছিল এককালে দরবার হল। বর্তমানে নওয়াব প্যালেস কর্পোরেট অতিথিদের জন্য ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি গোলটেবিল, কনফারেন্স রুম। সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে সজ্জিত করফারেন্স রুমে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট সাউন্ড সিস্টেম কম্পিউটার ইত্যাদি। পাশেই ৩০০ আসনবিশিষ্ট কনভেনশন হল। এ কনভেনশন হলে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও সেমিনার হয়ে থাকে। প্যালেস এবং মঞ্জিলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে অতীত ঐতিহ্য বহনকারী আসবাপত্র।
এ ছাড়াও রয়েছে বিশাল ডাইনিং হল, নওয়াব মিউজিয়াম, লাইব্রেরি এবং বেশ কয়েকটি বেড রুম। প্রায় শতাধিক বছরের পুরনো ভবনের সব আধুনিক সুবিধা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ার মতো।
ভিলা
দুই শতাধিক বছরের পুরনো এ ভাবনটি ছিল নওয়াব অন্দর মহল। এখানেও রয়েছে সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, সিঙ্গেল বেডরুম ও বিশাল আকৃতির ফুলের বাগান। একটি পরিবারের সুন্দরভাবে থাকার জন্য এ ভবনটি খুবই চমৎকার।
কটেজ
একটি অত্যাধুনিকভাবে নির্মিত একটি ভবন। ভিলার বারান্দা থেকে কটেজে প্রবেশের প্যাসেজটি এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এ কটেজে রয়েছে এসি রুম। পাশে ফুলের বাগানের মাঝখানে বড় আকৃতির গার্ডেন আমব্রেলা।
নওয়াব শাহী জামে মসজিদ
রয়েল রিসোর্টের ঠিক পাশেই রয়েছে সাতশ’ বছরের পুরনো মসজিদ। চীনা-মিসরীয়দের তৈরি মোগলীয় স্থাপত্যের নিদর্শন। এ মসজিদটির মোজাইকসমূহ এবং মেঝেতে মার্বেল পাথরের নিপুণ কারুকাজ বাংলাদেশে বিরল। মসজিদটির পাশে একটি কক্ষে রয়েছে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর কবর। এখানে ২৪ ঘন্টাই কোরআন তেলাওয়াত করে আসছে প্রায় ৮৮ বছর থেকে। এটা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। শাহী মসজিদের পাশে সাকিনা মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নওয়াব ইনস্টিটিউশন, আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ বিদ্যমান।
দীঘি
রয়েল রিসোর্টে রয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর বিশাল একটি দীঘি। এখানে নৌকা ভ্রমণ ও মাছ ধরার সুব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে সুন্দর মনোরম শান বাঁধানো ঘাট।
সাধারণ পরিবেশ
১২০ বিঘা আয়তনের রিসোর্টটি সম্পূর্ণ বাউন্ডরি করা। রিসোর্টে গেস্টদের আনন্দ দেয়ার মতো প্রায় সব ব্যবস্থাই রয়েছে। রয়েছে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি। প্রায়ই আয়োজন করা হয় আদিবাসী গারোদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গারোরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক নাচ-গান করে থাকে। আরো আয়োজন করা হয় বিলুপ্ত প্রায় লাঠি খেলা।
দর্শনীয় স্থান
নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের দূরত্বে ঐতিহ্যবাহী মধুপুর বন। বঙ্গবন্ধু সেতু মাত্র ৫০ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত। রয়েল রিসোর্ট নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ও গাইড দিয়ে রিসোর্টের গেস্টদের ঘুরিয়ে দেখায় আশপাশের সব দর্শনীয় স্থান।
এ ছাড়াও রয়েছে মনোমুগ্ধকর রাবার বাগান, আনারস বাগান, বাঁশ বাগান যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। মধুপুর থেকে ৩০ মিনিটের পথ পেরুলেই রয়েছে আদিবাসী গারো পল্লী। সেখানে উপলব্ধি করা যায় গারোদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র জীবনধারা, যা পর্যটকদের মনের খোরাক। গারো পল্লী পেরিয়ে আসতেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ন্যাশনাল পার্ক। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ। পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যান্ত পরিমাণে নিরাপত্তা রক্ষী ও ওয়েটার রয়েছে এ রিসোর্টে। এ ছাড়াও গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা আছে।
এ ব্যাপারে নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্টের ম্যানেজার মুকবুল হোসেন বলেন, এ রিসোর্টে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকরাই আসেন। এখানকার ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো।
ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, এ রিসোর্ট আমাদের ঐতিহ্য, দর্শনীয় এবং দৃশ্যমান কীর্তি।
এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসন বলেন, এ রিসোর্ট স্মৃতিচারণ ধরে রাখার ভালো উদ্যোগ। বিনোদনের এবং জ্ঞান আহরণের জন্য নির্মল জায়গা।
সূত্র : বাসস
এসএ/