ফল প্রত্যাখান, গাজীপুরে পুনর্নির্বাচনের দাবি বিএনপির
প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ২৭ জুন ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১২:৫৬ পিএম, ২৭ জুন ২০১৮ বুধবার
ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে গাজীপুর সিটিতে নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ তামাশা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দলটি।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) মিলে নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে তামাশা করেছে। নতুন নতুন রূপে ভোট ডাকাতির ফর্মুলা আবিষ্কার করছে। যাতে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। এ সিটির ৪২৫টির মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রের ফল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল আজ সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে চার লাখ ১০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন এক লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ হওয়ায় নয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
এ নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই বিএনপি জাল ভোট, কারচুপি আর অনিয়মের অভিযোগ আনলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, খুলনার নতুন রূপে ভোট ডাকাতির ফর্মুলা এবার আরো ভালোভাবে গাজীপুরে প্রয়োগ করে নিজেদের পক্ষে রায় নিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বারবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে রায় ছিনিয়ে নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। গাজীপুরের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা আবার সেটি প্রমাণ করেছে’-যোগ করেন ফখরুল।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা ইসিকে বলব আপনাদের সঠিক সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করুন। একই সঙ্গে জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গণগ্রেফতার, সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ভাঙচুর, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে না দেওয়া, নির্বাচনের আগের রাত থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স বোঝাই করা, নির্বাচনের দিন এজেন্টদের জোর করে বের করে দেওয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ক্রমাগত অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন কোনো কিছুই আমলে নেয়নি। বিশেষ করে গাজীপুরে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও নির্যাতনের বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের আইন কখনোই প্রয়োগ করে নাই। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।’
সোমবার রাতে গ্রেফতার দলের নেতা মেজর (অব) মিজানুর রহমান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেছে এবং বাইরের প্ররোচনার কথা বলা হচ্ছে। মেজর মিজানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নীল নকশার অংশ হিসেবে।’ তিনি ‘চক্রান্তের’ নিন্দা জানান এবং মেজর অব. মিজানকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
টিআর/ এআর