ছাত্রনেতা থেকে নগরপিতা
প্রকাশিত : ১১:২৮ এএম, ২৮ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:০২ পিএম, ২৮ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। দুই লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে গাজীপুরের নগর পিতা হয়েছেন তরুণ জাহাঙ্গীর। তাঁর গা থেকে ছাত্র রাজনীতির গন্ধ এখনও যায় নি।
বলাবাহুল্য জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক উত্থান ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। স্বাধীনতার আগে ও পরে এদেশের ছাত্ররাজনীতিতে যারা দাবিয়ে বেড়িয়েছেন তাদের অনেকেই ঝড়ে পড়েছেন। কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিজেদের আসীন করতে পারেননি কিংবা দল মূল্যায়ন করে নি। জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে সেটি হয় নি।
গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের একটা আলাদা ইমেজ গড়ে উঠেছে। তরুণ, সদা হাস্যোজ্জ্বল ও মিতভাষী তিনি। যেকোনো মানুষ যেকোনো প্রয়োজনে জাহাঙ্গীরের কাছে গেলে তাঁকে সাধ্যমাফিক সহায়তা করাটা তার সহজাত। জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে খালি হাতে খুব কম মানুষই ফিরেছে।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনীতি একটু ভিন্ন ধাচের। ছোট বেলা থেকেই একটা স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। সেই স্বপ্ন অনুযায়ী কাজও করেছেন। গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হন নি একটি বারের জন্যও। গাজীপুর মহানগর বাস্তবায়ন কমিটি করে আন্দোলন গড়ে তোলে সফল হন। ঢাকার সবচেয়ে কাছের গাজীপুরবাসী পায় সিটি করপোরেশন। কিন্তু বিধি বাম! প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। জনমতও তৈরি হয় তার পক্ষে। পরে নানা নাটকীয়তার পর দলের প্রতি আস্থা রেখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
তখন অনেকে ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের রাজনীতির কবর রচনা হয়ে গেলো। বিশেষ করে নির্বাচনী মাঠ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর ভোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণার পর তার চোখের কাঁন্না দেখে অনেকেই বলেছিলেন পরোপকারী জাহাঙ্গীর বুঝি অভিমান করে রাজনীতি থেকেই সরে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটি হয় নি। তার লক্ষ্য যে বহুদূর।
গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহর পরাজয়ের পর ‘বলির পাঠা’ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরকে। বলা হয়েছিল তার কারণেই আজমতের পরাজয়। কিন্তু দলীয় প্রধান শেষ হাসিনা আস্থা রাখলেন জাহাঙ্গীরে। তাকে মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক করলেন।
গত ৫ বছর মাঠ-ঘাট চষে বেড়ান জাহাঙ্গীর। বিএনপির মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান যখন নাশকতার মামলার বেড়াজালে আদালত-কারাগার আর স্বল্প সময়ে নগর ভবনে সীমাবদ্ধ তখন জাহাঙ্গীর ছুটে যান নগরীর আনাচে কানাচে। প্রতিশ্রুতি দেন উন্নয়নের। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত না হলেও নগরীর ৫৭ টি ওয়ার্ডে শিক্ষক-মসজিদের ইমাম-সাধারণ মানুষকে নিয়ে কমিটি গঠন করেন। দলীয় বৃত্তে আটকে না থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
সবশেষে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। তবে জাহাঙ্গীর নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। নানা নাটকীয়তার পর মনোনয়ন পেয়ে যান। মনোনয়ন পেলেও গাজীপুরের সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে মেনে নিতে পারছিল না। এদিকে নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যায়। পরে আপিলে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে একাট্টা হয় আওয়ামী লীগ। সবশেষে ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়ে জয় পান জাহাঙ্গীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হাসান সরকার পান মাত্র ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট।
তরুণ প্রজন্মের ‘আইকন’
স্কুলজীবন থেকেই সদা হাস্যোজ্জ্বল ও মিতভাষী তিনি। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অদম্য ইচ্ছা তার দৃষ্টিতে জ্বলজ্বল করত। গাজীপুরের চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় থেকে সফলতার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন জেলার ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সততা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জাহাঙ্গীর আলম খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পেয়ে যান।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্র থাকাকালে ছাত্রদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবি আদায় আন্দোলনে তিনি প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদিও ছাত্রসংসদ নির্বাচনে হেরে যান। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএলবি এবং ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে রেকর্ডসংখ্যক ভোটে নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোনীত হন।
২০১৩ সালে গাজীপুর মহানগর প্রতিষ্ঠার পর জনপ্রিয়তাই তাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ উপহার দেয়। গাজীপুর মহানগরে একাট্টা আওয়ামী লীগ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। গেল মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ২ লাখেরও বেশি ভোটে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
মহানগরে জাহাঙ্গীর আলম শুধু একটি নামই নয়, তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে ‘আইকন’ হিসেবে এরই মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংগ্রামী এক জীবনযুদ্ধে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আজ তিনি সফলতার উচ্চ শিখরে।
/ এআর /