টমাস হ্যারিয়েট ও ধূমপানের ইতিকথা
প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ২৮ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:০৭ পিএম, ৩ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার
প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বড় করে ক্যানসার আক্রান্তের ছবি এবং সতর্কবার্তা থাকলেও ধূমপায়ীদের কেউই সেটিকে পাত্তা দেন না। ধূমপান স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকারক, এ কথাটা সবাই জানি। কিন্তু ধূমপানের অভ্যাস কবে থেকে মানব সভ্যতার সঙ্গে জড়িয়ে গেল, সে ইতিহাস জানেন কি? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
ধূমপানের অভ্যাস অতি প্রাচীন। যিশুর জন্মেরও তিন হাজার বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে ধূমপানের প্রমাণ মিলেছে। তবে সে যুগে তামাক পাতায় নয়, গাঁজা গাছের পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়ার নেশা করা হত। তামাক পাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া টানার চল তার অনেক পড়ে চালু হয়।
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাই হল তামাক গাছের ‘দ্যাশ’ বা জন্ম ভিটা। ছয় হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়কালে তামাক গাছের অস্তিত্বের কিছু নমুনাও পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। জানা যায়, দাঁতের ব্যথা কমাতে বা কাটাছেঁড়ার ওষুধ হিসেবে সে সময় তামাক পাতা ব্যবহার করা হত আমেরিকায়। তবে তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া টানার প্রচলন হয় ষোড়শ শতকের কিছু আগে থেকে। ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা টমাস হ্যারিয়েট তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া টানার প্রচলন করেন। সালটা ১৫৮৮। গ্যালিলিওর আগে এই টমাস হ্যারিয়েটই প্রথম টেলিস্কোপে দেখে চাঁদের ছবি এঁকেছিলেন।
শোনা যায়, এই হ্যারিয়েটের হাত ধরেই আলুর সঙ্গে পরিচয় ঘটে ব্রিটিশদের। যাই হোক, তামাকের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আমেরিকায় গিয়ে টমাসের ধারণা হয়েছিল, নানা রোগ আটকাতে পারে তামাকের ধোঁয়া। আর সে জন্যই তিনি তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া টানার প্রচলন করেন। ২ জুলাই, ১৬২১ সালে ৬১ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে টমাস হ্যারিয়েটের মৃত্যু হয়। অনেকের ধারণা, অতিরিক্ত তামাক সেবনই হ্যারিয়েটের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর পর তামাকের চাহিদা এতটাই বৃদ্ধি পায়, যে ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কিছু দেশে একটা সময় স্বর্ণমুদ্রার পরিবর্তে তামাক পাতা দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়েছিল। এর অনেক পরে ১৯০২ সালে শুরু হয় বিশ্ববিখ্যাত সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থা মার্লবোরোর বিপণন। আর তার পরই সারা বিশ্বে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে ধূমপানসহ নানা তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবসা আর চাহিদা।
এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ সিগারেটের ধোঁয়ায় আসক্ত। অন্যান্য দেশে ধূমপানের প্রবণতা ইদানীং বেশ কিছুটা কমলেও আমাদের দেশে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে দিনের পর দিন নেশা বাড়ছে।
ফ্রান্সে ধূমপানকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে দশ লক্ষ। ২৮ মে ২০১৮-এ ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়। তাই সুস্থ ভবিষ্যতের কথা ভেবে ধূমপান থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন।
সূত্র: জিনিউজ
একে//