নতুন বাজেটে কোন খাত কত বরাদ্দ পেল
প্রকাশিত : ১১:৪৯ পিএম, ২৮ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সরকারি দল ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে নতুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে।
বৈষম্য দূর করে টেকসই উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন নিতে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৮ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন যা পরে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়।
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দের নির্দিষ্টকরণ বিলটিই মূলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ কখনও ব্যয় হয় না। যা বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাব মেলানো হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা ব্যয় হবে না। অর্থমন্ত্রী গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে যে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই আগামি অর্থবছরের নিট বাজেট।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ সরকারি বিরোধীদলের অধিকাংশ সদস্যের উপস্থিতিতে অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ৪৪৮টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়।
সরকার ও বিরোধীদলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৫টি মঞ্জুরি দাবি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এই আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, নূরুল ইসলাম ওমর, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, নূরুল ইসলাম মিলন, সেলিম উদ্দিন ও বেগম রওশন আরা মান্নান এবং স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা শেষে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট পাস হয়। এর আগে আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৮’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের এটি শেষ বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা দশম বাজেট। এ বাজেটে কোন খাতে কত বারাদ্দ রাখা হয়েছে তা উল্লেখ করা হলো।
খাতওয়ারি বরাদ্দ: বাজেটে খাতওয়ারি বরাদ্দের মধ্যে অর্থ বিভাগের ব্যয় ২ লাখ ২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। ব্যয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম ব্যয় হবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। এ খাতে ব্যয় ২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অনুমোদিত ব্যয় পর্যায়ক্রমে হচ্ছে প্রতিরক্ষায় ২৯ হাজার ৬৬ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে ২৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অন্য খাতের ব্যয়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ খাতে ৩৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ২ হাজার ৮০১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ১৫৭ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৬৬২ কোটি, সরকারি কর্মকমিশন খাতে ৭৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খাতে ২১৫ কোটি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৪২৬ কোটি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ২ হাজার ৬৬২ কোটি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ১৩ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
পাশাপাশি পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ৩৮০ কোটি লাখ বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে ১৩৫ কোটি ৫৮ লাখ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৫৯৯ কোটি ৬২ লাখ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৫৫৫ কোটি ৫৩ লাখ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ২৫০ কোটি ৭৫ লাখ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৫২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হয়।
জননিরাপত্তা বিভাগে বরাদ্দ ২১ হাজার ৪২৬ কোটি ৩৫ লাখ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে ৩৪ কোটি ৭৭ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৪ হাজার ৮৯৬ কোটি ১৭ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ২০০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ১৮ হাজার ১৬৬ কোটি ৩১ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৬৮১ কোটি ১০ লাখ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৫ হাজার ৫৯৩ কোটি ৭ লাখ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি ১৬ লাখ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ২২৭ কোটি ১ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় খাতে ৪ হাজার ৯৬৪ কোটি ৫৫ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ১৬৫ কোটি ৬০ লাখ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৫১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৪ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ২ হাজার ২০৯ কোটি ৯০ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৫৭ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৭৩৮ কোটি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ১ হাজার ৯৮৪ কোটি ৬২ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৯১৪ কোটি ৬৬ লাখ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ২৭১ কোটি লাখ, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ১২০ কোটি ৫৫ লাখ ১২ হাজার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৯২ কোটি ৮০ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৮ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৪ হাজার ৩৮০ কোটি ২৪ লাখ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৬৩৮ কোটি ২৬ লাখ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ৭৪ লাখ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৩৮৩ কোটি ৬৭ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩০৯ কোটি ১৩ লাখ ৪৪ হাজার, বিদ্যুৎ বিভাগ ২২ হাজার ৯৩৫ কোটি ৮৬ লাখ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৭০ লাখ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৫৯৫ কোটি ২৫ লাখ, দুর্নীতি দমন কমিশন খাতে ১১৭ কোটি ৪৭ লাখ এবং সেতু বিভাগে ৯ হাজার ১১৪ কোটি ২ হাজার টাকা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে ৫ হাজার ৭০২ কোটি ৩৭ লাখ, সুরক্ষা সেবা খাতে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ খাতে বরাদ্দ ৫ হাজার ২২৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।
কেআই/এসি