ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ফরাসি দুর্গ কি ভাঙ্গতে পারবেন মেসি?

প্রকাশিত : ১১:৫২ এএম, ২৯ জুন ২০১৮ শুক্রবার

লুকাস হার্নান্দেজ, রাফায়েল ভারানে ও বেঞ্জামিন প্যাভার্ডের দুর্গ কি ভাঙ্গতে পারবে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। নাইজেরিয়ার দুর্গে ১৪ মিনিটেই ভাঙ্গন ধরিয়েছিলেন মেসি। সেই ধারাবাহিকতা কি ধরে রাখতে পারবেন। নাকি গ্রীজম্যান, এমবাপ্পে আর পল পগবা-এই ত্রয়ীর আক্রমণ উল্টো সামলাবে মাসচেরানো-ওঠামেন্ডিরা।

শনিবার সন্ধে সাড়ে সাতটায় নকআউটের প্রথম ম্যাচ আসলে এটাই। ফ্রান্সের শক্তি একটা দল হয়ে ওঠার ক্ষমতা। পল পোগবা, আন্তোনিও গ্রিজম্যান, অলিভার জিহু, ওসমানে দেম্বেলে, এমবাপের মতো মাঝারি তারকারা রয়েছেন ঠিকই। তাঁরা ক্লাবের হয়ে ধারাবাহিকও। কিন্তু, মহাতারকা কেউ নন। কোনও একজনের ওপর নির্ভরতাও নেই ফরাসি শিবিরে।

নীল-সাদা শিবিরে আবার মেসিই ধ্রুবতারা। তিনিই গোল করবেন, তিনিই গোলের পাস দেবেন। এবং তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সতীর্থরা বুঝতেই পারবেন না।

ইগুয়াইন গত বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো আবার একটার পর একটা সুযোগ নষ্ট করছেন। গত আট ম্যাচে গোল না করেও দিব্যি শুরু থেকে খেলছেন। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে মনে হচ্ছে অতীতের ছায়া। একসময় বিশ্বের সেরা উইঙ্গারদের মধ্যে ধরা হত তাঁকে। এখন সহজ পাসও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। হাভিয়ের মাসচেরানো আবার বক্সের মধ্যে জাপটা-জাপটি করে ফেলে দিচ্ছেন বিপক্ষকে। উপহার দিচ্ছেন পেনাল্টি। ডিফেন্ডার মার্কোস রোখোও বিপজ্জনক ভাবে পা চালাচ্ছেন বক্সের মধ্যে।

এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টনা মানেই দুর্বল রক্ষণ, ততোধিক অসহায় গোলকিপার, ভঙ্গুর মাঝমাঠ, নার্ভাস দেখানো স্ট্রাইকার। তবু এই দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা চলছে। লিওনেল মেসি আছেন না!

এলএম টেন মানেই সবুজ গালিচায় ফুটে ওঠা কবিতা। শিল্পের ফুল ফোটানো। একের পর এক ড্রিবলে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়া। কিন্তু, তিনি একা কি পারবেন বারবার খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করতে? সেরা ছন্দে তিনিও তো নেই। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম এক ডজন গোলমুখী শটে আসেনি সাফল্য। যা এসেছে ১৩তম প্রয়াসে, নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে অনবদ্য গোলে। খানিক পরের ফ্রি-কিকেও নিশ্চিত ছিল গোল, পোস্ট বাধা হয়ে না উঠলে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অবশ্য তেকাঠি নয়, জালে জড়ানোই নিশানা হতে হবে। না হলে নীল-সাদা জার্সির গোল করার লোক কোথায়!

একটাই ভরসা। মেসির শিবিরে রক্তমাখা মুখেও মরিয়া লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মাসচেরানো রয়েছেন। বানেগাকেও মাঝমাঠে সক্রিয় দেখাচ্ছে। কিন্তু ফিনিশং টাচ দেওয়ার লোক ওই একটাই। একমুখ দাড়ির মেসি।

ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশঁ নিশ্চয়ই কাজে লাগাতে চাইবেন আর্জেন্টিনার রক্ষণের দুর্বলতা। তাঁর হাতে গ্রিজম্যান, জিহুর মতো স্ট্রাইকার রয়েছে। গ্রিজম্যান দু’বছর আগে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বাধিক গোলদাতা হয়েছিলেন। ভেসে আসা বলে জিহুর সুনাম রয়েছে হেডে। ফ্রান্সের এমবাপে আর দেম্বেলে আবার অত্যন্ত দ্রুত গতির ফুটবলার। আর্জেন্টিনা কোচ হর্হে সাম্পাওলিকে তাই রক্ষণ নিয়ে ভাবতেই হবে। কর্নার, ফ্রি-কিক বা ক্রসের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতেই হবে ওটামুন্ডি, রোখোদের।

এর আগে মাত্র দু’বার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা। একবার ১৯৩০ সালে। পরেরবার ১৯৭৮ সালে। দু’বারই জিতেছে আর্জেন্টিনা। শনিবারও কি বজায় থাকবে সেই ধারা? হতেই পারে। তবে তার জন্য সতীর্থদের সহযোগিতা দরকার মেসির, দরকার হার-না-মানা লড়াইয়েরও। মেসি নিশ্চয়ই জিনিয়াস। কিন্তু, বারবার ত্রাণকর্তা হওয়া তাঁর পক্ষেও অসম্ভব। যতই প্রতিভা থাক, তিনিও তো মানুষ। ফুটবল খেলাও যে এগারো জনের, একার নয়!

মেসির ‘শত্রু’ এবার তাই ফরাসি সংহতি!

এমজে/