ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পেনাল্টি নিয়ে দুরকম মত: আরেকটি হ্যান্ড অব গড এর বিতর্ক

প্রকাশিত : ১২:০৮ পিএম, ২৯ জুন ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:০৫ পিএম, ২৯ জুন ২০১৮ শুক্রবার

আরেকটা হ্যান্ড অফ গড? ১৯৮৬-তে মারাদোনার পর ২০১৮-তে মার্কোস রোয়ো। এবং, এর পর ভিএআর নিয়ে আবার বিতর্ক। যা নিয়ে একদিন আগেই সরব হয়েছিল ইরান এবং মরক্কো। বড় দল বলেই কি পার পেয়ে গেল আর্জেন্টিনা? নাইজেরিয়ার মিডিয়ায় এই নিয়ে অবশ্যম্ভাবী ঝড় উঠেছে। সঙ্গে ব্রিটিশ মিডিয়ার একটা অংশও। যারা ‘হ্যান্ড অফ গড টু’ নামটা দিল।


নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে ১-১ অবস্থায় আর্জেন্টিনার বক্সে উঁচু বলে হেড দিতে ওঠেন রোয়ো। বল তাঁর মাথায় লেগে বাঁ হাতে লাগে। স্বাভাবিক কারণেই পেনাল্টির দাবি জানায় নাইজেরিয়া। রেফারি জুনেত জাকির ভিএআর দেখে সেই আবেদন নাকচ করেন। তারপরই গন্ডগোল। নাইজেরিয়ার জন ওবি মিকেল তর্ক জুড়ে দেন। পরিস্কার যুক্তি –যদি আগের দিন পর্তুগাল এবং ইরান ম্যাচে পেনাল্টি হতে পারে, তা হলে এটা নয় কেন? ম্যাচের পর মিকেল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে বলছিলেন, রেফারির বক্তব্য তাঁর ধোঁয়াশা লেগেছে। পেনাল্টি নাকচ হওয়ার পর মিকেল তার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন জাকিরকে। বললেন, “…আমার কাছে ওটা পরিষ্কার পেনাল্টি ছিল। যদি আগেরদিন পর্তুগাল ম্যাচ দেখেন, তা হলে বলব এটা আরও পরিষ্কার। আমরা পরে ড্রেসিংরুমেও দেখেছি। পরিষ্কার হ্যান্ডবল। রেফারিও তো স্বীকার করলেন, বলটা হাতে লেগেছিল। তা হলে কেন পেনাল্টি নয়? উনি জানি না বলে এড়িয়ে গেলেন। কেন আমরা জানতে পারব না? আমাদের জানার কোনও অধিকার নেই?”

রোয়োর হাতে বল লাগাটা আদৌ হ্যান্ডবল কি না সেই নিয়ে ভিএআরের ব্যবহার প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। একটা মত, রোয়ো হেড দিয়ে বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। বল তাঁর মাথায় লেগে হাতে লাগে। অতএব অনিচ্ছাকৃত। তাই হ্যান্ডবল নয়। তা হলে প্রশ্ন আগেরদিন যখন পর্তুগাল বক্সে ইরানের সর্দার আজমুনের হেড সেডরিকের হাতে লাগে, সেটাকে কেন হ্যান্ডবল ধরা হল? যার জেরে পেনাল্টি থেকে গোল দেয় ইরান। অর্থাৎ, হুবহু একই ঘটনার জন্য দু’দিন দু’রকম সিদ্ধান্ত। এজন্যই ইরান কোচ কুইরোজ দাবি করেছিলেন স্বচ্ছতার। বলেছিলেন, “…হাই টেক সুবিধা ভাল। কিন্তু, আমাদের জানা দরকার আসল সিদ্ধান্তটা কে নিচ্ছেন? বা কীভাবে নেওয়া হচ্ছে? কোথাও কোনও গাইডলাইন আছে কি?” ফিফার কাছে আপাতত উত্তর নেই।


কাকতালীয় হয়তো, কিন্তু এটাই ঘটনা যে এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভিএআরের সিংহভাগ সুবিধা বড় দলগুলো পেয়েছে। রোনাল্ডোর মতো তারকা যেমন লাল কার্ড দেখা থেকে রেহাই পেয়েছেন। ঠিক তেমনই তথাকথিত অনামী দলগুলোর আবেদন গ্রাহ্য করা হয়নি। কিংবা অজানা কোনও কারণে তাদের দাবি নাকচ হয়েছে। যেমন বুধবার মেক্সিকো এবং সুইডেন ম্যাচে হল। মেক্সিকোর বক্সের মধে্যই বল হাতে লাগে হেভিয়ার হার্নান্ডেজের। ভিএআরেও সেটা দেখা গেল। কিন্তু, হ্যান্ডবল দেওয়া হল না।
এ ব্যাপারে ক্রিকেটে ডিআরএস ব্যবহারের পরিষ্কার একটা গাইডলাইন দেওয়া থাকে। যেটা মেনেই তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন। ভিএআরের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত তেমন স্পষ্টতা কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু হ্যান্ডবলের ক্ষেত্রে ফিফার একটা নিয়মাবলী উল্লেখ করা হয়েছে – (১) দেখতে হবে বলের দিকে হাতের মুভমেন্ট (হাতের দিকে বলের মুভমেন্ট নয়), (২) বল থেকে প্রতিপক্ষর দূরত্ব। পর্তুগাল ম্যাচে বল থেকে প্রতিপক্ষর দূরত্ব বেশি না থাকলেও উলটো দিকে ছিল। আর্জেন্টিনা ম্যাচে কিন্তু বল ঠিক পিছনেই দাঁড়ানো নাইজেরিয়া প্রতিপক্ষর দিকে যাচ্ছিল। তবে পর্তুগাল ম্যাচ হোক, কিংবা নাইজেরিয়া, অথবা বুধবার সন্ধ্যায় সুইডেন ম্যাচ – তিনটে ক্ষেত্রেই বল হাতে লাগে সংশ্লিষ্ট ফুটবলারের। কিন্তু, তার সঙ্গে তিন ক্ষেত্রেই হাতও মুভ করেছিল। সেটা হয়তো শরীরের ভারসাম্য রাখার কারণে। কিন্তু, তাতে বিতর্ক যাচ্ছে না। কারণ, কী করে একটা ক্ষেত্রে পেনাল্টি, আরেকটা ক্ষেত্রে নয়? আর কাকতালীয়ভাবে অপেক্ষাকৃত অনামী দলগুলোকেই ভুগতে হচ্ছে। পর্তুগাল ম্যাচে অবশ্য ইরান পেনাল্টি পায়। তবে সেটা নাকি রোনাল্ডোকে লাল কার্ড না দেখানোর সিদ্ধান্তটা চাপা দেওয়ার জন্য।

এমজে/