জানা-অজানায় বিশ্বকাপ
প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ১ জুলাই ২০১৮ রবিবার
বিশ্বকাপ ২০১৮’র আয়োজক দেশ রাশিয়া। দীর্ঘ চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত এ খেলার আয়োজন ও প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ফাইনাল খেলা ও কাপ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ পর্যন্ত রয়েছে অনেক ঘটনা। যার কোনটা সহজেই জন সম্মুখে আসে। আবার কোনটা রয়ে যায় সবার অগোচরে। বিশ্ব ক্রিড়া জগতের এ বৃহৎ আয়োজনে ঘটে যাওয়া সব ধরণের ঘটনা জানতে তাই ফুটবল প্রেমীদের আগ্রহের কমতি নেই।
রাশিয়া আসর: এবারের আয়োজক দেশ রাশিয়া এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলেছে ১১ বার। তবে এ পর্যন্ত দেশটির সর্বোচ্চ অর্জন ছিল ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলা। এটি ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবল। প্রথম বিশ্বকাপ হয়েছিল উরুগুয়েতে, ১৯৩০ সালে। ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলছে না ইতালি। এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলছে উত্তর আইসল্যান্ড ও পানামা। জিম্বাবুয়েকে এবার বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকেই বাদ দিয়েছিল ফিফা কর্তৃপক্ষ। কারণ দলটি তার কোচের পারিশ্রমিক দেয়নি।
মাত্রিয়োশকা পুতুল: এবারের বিশ্বকাপের লোগোটি এক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। রুশ লোককথায় থাকা পুতুল মাত্রিয়োশকা ও একটি আগুনে পাখির আদলে তৈরি করা হয়েছে কাপের নকশা। এবারের বিশ্বকাপের লোগো উন্মোচন হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর। তবে দুনিয়ায় হয়নি সেটি। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের নভোচারীরা স্টেশনের ভেতর ভাসতে থাকা অবস্থায় লোগো উন্মোচন করেছিলেন। সেটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল মস্কোর বলশয় থিয়েটারে।
প্রতিবার বিশ্বকাপে যে বলটি দিয়ে খেলা হয়, তার একটি দশাসই ব্র্যান্ড নাম থাকে। ২০১৪ সালে খেলা হয়েছিল অ্যাডিডাসের ব্রাজুকা দিয়ে। তার আগের অর্থাৎ ২০১০ সালের ফুটবলটার নাম ছিল জাবুলানি। এবার যে বলটি দিয়ে খেলা হচ্ছে তার নাম টেলস্টার-১৮। বলটি তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে। আর এটি হলো থার্মো বন্ডেড। অর্থাৎ এর প্যানেলগুলো জোড়া লাগানো হয়েছে তাপ দিয়ে।
বাথরুমে আটকা পড়েছিলেন: মেসির বন্ধু হুয়ান লেগুইযামোর ঝুড়িতে আছে মেসিকে নিয়ে এক মজার গল্প। রোজারিও শহরে একবার খেলছে মেসির দল। জিতলে পুরস্কার বাইসাইকেল। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পরও দেখা নেই মেসির। লেগুইযামো বলেন, খেলার প্রথমার্ধ শেষ। আমরা ১-০ গোলে পিছিয়ে। তখন এলো মেসি। ঘটনা হলো, বাথরুমে আটকে পড়েছিল ও। দরজা ভেঙে বের করে আনতে হয়েছিল। ওই খেলায় আমরা ৩-১ গোলে জিতেছিলাম। মেসি একাই তিন গোল দিয়েছিল। আরেকটি মজার ঘটনা হলো, বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির প্রথম চুক্তি হয়েছিল টিস্যু পেপারে। কারণ তখন হাতের কাছে কোনো কাগজ ছিল না। ক্লাবটির একজন প্রতিনিধি তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সময় নষ্ট না করে দ্রুত চুক্তি করেন।
এক তোশকে পুরো পরিবার: ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না নেইমারের। বরং পাওয়ার রেঞ্জার্স কমিক বইয়ের সুপারহিরো হতে চাইতেন। পরিবার ছিল হতদরিদ্র। দাদাবাড়িতে একটি মাত্র তোশকে গাদাগাদি করে ঘুমাত তার পুরো পরিবার। বাড়িতে প্রায়ই থাকত না বিদ্যুৎ। জ্বলত মোমবাতি। বাবা চাকরি করতেন। খেলা দেখার সুযোগও পেতেন না নেইমার।
যে কারণে স্প্যানিশ শিখলেন: ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ। খেলেন মেসির সঙ্গে বার্সেলোনায়। একবার সেভিয়ার হয়ে খেলতে গিয়ে দেখা পান রেকেল নামের এক মেয়ের। প্রথম দেখায় প্রেম। কিন্তু কিছুই বলা হয়নি মুখ খুলে। বলবেন কী করে! রাকিতিচ তো স্প্যানিশই জানেন না! এরপরই শুরু স্প্যানিশ শেখার চেষ্টা। শেষে ভাষাটি রপ্ত করে প্রস্তাব দিলেন রেকেলকে। রেকেল রাজি হলেন না। অন্তত ৩০ বার প্রত্যাখ্যান করলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল—‘তুমি ফুটবলার। হয়তো অন্য কোনো দেশে অন্য কোনো ক্লাবে চলে যাবে হুট করে। অতএব, না।’ কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নন রাকিতিচ। সে জন্য একটি বিষয় নিশ্চিত করলেন আগে। তা হলো, সেভিয়ার সঙ্গে ভালো খেলে জায়গা পাকাপোক্ত করা। যাতে সেভিয়া ক্লাব তাঁকে বিক্রি না করে। এভাবে লেগে থাকা রাকিতিচকে ফেরাতে পারেননি রেকেল। এখন এই দম্পতির সংসারে দুই কন্যাসন্তান আছে। রাকিতিচের মতে, স্ত্রীর মন জয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার চেয়ে কঠিন।
গল্পকার গ্রিজম্যান: ফ্রান্সের স্ট্রাইকার আন্তোনি গ্রিজম্যান। শুধু গোল করাই তার কাজ নয়। শিশুদের জন্য গল্পও লেখেন। তার একটি বইয়ের নাম ‘গোল’। গ্রিজম্যান বলছিলেন, ব্যক্তি ও খেলোয়াড় হিসেবে আমার যে আদর্শ, তা আমি শিশুদের জানাতে চাই। ছোটবেলায় আমি যদি বেকহ্যাম বা জিদান সম্পর্কে এমন বই পেতাম, নিশ্চয়ই পড়তাম।
বন্ধুর আত্মত্যাগ: পর্তুগালের ফুটবলতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল এক বন্ধুর আত্মত্যাগে। বিষয়টি হাসিমুখেই স্বীকার করেন রোনালদো। ছোটবেলার বন্ধুটির নাম আলবার্ট ফানত্রো। দুজন জুনিয়র টিমে খেলতেন। তখন স্পোর্টিং লিসবন ক্লাবের জন্য তরুণ খেলোয়াড় খুঁজতে এক কর্তা আসেন। তিনি জানান, আজ খেলায় যে সবচেয়ে বেশি গোল করবে, তাকেই তিনি মনোনীত করবেন। শুরু হলো খেলা। দুই বন্ধু একটি করে গোল করলেন। এরপর ফানত্রো এক মোক্ষম সুযোগ পেলেন। তবে নিজে গোল না দিয়ে বল পাস দিলেন রোনালদোকে। ফাঁকা বারে গোল দিতে ভুল করেননি রোনালদো। চলে এলেন স্পোর্টিং লিসবন ক্লাবে।
আরকে//