আপনারা আমার সংসারটা বাঁচান: শ্রাবন্তী
প্রকাশিত : ০৬:০৬ পিএম, ১ জুলাই ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১০:৫৯ পিএম, ১ জুলাই ২০১৮ রবিবার
ছোট পর্দার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তীর সংসার ভাঙ্গনের মুখে। স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম গত ৭ মে তার নামে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু তালাক নিয়ে শ্রাবন্তী বলছেন অন্য কথা। তিনি চান তার সংসার টিকে থাকুক। তার ভাষায়, আপনারা আমার সংসাটা বাঁচান, আমি সংসার ভাঙতে চাই না।
শ্রাবন্তীর বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্র। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি সেখানেই থাকেন। গত ২৫ জুন তিনি দেশে ফিরেছেন। থাকছেন বগুড়ায়। তার মা গুরুতর অসুস্থ। লিভার সিরোসিতে ভুগছেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই স্বামীর পাঠানো তালাকের এই নোটিশের খবর পেয়েছেন শ্রাবন্তী। এরপর দ্রুত দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দেশে এসেছেন। তাঁদের বড় মেয়ে রাবিয়াহ আলমের বয়স সাত আর ছোট মেয়ে আরিশা আলমের সাড়ে তিন বছর।
শ্রাবন্তী অভিযোগ করে বলেন, ‘২৫ জুন দেশে আসার পর আমি রামপুরা বনশ্রীতে আলমের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু আমাকে আর বাচ্চাদের বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢাকায় আমার নিজের কোনো বাসা নেই। শেষে পরিচিতদের সহযোগিতায় এক মামাতো ভাইয়ের বাসায় যাই। এরপর এখন পর্যন্ত আলম আমার সঙ্গে, এমনকি বাচ্চাদের সঙ্গেও দেখা করেনি। বাচ্চাদের কোনো খোঁজ নেয়নি। গত এপ্রিল মাসে আলম যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ওই সময় আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। আমার দুই বাচ্চা সেখানে সরকারের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পায়। আলম আমাকে না জানিয়ে ব্যাংক থেকে সেই ছয় হাজার ডলার তুলে নিয়ে আসে। সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে চলব, কী খাওয়াব, তা ভাবেনি। ও বাচ্চাদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে।’
দেশে ফেরার পর স্বামী খোরশেদ আলমের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন শ্রাবন্তী। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। গতকাল শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘কেন এমন করছ? দাও না আমাদের মাফ করে। এক ঘর দরকার নাই, কিন্তু এক ছাদের নিচে থাকি আমরা। বাচ্চাদের প্রতি একটু দয়া করো।’
শ্রাবন্তী আরও লিখেছেন, ‘তুমি তো প্রতিজ্ঞা করেছিলে, কখনো ছেড়ে যাবে না। এখন কেন ছেড়ে গেছ? আমাদের বাচ্চাদের ভাঙা পরিবারে বড় হতে দিয়ো না। আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি, আমাদের বাচ্চাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়ো না।’
বগুড়া থেকে ৪ জুলাই মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফিরবেন শ্রাবন্তী। এরই মধ্যে গত ২৬ জুন রাজধানীর খিলগাঁও থানায় তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আর যৌতুকের মামলা করেছেন।
খোরশেদ আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পাশাপাশি তিনি এনটিভির মহাব্যবস্থাপক (অনুষ্ঠান) ছিলেন। কাজ করেছেন চ্যানেল নাইনে। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পেয়েছেন।
খোরশেদ আলম বলেন, ‘অনেক ছাড় দিয়ে আমি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেছিলাম। ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের দুটি বাচ্চা হয়েছে। শ্রাবন্তীর যেসব ব্যাপারে ছাড় দিয়েছি, তা থেকে শ্রাবন্তী এতটুকু সরে আসেনি। এত দিন আমি ব্যাপারগুলো সামনে আনতে চাইনি, কারণ তা আমাদের কারও জন্যই ভালো হবে না। দিনে দিনে আমাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস নেই বললেই চলে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা শেষ হওয়ার আগেই আমি সরে এসেছি। আমি চাইনি আমাদের সম্পর্কের ক্ষতিকর প্রভাব বাচ্চাদের ওপর পড়ুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রাবন্তীর বোন আর দুলাভাইয়ের সঙ্গে বসেছি। অনেক কথা হয়েছে, নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।’
এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে শ্রাবন্তী অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আরেকটি মেয়ে চলে এসেছেন। সেই মেয়েটি মালয়েশিয়ায় থাকেন। আগে এনটিভিতে অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও বিবাহিত। এখন আলমের সঙ্গে প্রেম করছেন। সেই মেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছেন শ্রাবন্তী। তার স্বামীকেও নাকি সবকিছু জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, ‘এরপর আলমের আচরণ পাল্টে যায়। এসব নিয়ে কথা বলায় আলম আমাকে মারধরও করেছে।’
পরকীয়ার অভিযোগের ব্যাপারে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তখন ওই মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। এর বেশি কিছু না। শ্রাবন্তী এ ব্যাপারকে বড় করে দেখেছে।’
স্বামীর বিরুদ্ধে শ্রাবন্তীর নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় খিলগাঁও থানায়। খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান বিপিএন বলেন, ‘শ্রাবন্তী যে মামলা করেছেন, তাদের দুজনেরই সামাজিক একটা অবস্থান রয়েছে। তাই দুই পরিবারের লোকজন বসে এ ব্যাপারে আপস-মীমাংসা করতে পারে। সেটা দুজনের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। তা না হলে জটিলতা বাড়বে।’
এসি