গোল চাই শুরুতেই, জিতে এসো নেইমার : জিকো
প্রকাশিত : ১১:৩২ এএম, ২ জুলাই ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ২ জুলাই ২০১৮ সোমবার
মেক্সিকোর রক্ষণভাগ খুবই ভালো। ব্রাজিলকে আগে গোল করে মেক্সিকোকে রক্ষণের খোলস থেকে বার করে আনতে হবে। তা হলেই ম্যাচটা ধরে নেবে ব্রাজিল। এমনটিই মনে করেন ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার জিকো।
তবে তিনি এও মনে করেন, মেক্সিকোর শক্তিশালী রক্ষণভাগ ভেদ করার ব্রাজিলের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিংই হতে পারে। কারণ ব্রাজিলের স্ট্রাইকাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। বিশেষ করে নেইমার। এই কিংবদন্ত কেমন জানি হারিয়ে গেছেন। ফিনিশারের কাজটা ঠিকমতো করতে পারছেন না। গত ম্যাচে বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছেন। ভারতের পাঠকপ্রিয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারে লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এসব কথা লিখেন জিকো। নিবন্ধের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
এই বিশ্বকাপ থেকে ইতোমধ্যেই বিদায় নিয়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা। নেদারল্যান্ডস যোগ্যতা অর্জন পর্বেই ছিটকে গিয়েছে। তাই সবার চোখ এখন ব্রাজিলের উপরেই।
আগের বিশ্বকাপে শেষ চারে ওঠা দলগুলোর মধ্যে ওরাই একমাত্র টিকে আছে। ব্রাজিল এ বার যে দলের বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে নামছে, সেই মেক্সিকোর ডিফেন্স খুব ভাল। তবে শেষ ম্যাচে সুইডেনের কাছে ০-৩ হেরে বড় ধাক্কা খেয়েছে ওরা।
মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ম্যাচটার কথায় আসি। আমি জানি, ওরা আগের বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে গ্রুপ পর্বে হারিয়ে এসেছে। তা-ও বলব, সামারায় মেক্সিকোকে হারাতে সমস্যায় পড়বে না ব্রাজিল।
একটা কথা শুধু বলতে চাই। মেক্সিকোর গোলরক্ষক ওচোয়ার বিরুদ্ধে শুরুতেই গোল করে ওর আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা দিতে হবে। ব্রাজিলকে আগে গোল করে মেক্সিকোকে রক্ষণের খোলস থেকে বার করে আনতে হবে। তা হলেই ম্যাচটা ধরে নেবে ব্রাজিল।
একটু পরিসংখ্যান ঘাঁটছিলাম। দেখলাম, মেক্সিকোর সঙ্গে ৫০ বার দেখা হয়েছে আমাদের। জিতেছি ২৩ বার, হেরেছি ১০ বার।
এছাড়া মেক্সিকো কখনও বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর বেশি যেতে পারেনি। আমার মনে হয়, ছোটখাটো দু’একটা পরিবর্তন বাদে মোটামুটি আগের ম্যাচের দলই খেলাবে ব্রাজিল।
মার্সেলোর জায়গায় খেলতে পারে ফিলিপে লুইস। শুনলাম, ডগলাস কোস্তা সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, নেইমারের সঙ্গে উপরে উইলিয়ান আর জেসুসকেই খেলাবে তিতে।
আমার একটাই চিন্তা পাগেনারকে নিয়ে। আমার দলের এই রাইট ব্যাক আক্রমণের নেশায় মাঝে মাঝেই উপরে উঠে যায়। তখন কিন্তু উইলিয়ান নীচে নেমে ওই জায়গাটা সামলাতে পারছে না।
বিপক্ষের প্রতি-আক্রমণের সময়ে যা সমস্যা তৈরি করতে পারে। ওই সময়ে দেখছি, উইং থেকে প্রচুর ক্রস আসছে ব্রাজিলীয় বক্সে। যা সামলানোর কথা ভাবতে হবে তিতেকে। মেক্সিকো কিন্তু ব্রাজিলকে ওদের অর্ধে আসতে দেবে আর তার পরে প্রতি-আক্রমণে গিয়ে উইং থেকে ক্রস বাড়াবে।
ব্রাজিল খুব সম্ভবত ৪-১-২-২-১ ছকে শুরু করবে। তার পরে শুরুর দিকে গোল করতে পারলে, সেই ছক পাল্টে হয়ে যেতে পারে ৪-৩-২-১। বা ম্যাচের পরিস্থিতি দেখে ৪-৩-৩ ছকেও যেতে পারে।
এই ম্যাচে ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের মাথা খুব ঠান্ডা রেখে খেলতে হবে। থিয়াগো সিলভাকে এ ব্যাপারে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হবে। তাছাড়া কোনো ভাবেই কার্ড দেখা চলবে না। তবে মেক্সিকোকে হাল্কাভাবে নিলে চলবে না।
এবারের বিশ্বকাপ বুঝিয়ে দিচ্ছে, তথাকথিত শক্তিশালী এবং দুর্বল দেশগুলোর মাঝখানের বিভাজন রেখা ক্রমে ফিকে হয়ে আসছে। ফুটবলের বড় দলগুলো ছোট দলের বিরুদ্ধে যে সুবিধেটা ভোগ করত, তা এখন সে ভাবে করতে পারছে না।
এর উপরে যোগ হয়েছে ভিডিও প্রযুক্তি (ভার)। যা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ধারণা হল, অদক্ষ রেফারিদের সাহায্য করার কাজটাই বেশি করছে ‘ভার’। কিন্তু এটাও বলতে হবে, দিনের শেষে প্রযুক্তি আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তেই পৌঁছে দিচ্ছে।
যেভাবে এই বিশ্বকাপটা এগোচ্ছে, তাতে আমি ব্রাজিলের সামনে রাস্তাটা বিশেষ কঠিন দেখছি না। যদিও খাতায় কলমে নক-আউট পর্বে ব্রাজিল শক্ত দিকেই পড়েছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আমি বলেছিলাম, তিতের এই দলটাকে দেখে নেওয়ার জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত প্রতিপক্ষ হল সার্বিয়া। ব্রাজিলীয়রা সেই পরীক্ষায় উতরে গিয়েছে।
এরপরে মেক্সিকোকে হারালে বেলজিয়াম বা জাপানের সামনে পড়বে। যা আমার মনে হয় ব্রাজিলের সেমিফাইনালে যাওয়ার সেরা রাস্তা। আমি নিশ্চিত, উরুগুয়ে বা ফ্রান্সের বদলে যে মেক্সিকোকে খেলতে হচ্ছে, তার জন্য খুশিই হবে ব্রাজিল।
সূত্র : আনন্দবাজার।
/ এআর /