‘সন্তানের লাশ ফেলে পালাতে হয়েছিল’
প্রকাশিত : ০৩:৪০ পিএম, ২ জুলাই ২০১৮ সোমবার
মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন রোহিঙ্গারা। জীবন বাঁচাতে তাদের ত্যাগ করতে স্বজনসহ দুনিয়ার সবকিছু। সেনাবাহিনীর বর্বরতায় শিশু সন্তানের মরদেহকে পেছনে রেখেও পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন তারা। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মিররের এক সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এইসব কথা।
‘আমি জঙ্গলে লুকিয়েছিলাম। যাত্রাপথে খাওয়ার জন্য খাবার আনতে আমার স্বামী বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলো সেনারা। প্রথমে তারা তাকে গুলি করলো এবং একটি চাপাতি দিয়ে গলা কেটে দিলো। তারা আরও অন্তত ৩০ জন পুরুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলো। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে আমরা চারদিন ধরে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে, না খেয়ে শুধু দৌড়াতে লাগলাম।’ ১৪ মাস বয়সী মেয়েকে কোলে দোলাতে দোলাতে দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করছিলেন রোহিঙ্গা নারী ফাতিমা। মিররকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, জীবন বাঁচাতে কিভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন।
২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা। ফাতিমা তাদেরই একজন।
মিররের বিশেষ প্রতিনিধি টম প্যারোরের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ফাতিমাই নন, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সব গল্পই দুঃসহ। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হওয়ার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা কল্পনাতীত। যেন কোনও বিদঘুটে স্মৃতির বয়ান করছেন তারা। রোহিঙ্গারা জানায়, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বহু পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। অমসৃণ সে যাত্রাপথেও অনেকে হয়েছেন স্বজনহারা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে এসেছিলেন মিররের বিশেষ প্রতিনিধি প্যারোর। সে সময় তিন সন্তানকে নিয়ে মাটির মেঝেতে শুয়ে ছিলেন ২৭ বছর বয়সী নাজিমা। দেখে তাদেরকে ক্লান্ত নিস্তেজ মনে হচ্ছিলো। নাজিমা বলেন, তার স্বামী এখনও মিয়ানমারে আছে। নৌকায় ওঠার সময় সেনারা পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে নিয়ে গেছে। নাজিমা জানান, যারা পালাতে চাইছিলো তাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে স্নাইপারধারীরা। এভাবে হাজার হাজার নারীকে স্বামীহারা হতে হয়েছে। ৮ মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মদ ও ১৮ মাস বয়সী মেয়ে মাহিয়াকে নিয়ে শিশুদের জন্য তৈরি প্লাস্টিকের একটি চেয়ারে বসে ছিলেন ২০ বছর বয়সী আমিনা। তিনি জানান, রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে যখন পালিয়েছেন, তখন আট মাসেরও বেশি সময়ের গর্ভাবস্থা চলছিলো।
আরকে//