গুহার ভেতর কী টিকে থাকতে পারবেন সেই ফুটবলাররা?
প্রকাশিত : ০৯:২৮ এএম, ৫ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:২৮ এএম, ৫ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার
থাইল্যান্ডের একটি গুহায় আটকাপড়া ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচের অবস্থা ভালো আছে বলে জানানো হচ্ছে। একটি ভিডিওতে তাদের বর্তমান চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের গা গরম রাখার জন্য ফয়েলের কম্বল দেয়া হয়েছে - ভিডিওতে দেখা যায়, সেটা গায়ে জড়িয়ে তারা বসে আছে। তাদের কারো কারো গায়ে আঁচড় লেগেছিল - একজন সামরিক ডাক্তার তার চিকিৎসা করেছেন।
উদ্ধারকারীরা নানা পরিকল্পনার কথা বিবেচনা করছেন, তবে থাই সেনাবাহিনী বলেছে এমনও হতে পারে যে আটকাপড়া দলটিকে উদ্ধার করতে চার মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এই কিশোররা যেন তাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে সে জন্য গুহায় টেলিফোন লাইন বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ চেষ্টা সফল হয় নি। তাদের উদ্ধার করার কোন উপায় এখনো ঠিক হয় নি। উদ্ধারকারীরা এখনো নানা বিকল্প বিবেচনা করছেন।
যদি সত্যি তাদের উদ্ধার করতে কয়েক মাস লেগে যায় - তাহলে মাটির প্রায় এক কিলোমিটার নিচে ওই অন্ধকার গুহায় এই বাচ্চারা কিভাবে এত দিন টিকে থাকবে?
আটকাপড়া দলটির কাছে ইতিমধ্যে খাদ্য আর চিকিৎসা পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তাদের মনের ওপর এই গুহাবন্দী অবস্থার কি প্রভাব পড়বে?
অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০১০ সালে চিলিতে একটি খনিতে একদল শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন, যাদের প্রায় ৭০ দিন পরে পাহাড়ে সুড়ঙ্গ কেটে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু থাইল্যান্ডের ঘটনাটি তার তুলনায় ভিন্ন কারণ, আটকা পড়াদের একজন বাদে সবাই একেবারেই বাচ্চা ছেলে। অবরুদ্ধ অবস্থায় তারা ভীত, অস্থির এবং মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে উঠতে পারে।
এ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে মন খুলে কথা বলা এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ তাদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে - বলছিলেন লন্ডনে শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. আন্দ্রেয়া ডানিজ। এ কথা ভেবেই গুহাটিতে টেলিফোন সংযোগ দেবার ব্যবস্থা করছে থাই কর্তৃপক্ষ। তার আগে পর্যন্ত দুজন করে ডুবুরি দলটিকে সঙ্গ দেবেন।
আলোর অভাব
অবরুদ্ধ অবস্থায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো আলোর অভাব। গুহাটির ভেতরে দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝার মতো আলো নেই, তাই মানুষের দেহ-ঘড়ির ছন্দ তখন নষ্ট হয়ে যায়। এতে যে শুধু ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে তাই নয়, তাদের মানসিক অবস্থা, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজও বিঘ্নিত হয়।
তবে যেহেতু তারা একটা দলে আছে তাই হয়তো টিকে থাকার জন্য তাদের মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে উঠবে - বলছিলেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডোনেলসন আর. ফরসাইথ। তিনি বলছিলেন, তাদের মধ্যে পরস্পরকে দোষ দেয়া, নৈরাশ্য, ক্রোধ বা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দেখা দিতে পারে কিন্তু তাদের একটি দলে খেলার অভিজ্ঞতা তাদের ঐক্যের জন্য সহায়ক হতে পারে।
এ কিশোরদের উদ্ধার করার পরেও তাদের মনের ওপর এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেল্থের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর স্যান্ড্রো গালিয়া বলছেন, যে শিশুরা এই পর্যায়ের ট্রমা বা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয় - তাদের পরবর্তীতে বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, মুড ডিজঅর্ডার বা হঠাৎ রেগে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবার ঝুঁকি আছে।
সূত্র: বিবিসি
এমজে/