ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

কম ঘুমে বিপদ আনবে শরীর ও মনে

প্রকাশিত : ১০:৪৯ পিএম, ৫ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৫০ পিএম, ৫ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার

কিছু মানুষ আছেন, যারা দিনের পর দিন ৩–৪ ঘণ্টা ঘুমাতে অভ্যস্ত। কম ঘুমের পরেও সবকিছু খুব ভালভাবেই সামল দিয়ে যাচ্ছেন ৷

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘কম ঘুমিয়ে সব দিক বজায় রাখতে পারেন তারাই যাদের কম ঘুমোনোর অভ্যাস ৷ চেষ্টা করে খুব একটা কিছ করা যায় না ৷ একজন মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে হলে প্রতিদিন অন্তত, ৬–৮ ঘণ্টা নিশ্ছিদ্র ঘুম প্রয়োজন ৷ তা না হলে কম ঘুমের প্রভাব পড়ে পুরো শরীরজুড়ে৷

শরীর স্বাস্থ্য মন, সব ছন্ন ছাড়া হয়ে যায় ৷ শরীরে বসে যায় স্ট্রেস হরমোনের মেলা ৷ তার হাত ধরে কিছু অসুখ বিসুখের ডালপালা মেলতে থাকে ৷ কাজেই শরীর যতটুকু চায় ততটুকু ঘুমোন,ঘুমের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা ঠিক নয়৷’

কম ঘুম ও অসুখ–বিসুখ

হৃদরোগের আশঙ্কা বা রোগ থাকলে তার প্রকোপ বাড়ে৷

বাড়তে পারে রক্তচাপ ৷ সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ভালো করে না ঘুমোলে শরীরে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি অনেক কম তৈরি হয় এবং তার ফলে ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ে৷

কম ঘুমের মূলে যদি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম নামে ঘুমের মধ্যে থেকে থেকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো জটিল অসুখের হাত থাকে, যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে তা থেকে ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার, হৃদরোগ ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা খুব প্রবল ৷

যারা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম ঘুমান তাঁদের সাধারণ জ্বর-সর্দি–কাশি বেশি হয়৷ যার অন্যতম কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ৷

দিনের পর দিন কম ঘুমালে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষমতা কমে যায় ৷ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোলের পরিমাণ বেড়ে শুধু যে মন মেজাজ খারাপ হয় এমন নয়, বিঘ্নিত হয় লেপটিন ও ঘ্রেলিন হরমোনের মধ্যেকার তালমিল৷ সবের যোগ-সাজসে খিদে বাড়ে ৷ বাড়ে খাওয়ার তাগিদ ৷ টুকটাক এটা সেটা খেতে থাকেন মানুষ৷ চা–কফি–মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে বাড়ে৷ খাবারের পরিমাণও বাড়ে কখনও৷ আর কম ঘুমের প্রভাবে ক্লান্ত শরীর–মন বিপদ বুঝেও সে সব সামলাতে পারে না সব সময় ৷ ওজন বাড়তে থাকে৷

খারাপ হয় জীবনযাপনের মান সারাদিন ধরে যে যে তথ্য পায় ব্রেন, ঘুমের সময় হয় তার ঝাড়াই–বাছাই ৷ কোন তথ্য মনে রাখতে হবে, কোনটা ভুলতে হবে, কোন তথ্যের সুদূরপ্রসারী ফল কী, কোন কোনটা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত,  কোন তথ্যকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে ইত্যাদি ৷ কম ঘুমোলে এ কাজে গোলমাল হয়ে যায় স্মৃতিশক্তি, বিচার ক্ষমতা আচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে৷ কমতে পারে সৃজনশীলতা ৷ ফলে কাজের মান খারাপ হতে থাকে ৷

মানসিক চাপ বাড়লে যেমন ঘুম কমে যায়, উল্টোটাও একই ভাবে সত্যি৷ কম ঘুমের হাত ধরে শারীরিক–মানসিক চাপ বাড়ে৷ ক্লান্তিতে, বিরক্তিতে জেরবার হন মানুষ৷ স্বচ্ছভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারেন না৷

কম ঘুমের ক্লান্তি থেকে আগ্রহ কমে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনযাপনে৷ তার হাত ধরে শুরু হয় পারিবারিক ও সামাজিক আরও একগুচ্ছ উপসর্গ। লাবণ্য কমাতে, অকালে বলিরেখা ফেলতে, চুলের জৌলুস কমাতে, অর্থাৎ শরীর জুড়ে বয়সের ছাপ ফেলতে কম ঘুমের কোনও জুড়ি নেই৷ কাজেই ঘুমের সঙ্গে অসহযোগিতা নয়৷

ভাল করে ঘুমোন৷ মন খারাপ, শরীর খারাপ, কাজের চাপ, বদভ্যাস ইত্যাদি যা যা কারণে ঘুম নষ্ট হয় বলে মনে হয়, সে সবের সমাধান খুঁজে বার করুন৷ করে সেই পথে চলুন৷ তাতে কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷

কোনও সমস্যা নেই, শুধু বেশি ঘুমোতে চান না বলে যদি কম ঘুমোনোর অভ্যাস তৈরি হয়, যত তাড়াতাড়ি পারেন সেই অভ্যাস ঝেড়ে ফেলুন৷ কারণ শরীর ও মনকে ভাল রাখার জন্য ঘুমের মতো ওষুধ খুব কমই আছে৷

সূত্র: আনন্দবাজার।

কেআই/ এসএইচ/