ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

ভরণ পোষণে খসড়া বিধিমালা

পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা যাবে পিতা-মাতাকে

প্রকাশিত : ০৭:৩৫ পিএম, ৬ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার

‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালার’ খসড়া করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। খসড়ায় কোনো সন্তান তার মা-বাবাকে সঙ্গে রেখে ভরণ-পোষণ করতে না পারলে সরকারি-বেসরকারি ‘পরিচর্যা কেন্দ্রে’রেখে পরিচর্যার সুযোগ পাবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও সংস্থা) রূপন কান্তি শীল বলেন, অংশীজনদের মতামত নিয়ে শিগগিরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।
এছাড়া খসড়া বিধিমালা নিয়ে মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের মতামত পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান।

খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মা-বাবার সন্তান জীবিত না থাকলে বা তাদের ভরণ-পোষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ কমিটি’ তাদের পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠাবে। পরিচর্যা কেন্দ্রে তাদের কীভাবে রাখা হবে তা ঠিক করা হবে নীতিমালা করে। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সহায়তা নিয়ে ভরণ-পোষণ তহবিল নামে একটি তহবিল গঠনের রূপরেখাও বিধিমালায় দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে করা ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’ এর নির্দেশনা অনুসারে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা’র এই খসড়া তৈরি করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২৫ পৃষ্ঠার এই খসড়া বিধিমালায় পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিয়ে সাতটি কমিটি প্রস্তাব করে তাদের কার্যবলী ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। পিতা-মাতার আচরণবিধির পাশাপাশি সন্তানের আচরণবিধি নির্ধারণ করে দিয়ে খসড়া বিধিমালায় পিতা-মাতার জন্য সন্তানদেরকে কী কী করতে হবে আর কী করা যাবে না- সেসব বিষয় বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করবে। সন্তান একাধিক হলে মা- বাবা কার কাছে থাকবেন, সে বিষয়ে তাদের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সন্তান একজন হলে এবং কোনো উপযুক্ত কারণে একত্রে বসবাস করা সম্ভব না হলে আলোচনার মাধ্যমে বা ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ কমিটি’ নির্ধারিত অর্থ মা- বাবাকে দিতে হবে।

একাধিক সন্তান থাকলে এবং উপযুক্ত কারণে তারা একত্রে বসবাস না করলে পিতা-মাতার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্ধারণ করে প্রত্যেক সন্তান সম্মিলিতভাবে তা পিতা-মাতাকে দেবে।

কোনো মা-বাবার সন্তান জীবিত না থাকলে কিংবা ভরণ-পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে সংশ্লিষ্ট সহায়ক কমিটি তাদের পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠাতে পারবে।

খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত কমিটিগুলো হল- সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে পিতামাতার ভরণ-পোষণ বিষয়ক জাতীয় কমিটি, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে শহর কমিটি, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পৌর কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়ন কমিটি এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সদস্যের নেতৃত্বে সহায়ক কমিটি।

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ তহবিল নামে স্থায়ী ও চলতি তহবিল থাকবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, স্থায়ী তহবিল গঠনের পর সরকার তাতে অনুদান হিসেবে অর্থ দেবে।

স্থায়ী তহবিলে ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। দানপত্রে কোনো নির্দিষ্ট মা-বাবার নাম উল্লেখ থাকলে ওই অর্থে আগে তাদের প্রয়োজন মেটানো হবে, এরপর অর্থ উদ্বৃত্ত থাকলে সরকার তা ব্যয় করতে পারবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, যে সন্তান তার পেশাগত বা অন্য কোনো কারণে দিনে পিতা-মাতার পরিচর্যা করতে সক্ষম হবে না, তিনি তার পিতা-মাতাকে দিবাপরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারবেন।

আর যে সন্তান তার পেশাগত ব্যস্ততা, পিতা-মাতার বিশেষ রোগগ্রস্ততা বা অন্য কোনো কারণে রাতে পিতা-মাতার পরিচর্যা করতে পারবে না, তিনি রাত্রিকালীন আশ্রয়কেন্দ্রে পিতা-মাতার পরিচর্যা নিশ্চিত করবেন। তবে পরিচর্যাকেন্দ্রে পাঠিয়ে পিতা-মাতার পরিচর্যাকে ‘সর্বশেষ উপায়’ হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে খসড়ায়।

আরকে//