ঢাকা, রবিবার   ১৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১

শোলাকিয়া হামলার ২ বছর

চলতি মাসের শেষের দিকে চার্জশিট

প্রকাশিত : ০৭:৫৪ এএম, ৭ জুলাই ২০১৮ শনিবার

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা মামলার চার্জশিট চলতি মাসের শেষের দিকেই দেওয়া হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরিকল্পনা, অস্ত্র ও অর্থের জোগান, প্রশিক্ষণ প্রদান ও হামলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যক্রমে ২৭ জঙ্গি জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীসহ ২২ জন বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অপারেশনে নিহত হয়েছে। তাই চার্জশিটে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ। জীবিত অন্য পাঁচ জঙ্গিকে এ মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে।
এ পাঁচ জঙ্গির মধ্যে রয়েছে- নব্য জেএমবির নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মো. আবদুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ, আনোয়ার হোসেন ও জাহিদ। তদন্ত সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গতকাল শুক্রবার সমকালকে এ তথ্য জানায়। সন্ত্রাস দমন আইনে মামলার চার্জশিট দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়াও শিগগিরই শুরু করবে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, শোলাকিয়ায় হামলা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসে চার্জশিট দেওয়া হবে। কেন কারা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা করে, সব তথ্যই তদন্তে উঠে এসেছে। হলি আর্টিসানের হামলা ও শোলাকিয়ার ঘটনা এক সূত্রে গাঁথা।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হলি আর্টিসান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী। ঢাকায় একটি বাসায় বসে তারা এ হামলার পরিকল্পনা করে। তবে এ বৈঠকে একজন জঙ্গি শোলাকিয়ায় হামলার বিরোধিতা করেছিল। যদিও তামিম চৌধুরী এ মত উপেক্ষা করে নিজে শোলাকিয়ার হামলার মূল ছক তৈরি করে। হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতির খোঁজ নিতে সশরীরে কিশোরগঞ্জে যায় তামিমের বিশ্বস্ত সহযোগী নূরুল ইসলাম মারজান ও আকাশ। সেখানে মাঠ পর্যায়ের মূল কমান্ডার শরিফুল ইসলাম ওরফে সফিউল ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে ডন এবং আবির রহমানকে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দেয় মারজান। তাদের ‘ব্রিফিং’ করে হামলার দিন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শরিফুল ও আবিরকে ঘটনাস্থলের খুব কাছে নামিয়ে দিয়েছিল মারজান, আকাশসহ তিন জঙ্গি।
গুলশানে হলি আর্টিসানে হামলাকারী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামিহ মুবাশীর, মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনার পর দেশে ফিরে আসা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবরাস ইসলাম, বগুড়ার শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল শোলাকিয়ার হামলার বিস্তারিত তথ্য জানত। তামিম চৌধুরী জঙ্গিদের স্লিপার সেলের ১০ সদস্যকে দুই ভাগে ভাগ করে। প্রতি ভাগে ছিল পাঁচ জঙ্গি। তাদের বলা হয়, ১ জুলাই হলি আর্টিসান হামলা ‘সফল’ হলে ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় হামলা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন নামাজ শুরুর আগে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন একটি পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালায় দুই তরুণ। এতে দুই পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল হক তপু ও আনসারুল ইসলাম নিহত হন।
হামলার পর দুই জঙ্গি সবুজবাগ এলাকার চারতলা একটি বাড়ির নিচতলায় আশ্রয় নেয়। র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা গোলাগুলি হয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি শরিফুল ইসলাম ডনকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। তার সহযোগী আবির গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। জঙ্গি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি চলার সময় সবুজবাগ এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজ বাসায় মারা যান। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে জাহিদুল হক তানিম ও শহরের বয়লা এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে আহসান উল্লাহকে আটক করা হয়। গুলিবিদ্ধ ও চিকিৎসাধীন শরিফুল জিজ্ঞাসাবাদে শোলাকিয়ার হামলা ছাড়াও জঙ্গিদের পরবর্তী হামলার লক্ষ্য নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের ডাংরিবন্দ এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শরিফুল ও অজ্ঞাতপরিচয় আরেক জঙ্গির মৃত্যু ঘটে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজন পুলিশের হাতে এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, আবদুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ও আনোয়ার হোসেন হলি আর্টিসানে হামলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত অন্য জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি হিসেবে আটক ছিল। পরে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার মামলায় আসামি করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
এসএ/