কোটা আন্দোলন যৌক্তিক হলে প্রজ্ঞাপন দিন: নূরুল হকের বাবা
প্রকাশিত : ১১:৪১ এএম, ৭ জুলাই ২০১৮ শনিবার
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে কোটা আন্দোলনকারীদের নেতা নূরুল হক নুরুর বাবা ইদ্রিস হাওলাদার বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক হলে অবলিম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। যারা কারাগারে আছে, তাদের মুক্তি দিতে অনুরোধ জানাই।’
গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। নূরুল হক নুর কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র।
উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের আয়োজনে এই মানববন্ধন ও সমাবেশে ইদ্রিস হাওলাদার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘কষ্টে আমি কথা বলতে পারছি না। আমার হৃদয় ফেটে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই— যারা অতর্কিত হামলায় আহত হয়েছে, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করুন। আর যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিন।’
‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি দেশের মা। দেশের নাগরিকরা আপনার সন্তানের মতো। সন্তানরা আপনার কাছে আবদার করতেই পারে। আপনি দেবেন কী দেবেন না, সেটা আপনার বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চলতে পারে না। আহত ছেলে-মেয়েদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হোক এবং গ্রেফতার ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিন’–যোগ করেন ইদ্রিস হাওলাদার।
আন্দোলনে নিজের ছেলের জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, সারাদেশের মানুষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স করেছে। তার জ্ঞান আছে, যা আমার নাও থাকতে পারে। তাই সে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে কোটা সংস্কার আন্দোলন করে। আমার ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি গ্রামে কৃষি কাজ করি। তার চিকিৎসায় আমি টাকা দিয়েছি।
নুরুকে মারধরের পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। নুরু বর্তমানে কিডনি ও ব্রেইনে আঘাতজনিত সমস্যায় ভুগছে বলেও জানান তিনি।
উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে সাত দফা দাবি পেশ করা হয়।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলার ঘটনায় চারটি এবং ৫৭ ধারায় একটি— মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়। এপর্যন্ত এসব মামলায় ১০ জন গ্রেফতার হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন— রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, তরিকুল, জসিমউদ্দিন, মশিউর, আমানুল্লাহ, মাজহারুল, জাকারিয়া, রমজান ওরফে সুমন ও রবিন। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেন— রাশেদ খান, ফারুক হোসেন ও মশিউর। মাহফুজ নামে একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আড়াই মাস পরও কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় গত শনিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেয় কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা জড়ো হলে তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়। পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নূরসহ বেশ কয়েকজনকে বেধরক মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদের গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষাবিদদের লাঞ্চিত করে আইনশৃংখলা বাহিনী।
/ এআর /