মাদ্রাসা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:১২ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৭:১২ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৮ শনিবার
শেরপুর পৌরসভার মুন্সিবাজার এলাকার তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন পুলিশসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। শনিবার দুপপুরে এ সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। এ সময় এক পক্ষের হাতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মিনহাজ উদ্দিন লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
আহতদের মধ্যে মীরগঞ্জ এলাকার ওয়াজ কুরুনির ছেলে হাসান (২৫) ও গাজীরখামার এলাকার মনিরকে (২৫) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে হাসানকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য সকাল ১১টায় সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। কমিটির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ অদু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন ।
কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত একটি পক্ষ মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাইফুল ইসলাম স্বপনকে কমিটিতে না রাখার দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মিনাল, ফখরুল মজিদ খোকন, খন্দকার নজরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোরুল হাসান উৎপল এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহম্মেদ শাকিলসহ শহরের পূর্বাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর রুমান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. বায়েযীদ হাসানসহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয়।
এ সময় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়। আতঙ্কে আশপাশের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মিনাল অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সেখানে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে ওই সব লোক এই মাদ্রাসা থেকে সরকার বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন। এর প্রতিবাদ করায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমানের ছোট ভাই ইয়াকুব আলী আজ শনিবার তাকে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করে।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান বলেন, তার ছোট ভাই কাউকে কোন রকম লাঞ্ছিত করেনি।
অপরদিকে মাদ্রাসা কমিটির বর্তমান সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ অদু বলেন, এই মাদ্রাসা একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। দলমত নির্বিশেষে সবার সাহায্য-সহযোগিতায় মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়। এখানে ব্যক্তি বিশেষ বা কোন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার কোন সুযোগ নেই। এ ছাড়া কমিটি গঠনের আজকের সভা মুলতবি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
অপরদিকে এই ঘটনার জের ধরে শেরপুর-জামালপুর সড়কের কুসুমহাটী বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাস্তার ওপর গাছ ফেলে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। ফলে ওই সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিকেল ৪টায় অবরোধ তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এসএইচ/