‘বিএনপির মতো দলকে ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না’
প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ৯ জুলাই ২০১৮ সোমবার
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারত কিছুতেই হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
দিল্লি সফরে গিয়ে এই প্রভাবশালী নীতি-নির্ধারক বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও দাবি করেছেন, অতীতে যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে `ভারতের তাঁবেদার` বলে আক্রমণ করা হত সেই দিন আর নেই। কারণ দুই দেশের সম্পর্ক এখন `সমানে-সমানে।`
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গী বিএনপিকেও ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন, যদিও বিএনপি নেতৃত্ব তার এই বক্তব্যকে `সম্পূর্ণ অবান্তর` বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
বিএনপির কথা হল, তাদের সম্পর্কে ভারতের কী মনোভাব সেটা দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে - এইচ টি ইমাম নন।
তিন দিনের সফরে দিল্লিতে গিয়ে এইচ টি ইমাম ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে যেভাবে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কিংবা নানা থিঙ্কট্যাঙ্কে মতবিনিময় করেছেন, সেটা যে দুই সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার আর একটা প্রমাণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তবে ইমাম বিবিসিকে বলছিলেন, দু`দেশের সম্পর্ক এখন সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঠিকই - কিন্তু তার মানে এই নয় যে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনেও নাক গলাতে চাইবে।
‘একটা বিষয়ে আমরা সব সময় বিশেষ খেয়াল রাখি, তা হল আমরা কেউ কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা এরকমও চাইব না যে আমাদের নির্বাচনে বাইরের কেউ হস্তক্ষেপ করুক। ভারত হল আমাদের ঘনিষ্টতম মিত্র। বাংলাদেশে যেমন নির্বাচন, তেমনি ভারতেও সামনে নির্বাচন আসছে। এই পটভূমিতে ধরেই নেওয়া যায় বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারে ভারত খুবই উল্লেখযোগ্যভাবে উল্লিখিত হবে, তাই না?’
ইমাম বলেন, ‘সবাই বলবে এই সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে অমুক হল, তমুক হল। আগে তো তাঁবেদার সরকার এরকম আরও কত কী বলা হয়েছে, কিন্তু এখন আমরা ইক্যুয়াল পার্টনারস, সমান - এই জিনিসটা তো আমরা ভোটের প্রচারে অবশ্যই বলব।’
তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটির এই কো-চেয়ার সেই সঙ্গেই জানাচ্ছেন, ভারতের নির্বাচনে দলগুলো কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, কীভাবে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যায় বা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কোন রাস্তা নেয়, সেগুলো নিয়ে তাদের দলের ভেতরেও আলাপ আলোচনা হয়।
দলীয় স্তরেও ভারত ও বাংলাদেশের দুই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও তিনি গোপন করছেন না, কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলছেন, ‘সরকারিভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই, আমরাও তা কখনও চাই না!’
এদিকে গত মাসেই বিরোধী বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ভারতে এসে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয় সেটা যেন তারা দেখেন।
এই `সহায়তা` চাওয়ার মধ্যে দিয়ে বিএনপি ভারতের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চাইছে বলেও পর্যবেক্ষকরা ধারণা করেছিলেন।
এইচ টি ইমাম কিন্তু বলছেন, বিএনপি এখন জামায়াতে ইসলামীর একটা `এক্সটেনশন` মাত্র, এমন একটি দলকে ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না।
‘যত যা-ই বলুন না কেনও, বিএনপির ঘাড়ে জামায়াতে ইসলামী এমনভাবে সওয়ার হয়েছে যে তারা আর তা থেকে বেরোতেই পারছে না। এখন তো বিএনপির নিজস্ব কর্মীও নেই, রাস্তাঘাটে যে সব কাজকর্ম তারা করেন - সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই হোক বা বিক্ষোভ প্রদর্শন, শিবির ছাড়া তো তাদের এক পা-ও চলে না! এই শিবির হল জামায়াতের ছাত্র ফ্রন্ট, যারা খুব প্রশিক্ষিত একটা ক্যাডার বাহিনী। আগে রগ কাটত, এখন গ্রেনেড ছোড়ে, বোমা মারে, মলোটভ ককটেল বানায় - এই সব নানারকম!’
ইমাম বলেন, ‘এরকম একটা সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে ভারতের সরকারের বা ক্ষমতাসীন দলের কিছু করার থাকবে বলে তো আমার মনে হয় না! এরকম আত্মঘাতী পদক্ষেপ কেউ নেবেন বলে তো আমার মনে হয় না’।
তবে ঢাকায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশারফ হোসেন মনে করছেন, তাদের দলকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করার কোনও এক্তিয়ারই আসলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার নেই।
মোশারফ হোসেন বিবিসিকে বলেন, ‘ওনার বেশির ভাগ কথাই আসলে সম্পূর্ণ অবান্তর। আমাদের দল বিএনপি একটি মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তি। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এই দলের সুনির্দিষ্ট আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যও আছে। সেখানে বিএনপি আছে কি নেই, অন্য দলের একজন নেতা হয়ে তা উনি বলার কে? প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা হয়ে তার এ মন্তব্য করা আদৌ সমীচীন হয়নি বলেই মনে করি।’
‘আসলে দল হিসেবে বিএনপি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তারা আমাদের এতটাই ভয় পায় যে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ অবধি করতে দিতে চায় না। সেখানে তিনি যদি বলেন বিএনপি নেই, তাহলে তা তো সে কথার কোনও ভিত্তিই নেই,’ বলছিলেন বিএনপির ওই শীর্ষস্থানীয় নেতা।
তবে বিএনপির প্রতি ভারতের মনোভাব কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে এইচ টি ইমামের করা মন্তব্য আরও বেশি দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছেন খন্দকার মোশারফ হোসেন।
তার কথায়, ‘ভারত বিএনপিকে পাত্তা দেবে না কিংবা নির্বাচনে বিএনপিকে বিশ্বাস করবে না, এই সব কথা উনি বলার কে? উনি কি ভারত সরকারের বা প্রশাসনের কেউ? যদি এটাই ভারত সরকারের নীতি হয়, তাহলে সেটা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে, ইনি সেখানে বলার কে?’
মেশারফ আরও বলেন, ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে ঢাকায় এসে ভারতের তদানীন্তন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং যেভাবে নির্বাচনে নাক গলিয়েছিলেন - এবারে তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই তারা আশাবাদী।
কারণ ভারত এবারে বাংলাদেশে ভোটের অনেক আগেই রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে সেখানে হস্তক্ষেপ না-করার কথা জানিয়েছে - আর বিএনপিও আপাতত সেটাকে সন্দেহ করার কোনও কারণ দেখছে না।
সূত্র: বিবিসি
একে//