ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

স্তন ক্যান্সারের কারণ ও লক্ষণ

ডা. আবদুস সালাম

প্রকাশিত : ০৬:২০ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০২:৪১ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার

স্তন ক্যান্সার নারীদের একটি পরিচিত রোগ। শুধু নারী নয় পুরুষের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই এ রোগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। স্তন ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে লিখেছেন ডা. আবদুস সালাম। তিনি জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অনকোলজি, সার্জারী ও অর্থোপেডিক বিষয়ক কনসালটেন্ট।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তনের ক্যান্সার সারানো যায়। তবে ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সাধারণত তা সারানো যায় না। কিন্তু এ রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের পর স্তন ক্যান্সারের অবস্থান।

স্তন ক্যান্সারের কারণ
স্তন ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করা এখনো সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হয়নি। কিছু নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয় খুব ছোট ছোট জীবকোষ দিয়ে। ক্যান্সার এসব জীবকোষের রোগ। স্বাভাবিকভাবে জীবকোষের বিভাজন ঘটে সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে। যদি কোনো কারণে এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে জীবকোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভক্ত হয়ে একটি পিণ্ড সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় টিউমার।

স্তনে দুই ধরনের টিউমার হতে পারে। সেগুলো হচ্ছে-

১.বিনাইন: বেশির ভাগ স্তন টিউমার বিনাইন হয়। যা ক্ষতিকর নয়। কিছু বিনাইন টিউমার স্তনক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২.ম্যালিগন্যান্ট : ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে এমন ধরনের ক্যান্সার জীবকোষ থাকে, যা চিকিৎসা না করা হলে স্তনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো রক্তপ্রবাহ কিংবা লসিকার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এসব জীবকোষ নতুন স্থানে পৌঁছে নতুন টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। এ নতুন টিউমারকে বলা হয় মেটাস্ট্যাটিক টিউমার।

স্তন ক্যান্সার হওয়ার একটি কারণ হলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ক্রুটিযুক্ত ‘জিন’। যেসব অস্বাভাবিক জিন স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, তাদের মধ্যে আছে BRCA1 এবং BRCA2 জিন।

একই পরিবারের দুই বা তার বেশি নিকটাত্মীয়ের স্তনের ক্যান্সার থাকলে, একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্যান্য ক্যান্সার থাকলে, বিশেষ করে মলাশয় ও ভ্রুণকোষের ক্যান্সার থাকলে, ৪০ বছরের কমবয়সী একজন নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সার রয়েছে এমন বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এমন একজন আত্মীয়, যার দুই স্তনেই এ রোগ হয়েছে এমন কেস থাকলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়া যেসব নারীর এক স্তনে ক্যান্সার হয়েছে, তাদের অন্য স্তনে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
সন্তানহীনতা বা বেশি বয়সে সন্তান হওয়া, খুব অল্প বয়সেই ঋতুস্রাব হওয়া কিংবা ঋতু বন্ধ বেশি বয়সে হওয়া, গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার করা (যারা ১০ বছরের বেশি সময় আগে বড়ি খাওয়া বন্ধ করেছেন তাদের বেলায় সম্ভবত ঝুঁকি নেই), হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো এবং অ্যালকোহল ব্যবহারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

এছাড়া স্থূলতা, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার ও শারীরিক কর্মহীনতাও স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
বেশির ভাগ নারীর ক্ষেত্রেই স্তন ক্যান্সার প্রথমে লক্ষ করা যায় স্তনে একটি বেদনাহীন পিণ্ডের আকারে। আরও কিছু লক্ষণ সম্পর্কেও সচেতন থাকা দরকার। যেমন- স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন, স্তনের ত্বকে টোলপড়া, স্তনে একটি পিণ্ড বা স্ফীতি দেখা দেয়া, স্তনের বোঁটার পরিবর্তন (ভেতর দিকে ঢুকে যায়), স্তনের বোঁটা থেকে রক্তসহ তরল পদার্থের ক্ষরণ, স্তনের বোঁটায় বা তার চার পাশে চুলকানির মতো হওয়া, বগলের লসিকাগ্রন্থিগুলোর স্ফীতি ইত্যাদি।

মনে রাখা আবশ্যক

ক্যান্সার কোনো সংক্রামক রোগ নয় এবং একজনের রোগ আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

(চলবে)

লেখক : জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অনকোলজি, সার্জারী ও অর্থোপেডিক বিষয়ক কনসালটেন্ট।

 অনুলিখন : আলী আদনান

/ এআর /