ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

যে ২১টি উপদেশ মানলে জীবনে সফলতা ধরা দেবে

প্রকাশিত : ১২:৩৯ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার

একটি যন্ত্র পরিচালনা করতে হলে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হয়। আর আমাদের জীবন তো একটা মহাযন্ত্র! একে সুষ্ঠু বিধিমালা ব্যতিরেকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা এক অসম্ভব কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। মানুষ যেন তার জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করতে পারে।

এ জন্য যুগযুগ ধরে মহাঋষিরা বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন।আর এই নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করে অনেকে তাদের জীবনকে আলোকিত করেছেন। তাদের মধ্যে মিয়ামোতো মুশাসি হলেন এমনি এক দিকপাল যিনি ছিলেন একজন জাপানি বৌদ্ধ গুরু। তার মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে এই ২১টি জীবন বিধি ব্যক্ত করেন।যা মানুষের জীবনে সফলতা বয়ে আনতে সাহায্য করে।

এই নিয়মনীতিগুলো আপনি আপনার জীবনে প্রয়োগ করে নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন। এই আদর্শগুলো আপনার চিন্তা ভাবনাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। আপনি যদি বিপথগামীও হয়ে থাকেন, তবে সঠিক পথের নিশানা পাবেন। সর্বোপরি, আপনার জীবন হবে আলোকিত।

১. বাস্তবতা মেনে নিন

সবকিছু সাদরে গ্রহণ করে নিতে পারা একটা ভালো গুণ। এটা আপনার সব ধরনের মানসিক চাপকে দূরীভূত করতে সাহায্য করে। যেকোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার শক্তি দেবে।

২. নিজেকে অধিক আনন্দে মাতাবেন না

একজন মানুষ হিসেবে আমরা তখনই অসুখী যখন আমাদের যা আছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারি না এবং আরও অধিক প্রত্যাশা করি।মানুষের চাহিদার শেষ নেই,আমাদের একটি ইচ্ছা পূরণ হলে আরেকটা পাওয়ার আকাঙ্খা জাগবে। আমরা শুধু পেতেই চাইবো। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর অর্থ এই না যে, আমরা আনন্দ করবো না! এর অর্থ হলো আমরা অবিরত সুখ প্রত্যাশা করবো না, কিন্তু আমরা আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে আনন্দের সাথে উপভোগ করবো।

 

৩. জীবন পরিচালনার জন্য ক্ষণিকের অনুভূতি বা আবেগের প্রতি নির্ভরশীল হবেন না

আমাদের অনুভূতি ও আবেগগুলো চিরস্থায়ী নয়। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না বরং চিন্তা বিবেক-বুদ্ধির সাহায্য নিন। আবেগময় কোনো কাজ আপনার আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।

৪. নিজের চেয়ে বিশ্ববাসীর জন্য চিন্তা করুন

চীনা একটি প্রবাদ আছে, ‘আপনি যদি এক ঘন্টার জন্য সুখ পেতে চান তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন, যদি একদিনের জন্য আনন্দ পেতে চান তবে মাছ ধরুন,যদি এক বছরের জন্য সুখ পেতে চান তবে একটি ভাগ্যকে গ্রহণ করুন আর যদি সারাজীবনের জন্য সুখ পেতে চান তাহলে অন্যকে সাহায্য করুন।’ তাই আপনি যদি প্রকৃত সুখী হতে চান, তবে মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিন। মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিমগ্ন রাখুন।

৫. আকাঙ্খার দাসত্ব করবেন না

অধিক আকাঙ্খা আপনাকে যন্ত্রণা এনে দিবে,আপনি আপনার বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাই কখনোই আকাঙ্খার দাস হবেন না।

৬. যা ঘটেছে তার জন্য চিন্তিত বা দুঃখিত হবেন না

এটা সত্য যে, যা ইতিপূর্বে ঘটেছে তা আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। ঘটে যাওয়া কোনো বিষয় নিয়ে যদি দুঃখিত হন তবে তা আপনার আগামী দিনের সুখ,আনন্দ ও সাফল্যকে মুছে ফেলতে পারে। তাই কখনোই কোনো ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে চিন্তিত ও দুঃখিত হবেন না।

৭. কখনও ঈর্ষান্বিত হবেন না

অপরের ভালো কিছু দেখে যদি নিজেকে অসুখী মনে করেন বা অন্যের আনন্দে আনন্দিত হতে না পারেন! তবে এই অভ্যাসটা আজই ত্যাগ করুন।আপনার নিজের দিকে তাকান আর আপনার যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন।

৮. বিচ্ছেদকে মেনে নিন

পৃথিবীতে সবকিছু আপনার ইচ্ছানুযায়ী হবে না। তাই আপনি হয়তো ভাবেন, এই বিষয় বা ব্যক্তি আপনার সাথে থাকা প্রয়োজন কিন্তু হঠাৎ যদি এগুলো হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তবে এই বিচ্ছেদকে মেনে নিন।

৯. বিরক্তি ভাবকে প্রশ্রয় দিবেন না

আপনাকে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতি থেকে শিখতে হবে। কঠিন কোন মুহূর্তের সম্মুখীন হলে ভেঙে পড়বেন না। এমনকি অভিযোগও করবেন না বরং বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। এতে ভবিষ্যৎ- এ রকম কোনো কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হলে তা সহজেই সমাধান করতে পারবেন।

১০. ইন্দ্রিয় লালসার ক্রীতদাস হবেন না

লালসার অনুভূতি আপনাকে হয়তো তাৎক্ষণিক আনন্দ দিবে কিন্তু পরক্ষণেই আপনাকে যন্ত্রণাগ্রস্থ করে তুলবে।

 

১১. পক্ষপাতদুষ্ট হবেন না

পক্ষপাতিত্ব আপনার বিবেক-বুদ্ধিকে অকার্যকর করে তুলবে। আপনি তখন অন্ধভাবে কোনো কিছুর অনুসরণ করতে চাইবেন। তাই এমন মানসিকতা থেকে নিজেকে দুরে রাখুন।

১২. নিজেকে একই স্থানে অবরুদ্ধ রাখবেন না

সকল স্থান আপনার জন্য উপযোগী হবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই নিজেকে একইস্থানে আটকে রাখবেন না। চারিদিকে আপনার সুযোগ-সুবিধাগুলো অনুসন্ধান করুন। সফল হওয়ার জন্য আপনাকে আপনার উপযুক্ত প্রতিবেশ খুঁজে নিতেই হবে।

১৩. খাদ্যদ্রব্য ভক্ষণের প্রতি আসক্ত হবেন না

এটা সত্য যে, সুস্বাস্থের জন্য ভালো ও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। তবে আপনি যদি কোনো খাদ্যের প্রতি অধিক আসক্ত হয়ে পড়েন তাহলে তা আপনার নিকট নেশাদ্রব্যে পরিণত হবে। আর এটা আপনার জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকি স্বরূপ হবে।

১৪. বর্তমানকে বেশি প্রাধান্য দিন

অতীতকে নিয়ে আপনি শতচেষ্টা করেও কোনো পরিবর্তন করতে পারবেন না আর বর্তমানই সময়ের পরিক্রমায় অতীতে পরিণত হবে আবার ভবিষৎও বর্তমানে রুপান্তরিত হবে। তাই বর্তমানকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যান, সফলতা আপনা-আপনি চলে আসবে।

১৫.প্রথাগত ধারণার অন্ধভক্ত হবেন না

প্রথাগত ধ্যান-ধারণা ও কর্মকে সম্মান করুন কিন্তু নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা দিয়ে এগুলো যাচাই-বাছাই করুন। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে সবকিছুই বদলাতে থাকে,তাই অন্ধভাবে ঐতিহ্যগত বিষয়গুলো অনুসরণ করে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে ব্যর্থ হতে পারেন।

১৬. বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র বা হাতিয়ার ব্যবহার করবেন না

যেখানে সেখানে আপনার অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। এটা আপনার জীবনের জন্য ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে কারন সব পরিস্থিতিই অস্ত্র ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়।

১৭. মৃত্যুকে ভয় পাবেন না

আমরা জানি যে, একদিন আমাদের সকলকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাই এটা নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। বরং যদি মৃত্যু চিন্তা মাথা ঘুরপাক খায় তবে আপনি কোনো কাজে মনযোগ দিতে ও সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারবেন না। তাই মৃত্যুভয় থকে দূরে থাকুন।

১৮.সকল চিন্তা, অনুভূতি ও কাজের প্রতি অধিক সচেতন হন

আপনি যা করেন যা বলেন তার জন্য আপনি-ই দায়ী। তাই আপনার কাজ ও কথার প্রতি মনযোগী হন। তা না হলে ভুল পথে আপনার জীবন পরিচালিত হয়ে যেতে পারে।

 

১৯. সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

আপনার প্রভু আপনাকে কি দিয়েছে! আপনার বিপদে সাহায্য করেছে কি! আপনি সুখি আছেন কি! এগুলো না ভেবে বরং সর্বাবস্থায় আপনার প্রভুর প্রতি আপনার ভালোবাসা ও  অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

২০. জীবনব্যাপী জ্ঞান অর্জন করবেন

আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত থেকে কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করবেন। আর এই অনুশীলন মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন।

২১.লক্ষ্য থেকে পিছপা হবেন না

আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য স্থির করুন এবং সেই লক্ষ্য অর্জন করতে যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেনো! সবকিছু মোকাবেলা করে সামনে যেতে থাকবেন কখনও পিছু হটবেন না।

পৃথিবীতে চলতে গিয়ে আমাদের জীবনকে বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিতে হয়। কখনও আমরা আনন্দে থাকি আবার দেখা যায়, পরক্ষণেই কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের উপর হতাশা, দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণা প্রভৃতি আচ্ছন্ন করে। এসব পরিস্থিতিতে আমাদেরও প্রয়োজন হয় এমন কোনো দিকনির্দেশনা যা অনুসরণ করে আমরা আমাদের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত ও আনন্দময় করে উপস্থাপন করতে পারি।

(সূত্র: ইয়ুথ কার্নিভাল ব্লগ)

কেআই/ এআর