ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

১৮ সদস্যের মনোমুগ্ধকর গ্রাম গাউসাডাল্যুর

প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৮ শনিবার

স্বশাসিত দ্বীপপুঞ্জ ফেয়ারো আইল্যান্ড৷ ডেনমার্কের অন্তর্গত প্রত্যন্ত ও ছবির মতো সুন্দর এ গ্রামটির নাম গাউসাডাল্যুর৷ যেখানে বসবাস করেন মাত্র ১৮ জন মানুষ৷

একসময় যেখানে ডাকঘর ছিল, সেই সময় সেখানে বসবাস করতেন গিসলি হারাউনফিয়র্ড৷ তার কারণে ডাকপিয়নকে ঐ পাহাড় পেরোতে হত৷ আঁকাবাঁকা পথ ধরে পাহাড়ে উঠে, তারপর নেমে সারভাগোর গিয়ে চিঠি নিয়ে আসতে হত৷ ২০০৪ সালে পাহাড়ের নীচ দিয়ে একটি টানেল তৈরি করা হয়৷ ফলে ডাকপিয়ন এখন গাড়ি চালিয়ে গ্রামে যেতে পারেন৷ পর্যটকরাও গ্রামের সৌন্দর্য্যে আকৃষ্ট হয়ে সেখানে যান৷

গিসলি হারাউনফিয়র্ড তার বাড়িতে অতিথিদের স্বাগত জানাতে পছন্দ করেন৷ তিনি তাদের ‘ডাকপিয়নের কফি` পানের আমন্ত্রণ জানান – যা একটি পুরনো ঐতিহ্য৷
হারাউনফিয়র্ড বলেন, চিঠি আনতে যাওয়ার সময় ডাকপিয়ন কাউকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন৷ কারণ তাহলে আর পথ হারানোর ভয় থাকত না৷ পরে এই রান্নাঘরে এসে তারা মোজা শুকাতেন, গা গরম করতেন, আর সঙ্গে কফি নিয়ে গল্প করতেন৷ আমার স্ত্রী সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পছন্দ করে৷

হারাউনফিয়র্ডের স্ত্রী আন আউটনাসটায়ান, শেষ যিনি ডাকপিয়ন ছিলেন, তার নাতনি৷ তিনি ডেনমার্কের মূল ভূখন্ডে কয়েকবছর টেক্সটাইল ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন৷ এখন ঘরে ফিরে তিনি ফেয়ারো আইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী উল নিয়ে কাজ করছেন৷

আউটনাসটায়ান বলেন, এই জিনিসটা এত সুন্দর যে, আমি এটা নিয়ে কাজ করতে চাই৷ অতীতে আমরা সবাই এটা ব্যবহার করেছি৷ আগে যখন এমন পোশাক ছিল না, তখন আমরা এরকম পোশাক পরতাম৷ ফেয়ারো আইল্যান্ডে এমন পোশাক থাকা খুবই ভালো, কারণ, জায়গাটা ঠান্ডা৷ তবে মানুষ এখন আর এটা ব্যবহার করছে না৷ আমি তাঁদের বোঝাতে চাই যে, তাঁরা এটা দিয়ে কী করতে পারে৷

২০১৬ সালের শেষদিকে হারাউনফিয়র্ডের পরিবার গাউসাডাল্যুরে ফিরে যায়৷ তখন থেকে গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ ছোট্ট মায়া গাউসাডাল্যুরে গত ৪৩ বছরে জন্ম নেয়া প্রথম শিশু৷

সেখানে জীবন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকে৷ গিসলি হারাউনফিয়র্ডের নিজস্ব একটি প্রকল্প আছে৷ মুরগি নিয়ে কাজ তার৷ হারাউনফিয়র্ড বলেন, আসল আইসল্যান্ডিক মুরগি খুবই পুরনো জাতের মুরগি৷ তারা ছোট, তবে ভাল ডিম পাড়ে৷ লক্ষ্য হচ্ছে, এই মুরগি থেকে ফেয়ারোস মুরগির জন্ম দেয়া৷ কারণ ফেয়ারো আইল্যান্ডের বাসিন্দারা তাঁদের আসল মুরগি হারিয়ে ফেলেছেন৷ সম্ভবত ওগুলো, এগুলোর মতোই ছিল, কারণ ভাইকিংরা এমন জাতের মুরগিই ইউরোপ থেকে আইসল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন, এখানেও এনেছিলেন৷ কিন্তু ঐ জাতের মুরগি আর নেই, কিংবা অন্য জাতের সঙ্গে মিশে গেছে৷ তাই আমি সেটা ফিরিয়ে আনতে চাই৷ এটাই আমার লক্ষ্য৷``

যদি তার লক্ষ্য পূরণ হয়, তাহলে হারাউনফিয়র্ড হাঁস ও পুরনো খাদ্যশস্যের জাতও ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করবেন৷ বাসিন্দাদের তাদের মূলে ফিরে যাওয়ার সঠিক জায়গা গাউসাডাল্যুর৷
মালাঙের জদিপান এলাকায় এই গ্রাম৷ কালী ব্রান্তাস নদী তীরের এই গ্রামটি দেখতে বস্তির মতো ছিল৷ তবে সেটি এখন ইতিহাস৷ দেখলে আর সেটা বোঝাই যাবে না৷ পুরো এলাকাটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে একেবারে ফকফকা করে ফেলা হয়েছে৷ দেয়া হয়েছে নানা ধরনের রং৷ মালাঙের একজন শিক্ষার্থী এই কাজের শুরুটা করেন৷

আরকে//