অভিনেতা দিলদারের মেয়ে জিনিয়ার ক্ষোভ
প্রকাশিত : ১২:১৬ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৮ শনিবার
আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা দিলদার। শুক্রবার ছিল গুণী এ অভিনয়শিল্পীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তবে এই গুনি শিল্পীর স্মরণে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কোনো আয়োজনই করা হয়নি। এমনকি এই শিল্পীর যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে মনে করেন তার মেয়ে জিনিয়া আফরোজ।
বাবার মৃত্যুর দিনে ক্ষোভের সঙ্গে জিনিয়া বলেন, ‘বাবাকে যে মূল্যায়ন করা উচিত ছিল সেটা আসলে হয়নি।’
গতবছর এফডিসিতে তার বাবার জন্য মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হলেও তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার তো কোনো উদ্যোগই দেখলাম না।’
জিনিয়া বলেন, ‘আমার মনে হয়, এর মধ্য দিয়ে শিল্পীদের অবমাননা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র আমার বাবা না, সব শিল্পীকেই আমাদের সম্মান জানানো উচিত।’
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান নিয়ে অপ্রাপ্তির কথা জানিয়ে জিনিয়া বলেন, ‘হলিউডে এ ধরনের অনুষ্ঠানে সিনিয়র আর্টিস্টদের সম্মান দেওয়া হয়। আমার বাবা বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং কমেডিয়ান হিসেবে তার জায়গাটা এখনও আছে। ফলে ওনাকে সম্মাননা জানানো উচিত ছিল।’
মেয়ের ভাষ্যে, ‘মাথার উপর থেকে বটগাছটা সরে যাওয়ায় যে ঝড়ঝাপটা এসেছে সেটা বুঝেছিলাম তখন। জীবনটা যে কত কঠিন, সেটা আমরা বুঝতে শিখেছি বাবা মারা যাওয়ার পর। পনের বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেকেই ভেবেছিল, এদের আর টাকা নেই। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখারও কিছু নেই। ইন্ডাস্ট্রি থেকে কেউ সহায়তা করেনি। তবে রিয়াজ ভাই আমার জন্য একটা জবের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই অর্থে আমাদের কেউ টাচে রাখেননি।’
জিনিয়া বলেন, ‘চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ও সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যায়ন না পেলেও বাবা এখনও লাখো দর্শকের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। তিনি কোনো সাধারণ অভিনেতা ছিলেন না। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে যে অবদান রেখে গেছেন এখনও কিন্তু অনেক প্রভাব রয়েছে।’
উল্লেখ্য, দিলদারের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয়জগতে আসা এই শিল্পী এক সময় হয়ে ওঠেন দর্শকদের হাসির ফেরিওয়ালা। অভিনয় করেছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলীর জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’র মতো দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। কমেডি অভিনেতার বাইরে নায়ক হিসেবে দেখা গেছে ‘আব্দুল্লাহ’ চলচ্চিত্রে। ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা কমেডি অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান দিলদার।
২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয় দিলদারের। তার পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছেন। স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার ডাক্তার। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেছেন। তবে বর্তমানে কিছেই করছেন না। দুই বোনই মায়ের সঙ্গে গুলশানের নিকেতন এলাকার বাসায় থাকেন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানোর পর অনেকটা সংগ্রাম করেই দিন কেটেছে দিলদারের স্ত্রী-মেয়ের।
এসএ/