ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০১৮’ 

কাপ ঘরে তুলে নিল চনপাড়া ক্রোয়েশিয়া দলের মেয়েরা

প্রকাশিত : ১০:২৮ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১০:২৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৮ শনিবার

ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮-এর ফাইনালের আগে প্রীতি ‘ফাইনাল’ খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চনপাড়ার ক্রোয়েশিয়া দলের মেয়েরা। শনিবার নারায়ণগঞ্জ রুপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ায় আয়োজিত ম্যাচে ১-০ গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।  

একশনএইড বাংলাদেশ ও পিএসটিসির সহযোগিতায় শনিবার বিকেলে এই ফুটবল খেলার আয়োজন করে চনপাড়া কিশোরী ক্লাব। যার উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার নারী ও কিশোরীরা যাতে খেলাধুলায় আরো উৎসাহী হয় ও অংশ নেয়। যেটি নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে।

একদিন বাদেই ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮-এর ফাইনাল খেলা। চনপাড়া, নারায়ণগঞ্জের মেয়েরা বিশ্বাস করে যে স্থানীয় পর্যায় থেকে তারাও এই বিশ্বকাপেরই অংশ। শুধু খেলা দেখা এবং উপভোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে এই মেয়েরা তাদের মাঠে ফুটবলের চর্চাও করে। তাই এবার তারা ফিফা বিশ্বকাপ-২০১৮ ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার বিকেলে প্রীতি ফাইনাল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। বাস্তবিক অর্থে এটি শুধুমাত্র একটি প্রীতি ফুটবল খেলা ছিল না। প্রতিকী অর্থে এটি কিশোরীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। এটি ছিল বাংলাদেশের অন্য কিশোরীদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ।

খেলায় অংশ নেয় চনপাড়া ক্রোয়েশিয়া দল ও চনপাড়া ফ্রান্স দল। খেলাটির রেফারি ছিলেন মো: ইব্রাহীম। এই প্রীতি খেলায় ওই এলাকার শত শত মানুষ দুই দলকে সাপোর্ট করে। করতালি দিয়ে খেলার পুরোটা সময় মেয়েদের উৎসাহ দেয় তারা। চনপাড়া ক্রোয়েশিয়া দলটি যখন ম্যাচের একমাত্র গোল দেয় তখন উল্লাসে ফেটে পড়ে দর্শকরা। খেলায় একমাত্র গোলটি করে চনপাড়া ক্রোয়েশিয়া দলের ১০ নাম্বার খেলোয়াড় সুমনা তালুকদার। সে-ই খেলায় ব্যবধান নিয়ে আসে। প্রান্তিক এই এলাকায় এটি ছিল একটি অভাবনীয় উদ্যোগ।  

খেলা শেষে কিশোরীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন, একশনএইড বাংলাদেশ-এর বোর্ড সদস্য ডা. খলিলুর রহমান, পরিচালক আসগর আলী সাবরী, ম্যানেজার কাশফিয়া ফিরোজ এবং বাংলাদেশ জাতীয় বাস্কেটবল দলের দলনেতা আশরিন মৃধা।  

একশনএইড বাংলাদেশ-এর বোর্ড সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, “চনপাড়া কমিউনিটি প্রমাণ করেছে যে মেয়েরা এদেশের ক্রীড়া, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে এবং ক্ষমতায়নে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। এটা আমাদের দায়িত্ব মেয়ে ও ছেলেদের সমানভাবে দেখা ও ক্ষমতায়িত করা”।

জাতীয় বাস্কেটবল দলের দলনেতা আশরিন মৃধা বলেন, “পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে এই মেয়েরা এক সময় জাতীয় দলে খেলতে পারবে। তারা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা”।

দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম ও শহরে কাজ করছে একশনএইড বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, নারী এবং কিশোরীদের ক্ষমতায়নে খেলাধুলা অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এরই মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ, শরীরের উপর আত্মবিশ্বাস এবং নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক জড়তা বা দূর্বলতা সংক্রান্ত প্রথাগত ধারণাকে ভেঙ্গে ফেলা, স্থান দাবী করা কিংবা চলাচলের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব।

একটি বল ছুড়ে মারা, সাঁতার কিংবা দৌড় দেয়া অর্থাৎ নারীর প্রতিটি পদক্ষেপ শুধু তার শারীরিক শক্তি নয় বরং তার নেতৃত্ব এবং কৌশলী চিন্তা-ভাবনাকে প্রকাশ করে। এভাবেই নারী নিজের ভেতরের ইতিবাচক ক্ষমতাকে জাগিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র এবং ব্যক্তিগত জীবনের পরিবর্তনে কাজ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮-এর ফাইনালের আগে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় “ক্ষমতায়নে ক্রীড়াঙ্গনের নারী: ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮” নামে একটি প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়।

এ বিষয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর পরিচালক আসগর আলী সাবরি বলেন, “এই খেলাটা প্রতীকী অর্থে। এই খেলাই প্রমাণ করে যে মেয়েরা কোনদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মাধ্যমে চনপাড়া জায়গাটি একদিন বিশ্বের কাছে পরিচিতি পাবে এটাই প্রত্যাশা”।

উল্লেখ্য যে, ২০১১ সাল হতে একশনএইড বাংলাদেশ এবং পিএসটিসি চনপাড়ায় নারী এবং কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা নিরসনে কাজ করে আসছে। চনপাড়ার যুবসমাজ সেখানে একত্রিত হয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে তারা কিশোরীদের খেলাধুলার আয়োজন করবে। পরবর্তীতে তারা প্রতিবছর নারী নেতৃত্ব, সাম্য এবং স্বাধীনতার প্রকাশস্বরূপ খেলাধুলার চর্চা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের এই আয়োজন।

একশনএইড বাংলাদেশ-এর সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নারী। এরই প্রেক্ষিতে কয়েক বছর ধরে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের নারী নেত্রীদের নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করছে। এই নেত্রীরা প্রথাগত জেন্ডার ভূমিকার বাইরে গিয়ে কাজ করে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অবদান রাখছেন। ২০১৬ সালের ০৯ জুন নারী স্পীডবোট চালকদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। ২০১৭ সালে এসিড সারভাইভারদের নিয়ে যে রানওয়ে শো হয় যা সৌন্দর্যের প্রথাগত ধারণাকে ভেঙ্গে ফেলতে সহায়তা করে।

দীর্ঘ দিনের কাজের প্রেক্ষিতে একশনএইড বাংলাদেশ-এর অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী এবং কিশোরীদের ক্ষমতায়নের অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে খেলাধুলা। তাই এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের বর্তমান নারী খেলোয়ারদের স্বীকৃতি দেয় একশনএইড বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় চনপাড়ার কিশোরীরা ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করে।

এসি