ঢাবির পর মেধাবীদের পছন্দের শীর্ষে জবি: ড.মীজানুর রহমান
প্রকাশিত : ০৫:২৬ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৩:০৮ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৮ বুধবার
পুরান ঢাকার প্রাচীন বিদ্যাপিঠ জগন্নাথ কলেজ এখন পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের এক যুগ পার হতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আজ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরই জগন্নাথ এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রমের শীর্ষে অবস্থান করছে।
শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গবেষণার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে বিসিএস পরীক্ষায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করেছে। সিভিল সার্ভিসের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাচ্ছে। এখানকার বহু শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতারও সুযোগ পাচ্ছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রগতির নানা তাঁর সঙ্গে কথা হয় একুশে টিভি অনলাইনের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ রানা।
একুশে টিভি অনলাইনঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষার বিকাশে কতটুটু এগিয়েছে, উপাচার্য হিসেবে আপনার মূল্যায়ন?
ড.মীজানুর রহমানঃ আমি যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালেয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাই তখন অনেক বড় সংকট ছিল। ছাত্র-শিক্ষকের অসম অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাজে অবস্থায় ছিল। আমরা মোটামুটি সেটা কাটিয়ে উঠেছি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৩০০ শিক্ষক ছিলেন। কোনো কোনো বিভাগে তো মাত্র ৩-৪ জন শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ শিক্ষক আছেন। ফলে আমরা ছাত্র-শিক্ষকের যে অসম অনুপাত ছিল সেটি কমাতে সক্ষম হয়েছি। আরও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ শিক্ষার মান উন্নয়নে গবেষণা বাড়ানোর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আপনার আছে কি-না?
ড.মীজানুর রহমানঃ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার বিষয়টা তেমন গুরুত্ব পেত না। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করি। এই কার্যক্রম চালু করার পর এ পর্যন্ত ৪ জন পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন।
আগামী একাডেমিক কাউন্সিলে আরও কয়েকজন গবেষক এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি। আমাদের গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ১৪০ জন গবেষণা করছে। তাদের মধ্যে ৬০-৬৫ জন গবেষণা সম্পাদন করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন আর বাকিরা খুব শিগগিরই জমা দিয়ে দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকটি বিভাগে ল্যাবরেটরি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। বিজ্ঞান গবেষণার যে সমস্যা ছিল ধীরে ধীরে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করছি। হেকেপ প্রকল্পের মাধ্যমে পদার্থ ও রসায়ন বিভাগে উন্নত মানের ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া নতুন বিভাগগুলোর ল্যাব করার জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে আমরা গবেষণার জন্য সব কার্যক্রম আরও ভালোভাবে করতে পারব।
একুশে টিভি অনলাইনঃ আপনার সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম কতটা গতি পেয়েছে?
ড.মীজানুর রহমানঃ অবস্থানগত সুবিধা বিশেষ করে রাজধানীতে ক্যাম্পাস হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দেশের সেরা শিক্ষক ও শিক্ষকদের জন্য দ্বিতীয় আকর্ষণ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন-বরিশাল, পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ২-৩ জন করে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক আছেন সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০ অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক আছেন।
আমাদের রসায়ন বিভাগে ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৭ জনের পিএইচডি আছে। আমরা আইন বিভাগ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় রানার্স আপ। গত কয়েক বছর আমরা বিসিএস পরীক্ষায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ভালো করেছি। আমরা এখন একাডেমিকভাবে ভালো করছি তার প্রমাণ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অর্জন।
একুশে টিভি অনলাইনঃ বিগত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় জবি শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। এর পেছনে শিক্ষকদের ভূমিকাকে কিভাবে ব্যখ্যা করবেন?
ড. মীজানুর রহমানঃ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সব মেধাবীরা ভর্তি হয়। আমরা ভর্তির বিষয়ে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করি। এছাড়া আমাদের এখানে দক্ষ শিক্ষকরা আছেন যারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করান। শিক্ষার্থীদের টেক কেয়ার করেন। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়েও শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা উন্নতি করছে। আমাদের নতুন ভবন হওয়ায় ক্লাস রুমের ঘাটতি নাই। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনযোগী হতে পারছে। তাদের ভালো পড়াশোনার জন্য সব কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট একটি বড় সংকট। এটি সমাধানে কি ধরনের পরিকল্পনা আছে কি-না?
ড.মীজানুর রহমানঃ না, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পিয়ন থেকে শুরু করে উপাচার্য পর্যন্ত সবাই ভাড়া বাসায় থাকেন। এখানে আবাসনের কোনো সুযোগ নাই আর করাও হবে না। এখানে আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই সবাই জেনেই ভর্তি হয়।
একুশে টিভি অনলাইনঃ হল উদ্ধারের বিভিন্ন সময় আন্দোলন হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি-না?
ড.মীজানুর রহমানঃ এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও কোনো হল ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছর আগে কলেজে যারা পড়তন তারা বিভিন্ন বাসায় থেকে পড়ালেখা করতেন।
একুশে টিভি অনলাইনঃ ছাত্রী হল নির্মাণের অগ্রগতি কতদূর?
ড.মীজানুর রহমানঃ নির্মাণকাজের ৩ বছর কেটে গেছে। আগের ৪ বছর অবৈধ স্থাপনার কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন হলের অবকাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর জুন পর্যন্ত। তার আগেই এই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
একুশে টিভি অনলাইনঃ কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ক্যাম্পাস নিয়ে কি ভাবছেন?
ড. মীজানুর রহমানঃ দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে আমরা মাস্টার প্ল্যান করেছি যেখানে সবকিছু থাকবে। আমাদের ক্যাম্পাসের জন্য ভূমিগ্রহন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহন ও ভূমি উন্নয়নের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে দিয়েছি। মঞ্জুরি কমিশন প্রথমধাপের কাজ শেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যাবে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ আপনার মেয়াদে কি ২য় ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে?
ড.মীজানুর রহমানঃ আমার মেয়াদে সম্ভব না। তবে আমি কাজ শুরু করে যেতে পারব। আমি প্রথমে দেয়াল দিয়ে লেকের কাজ করে তারপরে স্থাপনার কাজ করব। এই কাজ ২ বছরের মধ্যে করা হবে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ জবির পরিবহন সংকট কিভাবে মোকাবেলা করছেন?
ড. মীজানুর রহমানঃ আমরা পরিবহন সংকট কাটিয়ে উঠেছি। আমাদের পর্যাপ্ত পরিবহন আছে। আমি যোগদানের ৬ বছরের মধ্যে পরিবহণ তিনগুণ বাড়িয়েছি। এই অর্থ বছরে প্রগতিতে শিক্ষার্থীদের ৩ টা ও শিক্ষকদের একটা এসি বাস অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ দীর্ঘ একযুগ পার হয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। সমাবর্তন কি হবে?
ড.মীজানুর রহমানঃ খুব শিগগিরই কোনো সমাবর্তন হবে না। আর হওয়ার সম্ভবনাও নাই। কারণ সমাবর্তন করার মতো আমাদের জায়গা নাই। আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস যখন হবে তখন করা হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অন্য কোনো জায়গায় হয় না। এটা কোন বিয়ে না যে কমিউনিটি সেন্টারে করলাম।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আজ থেকে ৫ বছর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন জায়গায় দেখতে চান?
ড.মীজানুর রহমানঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খুব অল্প সময়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে আমি মনে করি সার্বিকভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
এম / এআর /