ঢাকা, শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২০ ১৪৩১

বিবিসির বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন বাজারে ডিজিটাল মিডিয়ার সম্ভাবনা

প্রকাশিত : ০৮:৫০ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৮ সোমবার

বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখনো টেলিভিশন। গত দশ বছর ধরে বিজ্ঞাপনের বাজারে টেলিভিশনের আধিপত্য বজায় রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউটিউব এবং ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের নতুন বাজার দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্র্যান্ডগুলো অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের প্রচার এবং প্রসারের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শ্রেয়া সর্বজায়া বলছেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।

শ্রেয়া সর্বজায়া বলেন, ‘গ্লোবালি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এটা শিফট হচ্ছে। বাংলাদেশেও সেদিকে যাচ্ছে। সবাই পছন্দ করছে নিজেই নিজের মিডিয়াকে কন্ট্রোল করে ব্যবহার করতে।’

বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার টাকার অংকে কতটা বড় সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও হিসেব নেই। এমনকি সরকারের কাছে এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বলছে এ বাজার প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন বাবদ প্রতিবছর কত টাকা ব্যয় করে সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনও তথ্য দিতে চায় না। এ নিয়ে কোম্পানীগুলোর মাঝে এক ধরনের গোপনীয়তার প্রবণতা দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার বলছেন, বর্তমানে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।

অধ্যাপক নাসরিনের বর্ণনায় এখন সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অনেক বিজ্ঞাপন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে এবং পরে টেলিভিশন প্রচার হয়। ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের ফিডব্যাক দেখে ক্লায়েন্ট সিদ্ধান্ত নেয় সে বিজ্ঞাপন কতবার কোন মিডিয়াতে প্রচার হবে। এমনটাই বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানি এরই মধ্যে বিজ্ঞাপনের জন্য ডিজিটাল বিভাগ খুলেছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন যারা দেয়, তাদের মধ্যে টেলিকম খাত অন্যতম।

টেলিকম খাতের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর তাদের সর্বমোট বিজ্ঞাপন বাজেটের ৭০ শতাংশ এখন ডিজিটাল খাতে ব্যয় করা হয়।

অথচ পাঁচ বছর আগে এটি উল্টো চিত্র ছিল। তবে সবক্ষেত্রে একই চিত্র নয়। বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য সামগ্রী প্রস্তুতকারী কিংবা অন্যান্য খাতের কোপানীগুলো এখন ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিজিটাল খাতে বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করে।

বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই-এর বার্তা বিভাগের প্রধান শাইখ সিরাজ মনে করেন বিজ্ঞাপনের বাজারে টেলিভিশনের জন্য ধীরে ধীরে শক্ত প্রতিযোগী হয়ে উঠছে ডিজিটাল মাধ্যম।

শাইখ সিরাজ বলছেন, টেলিভিশন থেকে দর্শকরা এখন ধীরে ধীরে ডিজিটাল মাধ্যমের দিকে যাচ্ছে।

‘আমাকে আগে লোকে বলতো টেলিভিশনে দেখলাম আপনার প্রতিবেদন। এখন বলে ফেসবুক-ইউটিউবে দেখেছি। তাতে বোঝা যায়, কিছু একটা শেয়ার তো ওদিকে যাচ্ছে,’ বলেন সিরাজ।

কিন্তু সে জন্য টেলিভিশন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে না বলে মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো বলছে, সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। কিন্তু টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন এখনও একই অবস্থায় আছে।

বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমন অনেক বিজ্ঞাপন আছে যেগুলো শুধু টেলিভিশনের জন্যই উপযোগী। কারণ সেসব বিজ্ঞাপন যাদের টার্গেট করে দেওয়া হয় তাদের বেশিরভাগই টেলিভিশনের দর্শক।

তাছাড়া খেলাধুলা, খবর এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতারা এখনো মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনকেই বেছে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন নিয়ে যে তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের মধ্যে ওগিলভি এন্ড ম্যাথারস এর কর্ণধার ফাহিমা চৌধুরী কেয়া বলছেন, বাংলাদেশে এখনও টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন পাশাপাশি চলছে।

একটির কারণে আরেকটির উপর কোনও প্রভাব এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে খুব দ্রুত এ পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ফাহিমা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এখনও টেলিভিশনের দর্শক সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে বর্তমান বিজ্ঞাপন বাজারের চার থেকে পাঁচ শতাংশ ডিজিটাল খাতে যাচ্ছে বলে ফাহিমা চৌধুরীর ধারণা।

তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিজ্ঞাপন বাজারের ২৫ শতাংশ ডিজিটাল খাতে যাবে বলে তারা ধারণা করছেন।

বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই যাচ্ছে গুগল এবং ফেসবুকে।

ইউটিউবেও বিজ্ঞাপনের হার বাড়ছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক যেসব ব্যবসা রয়েছে সেগুলো বিজ্ঞাপনের জন্য ইন্টারনেট মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছে।

বাংলাদেশে বাজেট উপস্থাপনের আগে সংবাদপত্র শিল্পের মালিকরা দাবি করেছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ফেসবুক, ইউটিউব এবং গুগলে বিজ্ঞাপন দিবে সেগুলো করের আওতায় আনতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সে বিষয়ে একমত হয়ে কর আরোপের ঘোষণাও দিয়েছে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে সেটি আদায় করতে হবে তা এখনও ঠিক করতে পারেনি সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন সে পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে।

এদিকে বড় বিজ্ঞাপনদাতা কয়েকটি কোম্পানি জানিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিলে সেটি কত মানুষের কাছে পৌঁছাল সেটি সহজেই পরিমাপ করা যায়, যেটি সংবাদপত্র কিংবা টেলিভিশনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব নয়।

তবে আপাতত আরো কয়েক বছর ডিজিটাল এবং টেলিভিশন বিজ্ঞাপন পাশাপাশি চলবে বলেই মনে করেন বিজ্ঞাপন বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র: বিবিসি

একে//