ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

প্রেমের অাড়ালে উঁৎ পেতে থাকে মৃত্যু!

একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ০৫:১৬ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:২৯ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

অপরিচিত নম্বর থেকে মুন্নীর ফোনে রিং আসে। রিসিভ করলে একটি পুরুষ কণ্ঠ জানতে চায় আপনি কেমন আছেন? হ্যাঁ, আমি ভালো আছি, কিন্তু আপনি কে? আমি কী আপনার পরিচিত? কয়েক মিনিট অালাপে বিরক্ত হয় মুন্নী। বলে, কী বলছেন এসব, আমি আপনাকে চিনি না।

পুরুষ কণ্ঠটি কোমল স্বরে উত্তর দেয়, সমস্যা নাই চিনে নেবেন। এমন এক কথা দুই কথায় তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। ধীরে ধীরে কমতে থাকে দূরত্ব। কথা বার্তা কখনো কখনো টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টাও চলে। বাগেরহাটের রাশেদ ফোনালাপের ওই সূত্র ধরে রাজবাড়ীতে যেত মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে। মুন্নীও দেখা করত। মুন্নী বুঝতে পারে রাশেদ তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু মুন্নী তার কঠিন বাস্তবতায় ভালবাসায় নামক শব্দটা থেকেই দূরে থাকতে চায়।

রাশেদ নাছোড় বান্দা। সে ভালোবাসা চায়। একদিন দুপুরে রাশেদ রাজবাড়ী আসে। এবার আসে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে। মুন্নী তার কথা মতো দেখা করতে বাসা থেকে বের হয়। আগে থেকে ওত পেতে থাকা রাশেদের বন্ধুরা মুন্নীকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপরই লাপাত্তা। পুলিশকে জানানো হয়। একদিন পর পুলিশ মুন্নীকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর থেকে। মুন্নী কখনো কল্পনাও করেনি তার জীবনে অাসবে এমন বিপদ।

রংপুরের তানজিম আক্তারের সঙ্গে একইভাবে রং নম্বরে পরিচয় হয় অাবদুর রহমান নামে এক তরুণের সঙ্গে। রং নম্বরে পরিচয়ের ভয়ঙ্কর পরিণতি বরণ করতে হয়েছে তাকে। জীবন দিতে হয়েছে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগের পর।

সিরাজের বাড়ি চট্টগ্রাম। কাঠ মিস্ত্রির কাজ করেন। তার তিন সন্তানের মধ্যে তানজিম অাক্তার এসএসসি পাস করেছে। কয়েকমাস আগে মোবাইল ফোনে রং নম্বরের মাধ্যমে রবি নামের একজনের সঙ্গে তানজিমের পরিচয় হয়। তিনি তানজিমের ভালো-মন্দের খোঁজ নিতেন। তানজিম কোন কলেজে ভর্তি হবে, তা নিয়ে ওদের মধ্যে দ্বন্দ্ব্ব লাগে। সম্প্রতি তানজিমের সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের প্রেমের সম্পর্ক আছে, এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। তানজিম ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। গত ১৪ মে দিবাগত রাত দুইটার দিকে ফটিকছড়িতে নানাবাড়িতে রাতে ঘুমের মধ্যে এই দুই বোন একসঙ্গে অ্যাসিডদগ্ধ হয়। মেয়েদের চিৎকারে ছুটে গিয়ে তাদের ধরলে মা জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতও অ্যাসিডে দগ্ধ হয়।

ঘটনার পর ১৫ মে স্থানীয় থানায় তানজিম ও মারজিয়ার মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাসিডে তানজিমের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক চোখ, এক কান ও নাকের খানিকটা গলে যায়। আরেক চোখের অবস্থাও ভালো ছিল না। মুখ থেকে বুকের নিচ পর্যন্ত গভীরভাবে দগ্ধ হয়। চিকিৎসকরা জানান, তানজিমের শ্বাসনালিসহ শরীরের ২৪ শতাংশ দগ্ধ হয়। গত ৬ জুলাই অ্যাসিডদগ্ধ তানজিম আক্তার মারা গেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
তানজিমকে প্রথমে রাজধানীর মিরপুরে অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন (এএসএফ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাজধানীর সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিল তানজিম।

সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেফতারের পর ২৬ মে রবি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে অ্যাসিড মারার কথা স্বীকার করেন। এখন তিনি কারাগারে আছেন।

মানুষের জীবনে প্রেম ভালবাসা বন্ধুত্ব স্বাভাবিক বিষয়। তাই বলে অপরিচিত যে কারো ডাকে না জেনে না বুঝে সাড়া দেওয়া সর্বনাশ ডেকে অানে এভাবেই। বয়সন্ধিকালের অাবেগকে অস্বীকার করা কঠিন ব্যাপার। তবে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে অভিভাবকরাই। সন্তানের গতিবিধি নজরে রাখা, তাদের সব কিছু অালোচনা করা অজানা অন্ধকারে এভাবে যেন পা না বাড়ায় সেই সতর্কতার দায়ভার তারাও এড়াতে পারেন না।

আআ /এসএইচ/