সময় এখন ভিন্নভাবে ভাবার
সৌরভ আহমেদ
প্রকাশিত : ০৮:৫৮ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:১৫ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৮ বুধবার
বর্তমান পৃথিবীতে মনে হয় পরিবর্তনই একমাত্র স্থায়ী সত্য। পরিবর্তনের এই দর্শন সবখানে স্থায়ীভাবে শিকড় গেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায়- ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো’ এই গানটা যেন আজ তার আবেদন একটু হারাতে বসেছে। একটু বেমানান হয়ে ধরা দিয়েছে। তার পরিবর্তে চাকরিটা আমি দিতে পারি বেলা শুনছো এই গানটাই যেন ঠিক মানিয়ে যায় সমস্ত গতানুগতিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বয়স ২৫ এর মধ্যে। কিন্তু আমাদের দেশের তরুণরা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের তরুণদের মত পড়াশুনা শেষে বিশ্ব ভ্রমনে যায় না। গড়পড়তা একটা চাকরি জুটানোর চিন্তাই এদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাঁধা হয়ে দাড়ায়। কিন্তু সময় এসেছে এখন এই বস্তাবন্দী গতানুগতিক চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসার। তারুন্যেও এই বিশাল হতাশাগ্রস্ত মিছিলকে নতুন আলোর পথ দেখাতে হবে । জনসংখ্যার বিশাল এই অংশকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করার জন্য উদ্যোক্তা হবার সুফল দুই হাতে গুনেও শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের সফল হবার গল্প আছে ভুরি ভুরি । অন্যরকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ , বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা কামাল কাদরি,বিডিজবস.কমের ফাহিম মাশরুর, এখনি.কম সাইটের শামীম আহসান হতে পারে আমাদের সামনে জলন্ত উদাহরণ। পুরুষদের পাশাপাশি আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তারাও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে ২৩ লাখ নারী এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন । এদের প্রতিজনের বছরে গড়ে টার্নওভার (মোটবিক্রি) ১৬ লাখ টাকা । এই বিক্রি থেকে একজন গড়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুনাফা করে থাকেন ।
তবে একথা সত্যি যে, একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। সবাই দিন শেষে সফল হয় না। একজন সফল উদ্যোক্তা হবার জন্য আপনাকে নিচের বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে।
প্রচুর গবেষণা করুন:
বর্তমান পৃথিবীর চরম প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে আপনাকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। পৃথিবীর সফল উদ্যোক্তাদের উপর প্রচুর পড়াশুনা করুন। আপনি যে ব্যবসা নিয়ে সামনে এগোতে চান, তা নিয়ে বিস্তারিত জানা আবশ্যক। আপনি যত জানবেন, আপনার সফলতার গল্পটা ততো ত্বরান্বিত হবে।
ব্যবসা শুরু করুন মাথা থেকে, মন থেকে নয়:
আবেগকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দিবেন না কিংবা দ্রুত আয়ের চিন্তা মাথায় আনবেন না। সুদূরপ্রসারী চিন্তা করুন। লক্ষ্যস্থির করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান।
ধৈর্যশীল হন:
সফলতার জন্য ধৈর্য খুব কমন একটা দর্শন। ধৈর্যকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কাজ করবেন এবং উন্নতি করবেন কেবলি আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। দক্ষতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট সময় দিন। লেগে থাকুন।
সেরাটা দিন:
সর্বোত্তম এ বিশ্বাস করুন। মুনাফা এমনিই আসবে। পণ্যের পাশাপাশি আপনার সেরাটাও আপনাকে দিতে হবে। সৃজনশীলতার পরিচর্যা করুন। সৃজনশীলতার আরেক নাম পরশ পাথর।
প্রতিটা পদক্ষেপ বুঝে শুনে নিন:
বিশেষ করে অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে এই কথাটা খুবই সত্য। আপনি যদি দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকতে চান ভালো কর্মী গঠনে, ভালো ওয়েবসাইট তৈরিতে এবং লাভ হবে এমন অনলাইন বিজ্ঞাপনে খরচ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা আপনার থাকতে হবে। হিসাবী হবার চর্চা আপনাকে আজ থেকেই শুরু করতে হবে। অর্থ এবং সময়, দুইদিক থেকেই।
পুঁজি এবং প্রশিক্ষণ:
মনে প্রাণে আপনি যদি একজন স্বপ্নবাজ তরুন হন, পুঁজি আপনার জন্য কোন অজুহাতই না। পুঁজি মিলতে পারে নানান জায়গায়। আপনার আশেপাশের কাছের মানুষদের বুঝিয়ে বলুন আপনার স্বপ্নের কথা। আপনার স্বপ্নময় চোখ দেখেই তারা দেখবেন ঠিক এগিয়ে আসবে। এছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকেও আপনি সহায়তা পেতে পারেন। কর্মসংস্থান ব্যাংক এ কেবল ব্যবসায়িক আইডিয়া, সাফল্যের সম্ভাবনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এর সনদ জমা দিলেই মিলবে স্বল্প কিংবা মাঝারি ধরনের পুঁজি। এছাড়াও আছে এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফ, বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট কোম্পানী।
প্রশিক্ষণও আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে নিতে পারেন। সেটা হতে পারে অনলাইন কিংবা সরাসরি। যেমন ইউল্যাব এবং স্টার্ট আপ ঢাকা যৌথভাবে অনলাইন কোর্স করিয়ে থাকে। নর্থসাউথ, ড্যাফোডিল, এআইইউবি এর মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্টার্ট আপ নিয়ে কাজ করা স্বপ্নবাজ তরুণদের সফলতা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন বিভিন্ন মেয়াদে তরুণদের প্রশিক্ষণ সহায়তা দিচ্ছে। বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহজে ঋণ দেয়।
এসি