মধ্যবিত্তের যুব সমাজ ও অভিভাবকদের অদৃশ্য শিকল
তানভীর আলাদিন
প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার
১.সন্তান যদি বিশ্বদ্যিালয়ের পাঠ চুকিয়ে অভিভাবকদের কাছে কিছু একটা কাজ শুরু করার জন্য মাত্র পাঁচ লাখ টাকাও চায়, অধিকাংশ অভিভাবক সন্দিহান হয়ে নিজের সন্তান কিংবা ভাই-ভাতিজাকে তা দিতে চায় না। কিন্তু কোনো স্বল্প পরিচিত দালাল এসে যদি বলে তার সেই সন্তান বা ভাই-ভাতিজাকে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা পাঠাবে অথবা ভালো কোনো চাকরি পাইয়ে দেবে তখন অনায়াসেই সেই দালালের হাতে ১০/১৫ লাখ টাকা তুলে দিতে সমস্যা মনে করেন না!
২.
অভিভাবকের কাছ থেকে যদিও কালে-ভদ্রে কোনো সন্তান ব্যবসার জন্য কিছু টাকা পেয়েও থাকে, তারপর ব্যবসায় সে যদি লোকসানগুণে তাহলে তার কপালে ফেলট্টুসের মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়... ‘তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না!’ মার্কা কথা শোনাতে-শোনাতে তার জীবনটাকেই নারকীয় করে তোলো!!
ওরা একবারও ভাবে না যে, সে লোকসান দিয়েই ব্যবসার মর্মটা রপ্ত করে ফেলেছে, এখন সে জানে কিভাবে অর্থ বিনিয়োগ করলে লোকসান গুণতে হবে না। কিন্তু তাকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস না করেই হতাশার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। ‘তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না!’-এর মধ্যেই তার অভিজ্ঞতা থমকে যায়! হতাশা তাকে ক্রমাগত টেনে নিয়ে যায় অচেনা জগতে...
৩.
আমাদের সংখ্যা গরিষ্ঠ মধ্যবিত্তের যুব সমাজ ও অভিভাবকদের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। মধ্যবিত্তের অদৃশ্য ভয়াতংক বৃত্তে- অভাব, সমস্যা আর নিরাপত্তাহীণতায় আমাদের মনের বাঘগুলো বনের বাঘের চেয়ে বেশি হালুম করে অন্তরে...!!
বিশ্বায়নে পূঁজিবাদের আগ্রাসনে অপ্রয়োজনীয় বস্তুগুলো চাহিদার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে যখন মধ্যবিত্তের গৃহে প্রবেশ করে তখন, ত্রাহি-ত্রাহি যাপিত জীবনে অভিভাবক নামক যন্ত্রটি নতুন করে সাহসী স্বপ্ন বুনতে ভয় পান।হায়রে অভাগার দেশ!! এমন যদি হয় তাহলে এই দেশে উদ্যোক্তা তৈরী হবে কিভাবে? আর দেশটাও এগুবে কী করে? আর কতকাল আমাদের মধ্যবিত্তের অভিভাকরা সার্কাসের হাতি’র শিকলের মতো নিজেদের ভীত-সন্ত্রস্ত অদৃশ্য শিকলে বন্ধি করে রাখবেন?
ধর্মের মর্ম বাণীতেইতো আছে- ‘কোনো জাতি তার ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টা না করলে, বিধাতাও তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।’
এসি