বিবিসির বিশ্লেষণ
এইচএসসিতে পাশের হার কমার কারণ
প্রকাশিত : ০৯:০৯ এএম, ২০ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা গত তিন বছরে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে পাশের হারও। চলতি বছরের এপ্রিলের ২ তারিখে শুরু হওয়া এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ১৩ লাখের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের হার প্রায় আড়াই শতাংশ কমে গেছে। আর জিপিএ-ফাইভ পাওয়ার হারও কমে গেছে প্রায় নয় হাজার। যা এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২৯ হাজারের একটু বেশি কিন্তু গত বছর তা ছিল প্রায় ৩৮ হাজার।
গত অন্তত তিন বছর ধরে পাশের হারও জিপিএর ক্ষেত্রে একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শতভাগ পাশ করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। শতভাগ পাশ করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। পাশের হার এমনভাবে হ্রাসের কারণ কী?
ঘন ঘন পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন
পরীক্ষার ফল মনের মতো হয়নি, এমন অভিজ্ঞতার সঙ্গে কম বেশি হয়ত সবাই পরিচিত। সিলেটের শমসের নগরের এক শিক্ষার্থী বলছেন, এবার তার জিপিএ-৫ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
তিনি বলছেন, ‘এবার পরীক্ষার হলে কোথায় যেন একটা ভয়ভীতির পরিবেশ ছিল। আর বারবার পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তনে তিনিও বেশ খানিকটা উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আর যে সাবজেক্টের কারণে আমার এ-প্লাস মিস হয়েছে ওই সাবজেক্টের কোয়েশ্চান প্যাটার্নটা ভিন্ন ছিল।’
নিজের নাম দিতে রাজি হননি এই ছাত্রী। তিনি আরো বলছেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একেক বছর এক এক রকম প্যাটার্ন নিয়ে আসে। এ বছর আমাদের শুরুতে বলা হল সারা বাংলাদেশ একই কোয়েশ্চেনে সবাইকে পরীক্ষা দিতে হবে। টিচাররাও আমাদের নার্ভাস করে দিয়েছিলো। এসব কিন্তু রেজাল্ট এফেক্ট করে’।
কম লেখার অভ্যাস
বরিশালের রাজাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডঃ কামরুন্নেসা আজাদ বলছেন, ‘ছেলেমেয়েরা মূল বই পড়ে না। যার কারণে বিষয় সম্পর্কে সে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হতে পারে না। মূল বই যে ছেলেমেয়ে পড়বে, সে কক্ষনো খারাপ করতে পারে না। সে এমসিকিউ বলেন আর সৃজনশীল বলেন। অবশ্যই আমি সহযোগী বইয়ের সাহায্য নেবো কিন্তু মূল বইটা টার্গেট থাকতে হবে, শিক্ষকের বেলায়ও তাই।’
আর মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল যুগের সঙ্গে হাতে লেখার পদ্ধতি দিয়ে পরীক্ষা এই দুটিতে সামঞ্জস্যের ঘাটতি দেখছেন এই শিক্ষক।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ‘আধুনিক এই যুগে ছেলেমেয়েরা লেখে কম। ধরুন একটি রুটিন টাঙানো হল তারা মোবাইল দিয়ে ছবি তোলে। কেউ লেখে না। ধরুন সাতটা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আর প্রত্যেকটির জন্য সময় মোটে বিশ মিনিট করে। তারা কুলাতে পারে না।’
কিন্তু পাশের হার বিষয়টি বাংলাদেশে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? নানা সময়ে সেই প্রশ্ন উল্টো তুলেছেন অনেকে।
লিবারেল মার্কিং`-এর প্রভাব
শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, বাংলাদেশে নানা সময়ে লিবারেল মার্কিং বা লিখলেই নাম্বার দেওয়ার প্রবণতা বলে একটি বিষয় সম্পর্কে শোনা গেছে। সেই কারণেও পাশের হার বেশি থাকতো বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, সেটিই বরং দেশের ক্ষতি করেছে।
তিনি বলছেন, ‘তখন হয়ত লিবারেল মার্কিং বা লিখলেই নম্বর দেয়ার একটা প্রবণতা ছিল। এভাবে অনেকেই ভাল ফল করেছে। এইটাই ছিল আমাদের শঙ্কার কারণ। যোগ্যতা ছাড়াও অনেকে ভাল ফল করেছে। তারা জাতির অ্যাসেট না হয়ে বরং বার্ডেন হয়ে যায়।’
তিনি বলছেন, ‘হতে পারে হয়ত বেশি পাশ দেখালে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ত দেখাতে পারে যে দেশে শিক্ষার মান বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেশি জিপিএ পাওয়া মানেই যোগ্যতা নয়।’
অধ্যাপক রহমান বলছেন, ‘এখন হয়ত আমরা আসল চিত্রটি পেতে শুরু করেছি। গত তিন বছরে আমরা এই ট্রেন্ড থেকে কিছুটা সরে আসছি। আমি মনে করে আমরা সত্যের দিকে যাচ্ছি। আর এতে শঙ্কার কিছু নেই।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেন, কেন এবার পাশের হার কম হল তার কারণ বের করার চেষ্টা হবে।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘যা বাস্তব ফল বেরিয়ে এসেছে, আমরা তাই করেছি। কেউ কেউ প্রথম প্রথম বলতেন যে আমরা নম্বর বাড়াই দিতে বলি। আমরা বাড়াই দিতেও বলি না। কমাই দিতেও বলি না।’
‘যখন বেশ পাশ করেছে সবাই বিস্মিত হইছে। আমরা প্রশ্ন বিদ্ধ হইছি বেশি পাশ করাই দিচ্ছি এই জন্য। বেশি পাশ করলেও আমাদের অপরাধ, কম পাশ করলেও অপরাধ,’ তিনি বলেন।
আমরা ভালো করে দেখে কারণ বের করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি
একে//