হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, নগরীতে এক সপ্তাহে আক্রান্ত ১৯৫ জন
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ১১:৪৭ এএম, ২২ জুলাই ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:১৯ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার
বর্ষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বাড়ছে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। গতমাসে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৫৫ জন। আর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা ১৯৫ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব মতে, পহেলা জানুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত নগরীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫২৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাস ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। সে অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে এই রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। এ রোগ থেকে বাচঁতে নিজেদের সচেতনতার পাশাপাশি মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বাড়ির আশপাশে, ফুলের টব, বেলকুনিতে যেন পানি জমে থাকতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলেছেন তাঁরা।
নগরবাসীর অভিযোগ, কোনোভাবেই মশার হাত থেকে নিস্তার মিলছে না। এই প্রাণী দমনে সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিলেও যাথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় দিন দিন মশাবাহিত রোগ বাড়ছে।
খানাখন্দ, ফুলের টব, বাড়ির ছাদ কিংবা নর্দমায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই জন্ম নেয় চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা। তাই বিষাক্ত এ মশার কামড় থেকে রেহাই পেতে দিনের বেলায়ও মশারি ব্যবহার করছেন নগরবাসীদের অনেকেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেলেও সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ নগরবাসীর। তারা জানান, মশার ওষুধটাও ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না। এক এলাকায় আসলে তো অন্য এলাকায় সিটি করপোরেশনের লোকদের দেখা যায় না।
এদিকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষ প্রস্তুতি না থাকলেও ঈদের পর স্বাভাবিক নিয়মেই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৫ এর প্রধান নির্বাহী এস এম অজিয়র রহমান।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার একশো ৬২ জন। ২০১৬ সালে তা ছিল ৬ হাজার চারশো ৮০ জন, এর মধ্যে মারা যান ১৪। আর ২০১৭ সালে আক্রান্ত হন ২ হাজার ১৮০ জন ও মারা যান ৮ জন। এছাড়া ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন ২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ০৬ জন, মার্চ ০৬ জন, এপ্রিল ১৭ জন, মে ৩৪জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৫ জন।
চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোশ বাড়লেও পরিসংখ্যান বলছে গত ৪ বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম আছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর ডেঙ্গু রোগীরা কিছুটা কম আসছে হাসপাতালে। তবে গত সপ্তাতে কিছু রোগী আসতে শুরু করেছেন। শুধু এডিস মশার কামড়ে লোকজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নাগরিকদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাড়ির আশাপাশ, ঝোপঝাড় পরিস্কার রাখতে বলেছেন তাঁরা।
চিকিৎসা
পানি জমাট বেধে থাকলে মশার বিস্তার বাড়ে। এ কারণে সামনের বর্ষার মাসগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। জ্বর আক্রান্ত ব্যক্তি ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে রক্তরক্ষণের ঝুঁকি থাকে। যদি আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের মেয়াদ ৭ থেকে ৮ দিন অতিবাহিত হয় তাহলে রোগী অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হয়ে যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর আক্রান্ত রোগী ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে অণুচক্রিকা কমে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এসময় বেশি সচেতন থাকতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার বমি বা রক্তবমি করতে পারে, পেটে প্রচন্ডব্যথা অনুভূত হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, চোখে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। এছাড়া শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রচন্ড পেটব্যথা, আলকাতরার মতো কালো দুর্গন্ধযুক্ত মল হতে পারে, মল ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে। রক্তরক্ষণ বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গুর চিকিৎসার নিয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ডেঙ্গু জ্বর পরিস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত আশংকার কিছু না থাকলেও বৃষ্টিপাত বাড়লে প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
টিআর/ এআর