ঢাকা, রবিবার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২১ ১৪৩১

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্টে ১৫০থেকে ১১৫-তে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৮ রবিবার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিগত ৬ বছরে আশানুরূপ ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট জরিপে ১৫০তম স্থান থেকে ১১৫তম অবস্থান অর্জন করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ (ইউএনডেসা) পরিচালিত ই-সরকার ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (ইজিডিআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ০.৪৭৬৩ পয়েন্ট পেয়ে এবং গত দুই জরিপে ৩৫ ধাপ এগিয়ে ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ১১৫তম স্থানে অবস্থান করে নিয়েছে।

২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৪তম, ২০১৪ সালে ১৪৮তম এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান “শেখ হাসিনা’র সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নানান উদ্যোগ গ্রহণের ফলে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ দিন দিন অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে”। মন্ত্রী আজ রবিবার  বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)-এর সম্মেলন কক্ষে ইউএনডেসা প্রকাশিত জরিপ রিপোর্টের উপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। মানব সম্পদ সূচক এবং টেলিকমিউনিকেশন সূচককে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি এবং ডাটার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সিআরভিএস, ওপেন ডাটা পোর্টাল, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, এসডিজি পোর্টাল, বিগ ডাটা উদ্যোগ ইত্যাদিসহ নানান প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে অনলাইন সার্ভিস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরো ভাল হবে।”

এসময় মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, “এই রিপোর্ট একদিক থেকে রোমাঞ্চকর আরেক দিক থেকে একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে একটি কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে পরিচিত, সেই দেশটিই ২০০৯ থেকে ২০১৮ এর মধ্যে যে রূপান্তর তা বিশ্ব মানচিত্রে উপস্থাপিত হয়েছে তা অভিনন্দনযোগ্য। এজন্য আমাদের নিজেদের কাজ করতে হয়েছে এবং পাশাপাশি পৃথিবীকে জানাতেও হয়েছে যে আমরা কাজ করছি। আমাদের চারপাশে যে তথ্য উপাত্ত তার পরিপূর্ণ প্রতিফলন প্রতিবেদনে হয় নি। সেজন্য প্রত্যাশিত প্রকৃত অবস্থান নির্ধারণ করা যায় নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অতীতের চেয়ে ভাল সূচকে অবস্থান করছে। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ কেন্দ্রিক চিন্তার দিক থেকেও সবচেয়ে সুসময়ে অবস্থান করছি আমরা। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে তাদের নিজেদের মধ্যে যে সংহতি তা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল। এখন সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করছি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “বিগত ৯ বছর ধরে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সহজলভ্যতা, সক্ষমতা এবং সচেতনতা-এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে না পারলে কোন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে না। এইসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি”।

তিনি আরো বলেন, “ওপেন ডাটা পোর্টাল এর সাথে সাথে আমরা একটা ওপেন ডাটা পলিসি দ্রুত করে ফেলবো এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংসদে বিবেচনাধীন রয়েছে”। মন্ত্রী বলেন,  “কয়েকটি স্বল্পোন্নত দেশের সাথে এটুআই (অ্যাক্সেজ টু ইনফরমেশন) ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের মত করে ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা যায়”।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী, দূরদর্শী যুগোপযোগী নেতৃত্ব,এবং মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর সুদক্ষ উপদেশ, পরামর্শ, নির্দেশনা, বাংলাদেশ সরকারের, বাংলাদেশের জনগণের, সাংবাদিক সহ সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই অর্জন এসেছে”।

সংবাদ সম্মেলনে জানানোয় হয়, এই জরিপে মূলত আইসিটি টুলকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন সেবা তৈরি এবং মোবাইল বা ওয়েব অ্যাপে সেবা উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে অনলাইন সেবা সূচকে বাংলাদেশের মূল অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এই অগ্রগতিই প্রতিবার বাংলাদেশের অবস্থানকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। তাছাড়াও টেলিকমিউনিকেশন সূচক এবং হিউমেন কেপিটাল সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে করা জরিপে বাংলাদেশ ২৪ ধাপ এগিয়ে ১৪৮ অবস্থান হতে ১২৪ এ পৌঁছায় এবং এ বছর ২০১৮ সালে আরো ৯ ধাপ উপরে উঠে বাংলাদেশ  ১১৫তম অবস্থানে পৌঁছায়।    

সংবাদ সম্মেলণে এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি এ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী একটি উপস্থাপনা প্রদান  করেন। তিনি উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, “এই জরিপে অবস্থান তৈরিতে আমরা ৫ টি পদ্ধতি গ্রহন করেছি। এক, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ড্যাসবোর্ড তৈরি করেছি এবং এদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করা হয়েছে। দুই, সৃষ্ট এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয়েছে যা এনালগ থেকে ডিজিটাল সেবার প্রতি সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে আগ্রহী করে তুলেছে। তিন, ইউএনডেসার সহযোগিতায় আমরা সরকারি বিশাল ডাটা বা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটি ফর এসডিজি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডাটা বা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পরিণত হয়েছি। চার, সরকারের বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে জনগনের সাথে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। পাঁচ, আমরা এখন প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরী করতে বিভিন্ন প্রায়োগিক কৌশল প্রয়োগ করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি।”

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর সচিব জুয়েনা আজিজ, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম-এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (পিএএ) সহ বিসিসি, আইসিটি ডিভিশন,  এটুআই, ইউএনডেসা’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

//এস এইচ এস//