মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন ঢাবি অধ্যাপক
প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৮ বুধবার
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি তাঁর অবস্থান পরিস্কার করেন।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারের সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে এক সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্য নিয়ে ঘোর আপত্তি তোলেন ঢাবি শিক্ষকদের একাংশ। তারা অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশ করে অধ্যাপক আকমলকে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানান। সেই সঙ্গে হুশিয়ার করেন মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি বরদাশত করা হবে না।
পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আকমল হোসেন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের আয়োজিত এক সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয়। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের সভায় দেওয়া বক্তব্য থেকে আমি বুঝতে পারছি যে, আমার বক্তব্যকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করা হচ্ছে না। উপরন্তু, আমার বক্তব্যকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ২৫ জুলাই, বুধবার পৃথক একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। যেখানে অভিযোগ করা হচ্ছে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হওয়ার কারণে আমার বক্তব্যকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আমার বক্তব্যের পূর্ণাঙ্গ দিক ও প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরছি। আমার বক্তব্যে আমার বিভাগীয় সাবেক ছাত্র ও পরবর্তী সময়ে সহকর্মী মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের ওপর ১৫ জুলাই শহীদ মিনারে সংঘটিত হেনস্তার (যখন তানজীমকে অত্যন্ত অশিষ্টভাবে আঙুল তুলে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধে যাননি) প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করেছিলাম যে, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মাপকাঠি হতে পারে কি না? বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমি বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ একটি মহান ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে। এটা নিয়ে যেভাবে অবস্থান নেওয়া হয়, বক্তব্য দেওয়া হয় তাতে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়। আমার প্রশ্ন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? তাঁর পিতা, যাঁর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিল, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাহলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যদি বিচার করা হয় কে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, তা হলে তা হবে অত্যন্ত একটি নেতিবাচক ধারণা।’
কোনো কোনো টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য খণ্ডিতভাবে দুটি লাইন নিজস্ব ভাষায় তুলে দেয় অভিযোগ করে আকমলে হোসেন বলেন, আমার বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের প্রশ্নে আপসহীন সংগ্রাম করেছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধিকারের প্রশ্নটি বেগবান করার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আমার ছাত্রছাত্রীরা জানেন যে, আমি যখন তাদের ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস’কোর্সটি পড়িয়েছি, সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটটি এভাবে তুলে ধরেছি। এবং বলেছি যে তিনি সশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, কিন্তু তাঁর নামেই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং আমার সেদিনের বক্তব্যে তাঁর সশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি উপর্যুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা জরুরি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁর রাজনীতিক জীবনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার থাকবে না জাতীয় যে বক্তব্য ছাত্রলীগের কর্মীদের কারো কারো মুখে প্রকাশ পেয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করতে আমি আমার বক্তব্যের এ অংশে গুরুত্বারোপ করেছিলাম।’
/ এআর /