‘সর্বোত্তমভাবে নিজের কাজ করা শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম’
ড. আসাদুজ্জামান খান
প্রকাশিত : ১০:০১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৮ বুধবার
২৫ জুলাই বাংলাদেশের বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক, উপস্থাপক, শিক্ষক ও সংগঠক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের ৭৯তম জন্মদিন।
১৯৩৯ সালের এইদিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে আজতক তিনি সুন্দরের খোঁজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার জীবনের কাঙ্খিত সুন্দরকে তিনি খুঁজেছেন সৃজনশীল জ্ঞান চর্চা ও নান্দনিকতার মাধ্যমে। নিজে ঋদ্ধ হয়েছেন এবং গোটা দেশবাসীকেও তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। তিনি তার আরাধ্য কর্মের মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করার ক্ষেত্রে একজন সফল পথ-প্রদর্শক।
তিনি অনুভব করেছেন যে, ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন অসংখ্য উচ্চায়ত মানুষ। ১৯৭৮ সালে গড়ে তোলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। আলোকিত মানুষ চাই- সারাদেশে এই আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিসেবে প্রায় চার দশক ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। একজন মানুষ যাতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যয়ন, মূল্যবোধের চর্চা এবং মানব সভ্যতার যা কিছু শ্রেয় ও মহান তার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মনুষত্ব সম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তেমনই একটি সর্বাঙ্গীন জীবন পরিবেশ।’
তার সমগ্র জীবনে তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে মানুষকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করতে চেয়েছেন। শিক্ষকতা জীবনে তার অসংখ্য ছাত্রের মননে তিনি যেমন আলো জ্বেলেছেন তেমনি দেশের অসংখ্য জ্ঞানপিপাসু মানুষকে জ্ঞানের সুধা ঢেলে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে।
বর্তমানে এই কেন্দ্রের ৫০০টি শাখা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের যেখানেই বাঙালি রয়েছে সেখানেই কেন্দ্রের শাখা গড়ে উঠেছে বা উঠছে। এর সঙ্গে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম। ঘরের দোরগোড়ায় সৃজনশীল দেশি বিদেশি বই নিয়ে পড়ার আহ্বান জানান আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ও তার স্বপ্নের পৃথিবী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। দেশের লক্ষ লক্ষ কিশোর কিশোরী, ছাত্র যুবা জ্ঞান আহরণ করছে, হয়ে উঠছে আলোকিত মানুষ, সুনাগরিক। আর এজন্যই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে বলা হয় ‘ আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর।’ তিনি সমগ্র দেশবাসীর শিক্ষক, আমাদের প্রিয় স্যার।
তার মতে- ‘গ্রন্থের মধ্যে নিহিত থাকে এক অবিশ্বাস্য আলো। জ্ঞানহীন মানুষকে আলোর জগতে নিয়ে আসতে পারে বই। আর গ্রন্থাগার আত্মার আলোকে আলোকিত সভ্যতার উজ্বলতম আলোক-তীর্থ।’ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার সেই আলোক তীর্থের স্থপতি।
সুবক্তা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সূচনা লগ্ন থেকে মনস্বী, রুচিবান ও বিনোদন সক্ষম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। টেলিভিশনের বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব।
উপমহাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের একমাত্র শিক্ষক তিনি- যার সুদীর্ঘ শিক্ষকতার জীবন কেটেছে একই কলেজে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তিনি লিখেছেন। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, লিখেছেন জীবনী, স্মৃতিকথা। সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। সাহিত্য পত্রিকা, শিশু পত্রিকা এবং বিভিন্ন ধরনের জার্নাল সম্পাদনা করেছেন। জীবন ও কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশি বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল জীবনের অধিকারী সায়ীদ স্যার একজন পথিকৃৎ দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব। তার মতে- ‘শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম হলো সর্বোত্তমভাবে নিজের কাজ করা।’ শুধু উপদেশ দিয়ে নয়, তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। তার জন্মদিনে জানাই অকুণ্ঠ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।