ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২১ ১৪৩১

ক্রিকেটের ‘কালো’ আইনে হার মাশরাফিদের

প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার

তীরে এসে তরী ডুবল। মাত্র ৩ রানের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধ হলো না। সেটি হলে গায়ানায় আরও একটি ইতিহাস তৈরি হলো মাশরাফিদের। সেটি আর হলো না।

শেষ ৭ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৮ রান। হাতে তরতাজা ৫ টি উইকেট সীমিত ওভারের যেকোনো খেলায় এই রান চেজ করা যেকোনো দলের জন্য মোটেও দু:সাধ্য না। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য সেটিই হলো আজ।

এই ম্যাচ হারায় কাঠগড়ায় মুশফিক-সাব্বিররা। সাদা চোখে তাই মনে হলেও ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে! হ্যাঁ এক রানে জিত হয়েছে মাশরাফিদের। যদিও সেই স্বীকৃতি নেই, হয়তো কখনও আসবেও না। কী অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার-ই কথা। তবে তথ্য কিন্তু সঠিক। ক্রিকেটের এক অদ্ভূত আইনের কাছে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আজ মাশরাফিদের। যে খেলা জিতেও স্বীকৃতি মেলে না এটিকে আপনি কালো আইন বলবেন না তো কি?

একটু খোলে বলি।

চার বছর আগে ফিরে যাই।

সেদিন ক্যান্ডিতে শ্রীলংকা-দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে। একটি ডেলিভারি তাঁর প্যাডে লেগে বাউন্ডারি হয়। প্রোটিয়াদের লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দিয়ে আঙুল তোলেন মাঠের আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করেন জয়াবর্ধনে। তবে লেগবাই হিসেবে সেই বাউন্ডারির ৪ রান শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে যোগ হয়নি। ব্যাপারটা অদ্ভুত না?

শ্রীলঙ্কা সেই ম্যাচটা জিতেছিল। তাই তাদের আক্ষেপ ছিল না ওই বাউন্ডারির জন্য। সেজন্য  অদ্ভুতুড়ে এই নিয়ম নিয়ে তখন কেউই মাথা ঘামায়নি। কিন্তু কোনো দল এই নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়ে যদি মাত্র ৩ রানে ম্যাচ হারে তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়!

আজ গায়ানায় সেটাই হয়েছে। এ ম্যাচে শেষ ওভারে ৮ রান তুলতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু অনেকেরই হয়তো চোখ এড়িয়ে গেছে আজ যে একটি বাউন্ডারির ৪ রান যোগ হয়নি বাংলাদেশের হিসেবে।

বাংলাদেশের ইনিংসের ৪২.৩ ওভারের ঘটনা সেটি। দেবেন্দ্র বিশুর বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন মুশফিক। সাদা চোখে মনে হয়েছে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। কিন্তু বলটা ঠিকই বাউন্ডারির সীমানা পেরিয়ে যায়। এদিকে ক্যারিবীয়দের লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দিয়ে আঙুল তুলে দেন মাঠের আম্পায়ার। সিদ্ধান্তটা মনোনীত না হওয়ায় রিভিউ নেন মুশফিক। ‘আলট্রা এজ’ প্রযুক্তিতে দেখা যায় বলটা তাঁর ব্যাটে লেগেছিল। মানে তাঁর ব্যাটে লেগেই বল সীমানাছাড়া হয়েছিল। কিন্তু মুশফিক কোনো রান পাননি।

আইসিসির আইনের ২৩ নং ধারার ১-এর তৃতীয় উপধারায় আছে, আম্পায়ার আউট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলটি ‘ডেড’হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন ওই ডেলিভারি থেকে ব্যাটসম্যান কোনো রান পাবে না। মুশফিকের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। প্রথম সিদ্ধান্তটি ‘আউট’ থাকায় ওই ৪ রান আর যোগ হয়নি। যদি রিভিউয়ের মাধ্যমে পরে সিদ্ধান্তটি ভুল প্রমাণিত হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে, সেটি কিন্তু আইনের কোথাও লেখা নেই।

এটিকে আপনি কালো কানুন বলবেন না তো কি বলবেন?

বাংলাদেশের আক্ষেপটা তাই থেকেই যাচ্ছে। ওই ৪ রান যোগ হলে বাংলাদেশ তো ম্যাচটা জিতত, মানে সিরিজও জিতত! সেটি না ঘটলেও ব্যাপারটি কিন্তু বিশ্লেষকদের দৃষ্টি এড়ায়নি।

/ এআর /